ভাষণে মিথ্যা বলায় ট্রাম্পের ‘সরাসরি সম্প্রচার’ বন্ধ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার ও ফেসবুকে সরব উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও প্রথমবার জনসমক্ষে এসে বক্তব্য দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে বক্তব্যে প্রমাণ ছাড়াই ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেনকে আক্রমণ করে ভোট জালিয়াতির কথা বলেন ট্রাম্প। প্রমাণহীন এমন দাবির পরই কয়েকটি গণমাধ্যম ট্রাম্পের বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে বলছিলেন, ‘যদি বৈধভাবে ভোট গণনা করা হয়, তাহলে আমিই জিতব। আর যদি অবৈধভাবে ভোট গণনা করা হয়, তাহলে তারা (ডেমোক্র্যাটরা) ভোট চুরির চেষ্টা করতে পারবে।’ এ সময় ভোট পুনর্গণনার দাবি জানিয়ে আইনি সমাধানের পথে যাওয়ারও ঘোষণা দেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প আরো বলেন, ‘অল্প কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ফল পাওয়া বাকি। সেখানে ডেমোক্র্যাটদের জন্য পক্ষপাত করা হচ্ছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গরাজ্যেই আমরা জয় পেয়েছি। যদিও আমাদের পর্যবেক্ষকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমরা সে জন্য আদালতে অভিযোগ করেছি। ভোটকেন্দ্রের দূরে রিপাবলিকান পর্যবেক্ষকদের দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়টি মানা যায় না। তাই ভোট গণনার প্রক্রিয়া অস্বচ্ছতার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডাকযোগে আসা ভোট নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। ডাকযোগে ভোট দেওয়ার পুরো পদ্ধতিই দুর্নীতিগ্রস্ত।’
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের মধ্যেই হোয়াইট হাউস থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা বন্ধ করে দেয় সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসি। ওই সময় অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছিলেন সাংবাদিক ব্রায়ান উইলিয়ামস। তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও একটি ভিন্ন ধরনের অবস্থান নিয়েছি। আমরা শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্টের সম্প্রচারই বন্ধ করছি না, তাঁকে সংশোধনও করে দিচ্ছি।’
এ সময় সংবাদমাধ্যম এনবিসি ও এবিসি নিউজও ট্রাম্পের বক্তব্যের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।
এ ব্যাপারে সিএনএনের সাংবাদিক জ্যাক ট্যাপার বলেছেন, ‘এই রাতটি মার্কিনিদের জন্য অনেক দুঃখের যে, প্রেসিডেন্ট এভাবে ভিত্তিহীনভাবে ভোট চুরির অভিযোগ করছেন।’
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ মিনিটের বক্তব্যে সংবাদকর্মীদের কোনো প্রশ্নই নেননি ট্রাম্প। এ ছাড়া তিনি ৩ নভেম্বরের নির্বাচন নিয়ে ভিত্তিহীন মন্তব্য করেছেন।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডাকযোগের ব্যালট গণনা বন্ধের দাবিকে অন্যায্য, বিপজ্জনক এবং দায়িত্বহীন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সাবেক আইন কর্মকর্তা লিসা গ্রেইভস।
লিসা গ্রেইভস বলেন, ‘সংবিধানকে অসম্মান করেন, এমন ব্যক্তির পক্ষেই ভোট গণনা বন্ধের মতো অসাংবিধানিক, অন্যায্য, বিপজ্জনক এবং অসংগত দাবি করা সম্ভব। আইনের প্রতি যে ট্রাম্পের কোনো শ্রদ্ধা নেই, এটা স্পষ্ট। পরাজয়ের আভাস পেয়ে ভোট গণনা বন্ধের জন্যে মামলা করে প্রতিটি নাগরিকের ভোট গণনার অধিকারকে অসম্মান করেছেন ট্রাম্প।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই উপসহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনা বন্ধের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আগে কখনো শোনা যায়নি। প্রতিটি ভোট গণনা হবে, এটাই গণতন্ত্র। ব্যালট গণনার জন্য সংবিধানে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’
ফল ঘোষণার বাকি থাকা পাঁচ অঙ্গরাজ্যের চারটিতেই ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার মধ্যে নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও আলাস্কার ভোটের ফলাফল এখনো মেলেনি। এগুলোতে এখনো ভোট গণনা চলছে। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, আলাস্কায় তিনটি ও নেভাদায় ছয়টি মহামূল্যবান ইলেকটোরাল ভোট আছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের প্রজেকশন অনুযায়ী, নেভাদায় ৮৪ শতাংশ ভোট গণনা হয়েছে, যার ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বাইডেন। আর ট্রাম্প পেয়েছেন ৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট। এখানে জয় পেলে আকাঙ্ক্ষিত ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই হতে পারে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়ার চাবিকাঠি।
অন্যদিকে আবারও প্রেসিডেন্ট হতে হলে ট্রাম্পকে নেভাদাসহ পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের সব (৬০টি) ইলেকটোরাল ভোটই পেতে হবে।