যে কারণে ইইউর নিষেধাজ্ঞায় বিপাকে পড়েনি রাশিয়া
রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে। তবু ইউরোপের পণ্য রাশিয়ায় পৌঁছাচ্ছে।
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। তারপর থেকে ইইউ অন্তত ১০ বার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়া থেকে আমদানি ও রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে তেল আসছে না। তেল, গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পদার্থের দামের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও ২০২২ সালে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর যতটা চাপ আসবে বলা হয়েছিল, তা হয়নি।
ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর ইইউ যখন নিষেধাজ্ঞা জারি করল, তখন তেলের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। কারণ তখন ভয় ছিল, এই কাজ করলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম অনেকটাই বেড়ে যাবে। তার চাপ সামলাতে গিয়ে বিপাকে পড়বে দেশগুলো।’
ব্রুকস বলেন, ‘এর মানে এই নয়—নিষেধাজ্ঞা কাজ করেনি। কিন্তু এটাও ঘটনা, তেল বিক্রি করে রাশিয়ার হাতে প্রচুর অর্থ জমা হয়েছে।’
ব্রাসেলসের থিংক ট্যাংক ব্রুগেলসের মারিয়া ডেমের্টজিস বলেন, ‘এখন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কীভাবে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেটির ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।’
ইইউর দেশগুলো থেকে রাশিয়ায় পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবুও ইইউর পণ্য রাশিয়ার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় ফেব্রুয়ারিতে একটি পেপার প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, ইইউ থেকে জিনিস তৃতীয় কোনো দেশে যাচ্ছে। সেখান থেকে জিনিসগুলো রাশিয়ায় পৌঁছে যাচ্ছে। জার্মানির অর্থমন্ত্রী এই পেপার প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য রাশিয়ার সামরিকক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে।
ইইউর বর্তমান নিষেধাজ্ঞা অনুসারে, রাশিয়াকে কোনো প্রযুক্তিপণ্য হস্তান্তর করা যাবে না। সেমি কন্ডাকটর, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য রাশিয়ায় পঠানো যায় না। ড্রোন, এনক্রিপশন টুলসও সেখানো পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে।
তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ইইউর পণ্য রাশিয়ায় পৌঁছানোর বিষয়ে কোনো সরকারি নথি নেই, তবু সন্দেহ আছে। মারিয়া বলেন, ‘যেসব দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি, তাদের ওপরেই সন্দেহ গিয়ে পড়ছে।’ তার মতে, এক্ষেত্রে দুইটি প্রধান দেশ হলো চীন ও তুরস্ক।
ইউরোপীয় ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ জ্যাভোরসিক এই তালিকায় আরও তিনটি দেশের নাম যোগ করেছেন। দেশগুলো হলো—কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও আর্মেনিয়া। অনলাইন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যদি ইইউ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানির বিষয়টি দেখা হয়, তাহলে তা ৬০ শতাংশ কমেছে। কিন্তু একইসঙ্গে কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান ও আর্মেনিয়ায় রপ্তানি অনেকটা বেড়েছে। এই দেশগুলো বেলারুশ ও রাশিয়ার সঙ্গে একসঙ্গে ইউরেশিয়ান কাস্টমস ইউনিয়নে আছে। তাই একবার এসব দেশে কোনো জিনিস পৌঁছে গেলে, তার ওপর আর নজর রাখা সম্ভব নয়। যে পণ্যগুলো সরাসরি রাশিয়া যেত, তা এখন এসব দেশের মাধ্যমে যাচ্ছে।’
ইইউর সদস্য দেশগুলো এবং ইউ কমিশন এখন এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে। জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা ইইউ কমিশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। জার্মানি তার বাণিজ্যিক সহযোগী দেশগুলোর ওপর কড়া নজর রাখছে। দেখা হচ্ছে, এসব দেশ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্য রাশিয়ায় যাচ্ছে কি না।
এছাড়াও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যেমন—তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ ছিল। তারাও এখন সম্ভবত তা বন্ধ করেছে। ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ বিবৃতি জারি করে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা আরও কড়াভাবে রূপায়ণ করা হবে।
ইইউর পক্ষ থেকে তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ফলে চাপ বাড়ানো হচ্ছে।