মার্কিন নির্বাচন : পাঁচ অঙ্গরাজ্যের দিকে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। দেশটির ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হবেন নাকি সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁকে হটিয়ে হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন তাই এখন দেখার বিষয়। আপাতত সবার চোখ নির্বাচনের ফল নির্ধারণী পাঁচ অঙ্গরাজ্যের দিকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজে জয়ের প্রয়োজন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেনের নানাভাবে লক্ষ্যে পৌঁছানোর উপায় থাকলেও দেখা যাচ্ছে, ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত অঙ্গরাজ্যগুলোতে ঝুলে আছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাগ্য। গত নির্বাচনে এসব অঙ্গরাজ্যে জয় পেয়েছিলেন তিনি।
উইসকনসিন ও মিশিগানে বড় ব্যবধানে এগিয়ে বাইডেন। ব্যবধান কম হলেও পেনসিলভানিয়ায়ও তাঁর এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট। এই পেনসিলভানিয়া একাই গোটা নির্বাচনের ফল বদলে দিতে পারে। দোদুল্যমান এই অঙ্গরাজ্যের ভোটের ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করতে দেরি হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছেন গভর্নর।
ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত অঙ্গরাজ্যগুলো হলো-পেনসিলভানিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলাইনা।
রিপাবলিকানদের ঘাঁটিগুলো ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটিগুলো ‘নীল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল জানিয়েছে, বাইডেন যদি সাবেক ‘নীল ঘাঁটি’ পেনসিলভানিয়া পুনরুদ্ধার করতে পারেন তাহলে তাঁর হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। গত নির্বাচনে ট্রাম্প এই রাজ্যে জয় পেয়েছিলেন।
এদিকে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি জো বাইডেন- কে বিজয়ী হচ্ছেন, সেটা জানতে কয়েকদিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। মহামারি করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবারের নির্বাচনে নয় কোটির বেশি আমেরিকান ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন। ফলে সব ভোট গণনা শেষ হতে দেরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফলাফল সাধারণত কখন জানা যায়?
সাধারণত নির্বাচনের দিন রাতেই ফলাফল সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায়। তবে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আলাদা আলাদা সময়ে ভোটগ্রহণ শেষ হবে। নির্বাচনের রাতে সব ভোট গণনা কখনোই শেষ হয় না। তবে কে বিজয়ী হতে যাচ্ছে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমগুলো যখন ধারণা করতে শুরু করে যে, কোনো একজন প্রার্থীর আর পরাজয়ের আশঙ্কা নেই, তখন থেকেই তারা তাঁর নাম প্রচার করতে শুরু করে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত সব ভোট গণনা শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ এটা একটা পূর্বাভাসমাত্র। চূড়ান্ত ফলাফল নয়।
দেশজুড়ে বেশি ভোট পাওয়া মানেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া নয়। তাঁকে আসলে বেশি রাজ্যের ভোট পেতে হবে। জনসংখ্যার বিচারে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল ভোট পান ওই রাজ্যের বিজয়ী প্রার্থী। আর হোয়াইট হাউজে যেতে হলে প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে।
এ বছর কী পার্থক্য?
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এ বছর অনেক বেশি মানুষ ডাকযোগে অথবা ব্যক্তিগতভাবে আগাম ভোট দিয়েছেন। ডাকে পাওয়া ভোট গণনা করতে সাধারণত বেশি সময় লাগে। কারণ সেগুলোর স্বাক্ষর, ঠিকানাসহ নানা যাচাই-বাছাই করতে অনেকগুলো ধাপ পার হয়ে যেতে হয়।
ফ্লোরিডা এবং ওহাইওর মতো কয়েকটি অঙ্গরাজ্য এসব প্রক্রিয়া নির্বাচনের সপ্তাহখানেক আগে থেকে শুরু করেছে, যাতে ভোটগুলো গণনার কাজ শেষ হয়ে যায়। এসব রাজ্যে নির্বাচনের রাতেই বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা সম্ভব হতে পারে, যদিও সেটা নির্ভর করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কতটা জোরালো হয়, তার ওপর।
কিন্তু পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিনের মতো অনেক অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের দিনের আগে আগাম ভোটের গণনা করা হয় না। এসব অঙ্গরাজ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ভোট গণনা শেষ হতে কয়েকদিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
ফলাফল নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে কী হবে?
করোনাভাইরাস মহামারির জেরে এই নির্বাচনকে ঘিরে এর মধ্যেই ৪৪টি অঙ্গরাজ্যে ৩০০টির বেশি আইনি মামলা হয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের পর ডাকযোগে দেওয়া ভোটারের পরিচয় শনাক্ত থেকে শুরু করে, কোভিডের কারণে নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন- সবকিছু নিয়েই আইনি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যেই বলেছেন, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হতে পারে সুপ্রিম কোর্টে।