২০ বছরের শিক্ষা ও তালেবান সরকারের চ্যালেঞ্জ
‘পক্ষে-বিপক্ষের চাপ ও প্রত্যাশা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা শঙ্কা’র মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণা দিয়েছে তালেবান। গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের পর একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার’ গঠনের জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে নানা হিসাব-নিকাশের পর আংশিক নেতৃত্বের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। ইরানের স্টাইলে ধর্মীয় নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে সর্বোচ্চ পদে রেখে সরকার পরিচালনা করা হবে। যদিও এখনও সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম প্রকাশ্য বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছেন, আফগানিস্তানে ‘স্থায়ী ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা’ করাই তালেবানের লক্ষ্য। সব সিদ্ধান্ত হবে ‘শরিয়তি আইন’ মেনেই।
গোষ্ঠী আর মতবাদে বহুধা-বিভক্ত আফগানিস্তানে সশস্ত্র তালেবান যে এতদিন ধরে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের’ কথা বলছিল, সেটি কার্যত কতোটা হলো- সেটি নিয়েই সরকার গঠনের একদিন বাদেই প্রথম প্রতিক্রিয়া এসেছে ইউরোপ-পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে। সমালোচনা হচ্ছে, নতুন সরকারে কোনো নারী না থাকা নিয়েও। প্রশ্ন উঠছে, গত দুই দশকে নারীরা যে শিক্ষা-স্বাধীনতা ভোগ ও অর্জন করেছে, তা এখন ‘পর্দার আড়ালে’ চলে যাবে কি না?
নতুন সরকার নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান এএফপিকে বলেছেন, এটি মোটেও অন্তর্ভুক্তিমূলক কোনো সরকার নয়। আর তালেবান যে এমন সরকার গঠন করবে তাতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই।
এটাকে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ বলতে নারাজ ইউএন ওমেন। জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান প্রমিলা পাততিন মনে করেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ যেকোনো দেশের ‘লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিতকরণ ও প্রকৃত গণতন্ত্র আনয়নের জন্য পূর্বশর্ত’। ঘোষিত সরকারের কাঠামোর মধ্যে নারী নেতৃত্ব না থাকার কারণে তালেবান নেতারা বাকি বিশ্বকে ‘ভুল সংকেত’ পাঠিয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এটি ‘অন্তর্ভুক্তি, টেকসই ও সমাজ বিনির্মাণের’ আকাঙ্ক্ষাকে বাধাগ্রস্ত করবে। তারপরও জাতিসংঘ আফগানিস্তানের বিদ্যমান সমস্যার ‘শান্তিপূর্ণ সমাধান, সবার জন্য মানবাধিকার রক্ষা; বিশেষ করে নারী-কন্যাশিশুদের অধিকার’ রক্ষায় কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছে।
তালেবান অন্তবর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকায় নাম থাকাদের নিয়ে সমালোচনা করছে বিশ্বের নানা দেশ। তবে সমালোচনার মধ্যেই চীন, পাকিস্তানের মতো রাষ্ট্রগুলো নতুন সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। নেতৃত্ব নির্বাচনকে আফগানিস্তানকে নতুন করে ‘পুনর্গঠনের পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে চীন।
তবে তালেবান সরকার গঠনের একদিন পরেই নিজ দেশের ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) এই সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেছে। এনআরএফ তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রয়েছে। এনআরএফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘আফগান সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে গোষ্ঠীগত শত্রুতা’ বলেও উল্লেখ করেছে। তারা এই সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্যও বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
‘ফ্রম গান টু গভর্নমেন্ট’
তালেবান দেশ পরিচালনায় কতটা যোগ্য ও দক্ষ হবে এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই। আর সেখানে নতুন আরেকটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন যোগ করেছে তালেবানের নয়া শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলভি নুরুল্লাহ মুনিরের একটি বিতর্কিক বক্তব্য। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তালেবানের কয়েকজন বর্ষীয়ান নেতা ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতাদের। তাদের মধ্যে দেশটির শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন শেখ মৌলভি নুরুল্লাহ মুনির। মন্ত্রী হওয়ার পর দিনই নুরুল্লাহ মুনিরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাঁকে উচ্চশিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে তালেবানের সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল্লাহ মুনিরকে বলতে শোনা যায়, ‘এখনকার দিনে পিএইচডি ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই। আপনারা দেখুন, ক্ষমতায় থাকা মোল্লা ও তালেবান কারোরই পিএইচডি, এমএ এমনকি হাইস্কুল ডিগ্রিও নেই। কিন্তু তারা সবার সেরা।’ উচ্চশিক্ষা নিয়ে নুরুল্লাহ মুনিরের এমন মন্তব্যের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এদিকে বুধবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অধীনে নারীদের জন্য খেলাধুলা বিশেষ করে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করা হবে। এমনকি জাতীয় নারী ক্রিকেট দলকেও নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তালেবানের এক কর্মকর্তা।
তালেবানের কালচারাল কমিশনের ডেপুটি প্রধান আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, নারীদের খেলাধুলার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। নারীদের ক্রিকেট খেলার কোনো অনুমোদন দেওয়া হবে না, তাদের ক্রিকেট খেলা উচিতও নয়।
তিনি জানিয়েছেন, ক্রিকেটের মতো খেলাধুলায় নারীদের শরীর ও মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। ইসলাম নারীদের এ ধরনের খেলাধুলায় অনুমোদন দেয় না।
আহমাদুল্লাহ ওয়াসিক বলেন, মিডিয়ার এমন যুগে খেলাধুলার সব ছবি ও ভিডিও মানুষ সরাসরি দেখতে পারে। যে সব খেলাধুলার মাধ্যমে নারীদের শরীর ঢেকে রাখা সম্ভব নয় সে সব খেলাধুলার অনুমোদন ইসলাম দেয় না, আফগানিস্তানও দেবে না।
‘কথা নয়, কাজে পরিচয়’
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তুতির মধ্যেই গত ১৫ আগস্ট তালেবান সশস্ত্র বাহিনী কাবুল দখল করে নেয়। তখন তালেবান তার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে দিনে আরও ‘সহনশীল ও নরম’ হবে বলেও প্রত্যাশা করছিলেন অনেকে। তার মধ্যেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংসদে এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাজ্য তালেবানের ‘কথা নয়, কাজ’ দেখতে চায়।
তালেবান সরকার গঠনের পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে, সেখানেও একই বয়ানের প্রতিধ্বনিই করা হয়েছে। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, তালেবান একে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে উপস্থাপন করেছে। যাই হোক, আমরা তালেবানকে বিচার করব কাজে, কথায় নয়।’
এই ‘কাজগুলো’ করতে পারলেই তালেবান সরকারের যে স্বীকৃতি মিলবে তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশগুলো। কিন্তু ‘কাজগুলো’ তো সহজ না। কারণ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধ জয়ের চেয়ে বহুধা-বিভক্ত আফগান সমাজকে একই ছাতার নীচে পরিচালনা করা অনেক জটিল। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের নতুন তালেবান সরকারের কাছে যে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ চলে এসেছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। কারণ, ‘নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক’ ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে তালেবান যদি এটি করতে না পারে তাহলে দেশটির সামনে ‘গৃহযুদ্ধে’ হুমকিও উড়িয়ে দিচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ জেনারেলরা।
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহিদ হোসাইন ডন পত্রিকায় লিখেছেন, ‘এখন ঐক্য বজায় রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আফগানরা যখন লড়াই করেছে তখন দলীয় ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব দূরে রেখেই তারা সেটি করেছিল। এখন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে বঞ্চিতদের দ্বন্দ্ব শুরু হবে, ব্যবধান বাড়বে। সেটা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই শুধু গোটা উপত্যকাকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নাহলে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য।
তবে এটা আশঙ্কা মাত্র। ভারতের এম কে ভদ্রকুমারের মতো সাবেক কূটনীতিক, যারা দীর্ঘদিন আফগানিস্তানের মাটিতে কাজ করেছেন, তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ ধারণা ঠিক তার উল্টো। এই কূটনীতিক মনে করেন, নতুন বাস্তবতায় আফগানিস্তানে ‘গৃহযুদ্ধের শঙ্কা’ তলানিতে। কারণ, চীন-তুরস্ক, ইরানসহ বাকি বিশ্বের বিপুল বিনিয়োগ হয়তো আফগানদের নতুন করে ‘উন্নয়নের পথে’ চালিত করবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি যুদ্ধনির্ভর জার্নালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বিল রোজিও মনে করেন, ‘নতুন তালেবান, পুরাতন তালেবানের মতোই’। তাদের জন্য কাজটি কঠিন ও চ্যালেঞ্জের।
কঠোর-কোমলের দ্বন্দ্ব, ভিতরে-বাইরে
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি যারা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করেন, তাদের একটি অংশের মত হচ্ছে, তালেবানের ভিতরেও চরমপন্থি-নরমপন্থি আছে। বিশেষত নরমপন্থিরা আগের তালেবান সরকারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুটা নরম হতে চায়। বাকি বিশ্বের স্বীকৃতি আফগানিস্তান গঠনের জন্য জরুরি। এরা মূলত তরুণ। অপরপক্ষে রয়েছে, কঠোরপন্থিরা- যারা আগের মতোই সরকার চালাতে চায়। এই দুপক্ষের দ্বন্দ্বও সামনের দিনে তালবানকে সামলাতে হবে।
গত দুই দশকে আফগানিস্তানের তরুণ প্রজন্ম পশ্চিমা অনেক কিছুকে রপ্ত করেছে। শিক্ষা পেয়েছে, কিছুটা স্বাধীনতাও। সেটি তাদেরকে আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছে নি:সন্দেহে। এখন তাদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করা কঠিন হবে। ব্রিটিশ জ্যেষ্ঠ জেনারেল স্যার নিক কার্টার মনে করেন, তালেবান ‘পুরনো’ নেতৃত্বকে ‘নতুনদের’ এই আকাঙ্ক্ষাকে সমীহ করতে হবে, সেটি বুঝতে হবে।
ভয়ের শাসন ও ফাঁপাতত্ত্ব
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা ও তালেবান কাবুল দখলের আগে-পরে প্রচুর মানুষ দেশ থেকে চলে গেছে। প্রতিশোধের ভয় তাদের তাড়িত করেছে। অনেকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভেবে অন্য দেশে স্থায়ী হয়েছে। যাদের অধিকাংশই দক্ষ, শিক্ষিত ও উদ্যোক্তা। এদের দেশ ছেড়ে যাওয়া তালেবানকে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বিপদের মুখে ফেলবে। কারণ, দক্ষ জনবলের ব্যাপক সংকট রয়েছে দেশটিতে। প্রশাসন, অর্থনীতি, প্রকৌশলের মতো খাতগুলোর এই ফাঁকা জায়গা পূরণ করতে হলে এদেরকে কাজে ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে তালবানের পক্ষে সরকার পরিচালনা কঠিন হবে। তালেবান কি পারবে, ভয়হীন পরিবেশ উপহার দিতে? যাতে দক্ষরা নিজ দেশ গঠনের জন্য প্রত্যাবর্তন করবে। সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার চ্যালেঞ্জ তালেবানের সামনে রয়েছে।
আর এ কারণেই কি তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা প্রথম বিবৃতিতেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে উল্লেখ করেছেন, “তাদের (দেশত্যাগে উন্মুখ আফগান) উচিত হবে না দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। কোনো ব্যক্তির সঙ্গে ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের’ কোনো সমস্যা নেই।”
এর বাইরে অনেক দরিদ্র আফগান বাস্তুচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে প্রায় এক কোটির বেশি আফগান নাগরিক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে গেছে। এদের ৯০ শতাংশই দরিদ্র বা দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। যদি অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে তাহলে সেখানে ‘মানবিক বিপর্যয়’ দেখা দিবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জও থাকবে তালেবান সরকারের সামনে।
বিক্ষোভের মুখ বানু নিগার
তালেবান কাবুল দখলের পর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিক্ষোভের খবর আসছে। খোদ কাবুলে নারীরা বিক্ষোভ করেছে শিক্ষা, অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য। তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। তালেবান সেগুলো ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। আজ বুধবারও কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ হয়েছে বলে আলজাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই তরুণী, যাদের বয়স ২০ বছরের নীচে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডের কথাগুলো। তাতে তারা লিখেছে, ‘আমরা আমাদের গান গাইতে চাই, বারবার এবং বারবার।’
বিক্ষোভকারীদের প্ল্যাকার্ডে ছিল গোর প্রদেশের সেই গর্ভবর্তী নারী পুলিশ সদস্য বানু নিগারের মুখ; কারাগারে সরকারি নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করার অপরাধে যাকে পরিবারের সদস্যদের সামনে গুলি করে হত্যা করে তালেবান।
বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে হেরাত প্রদেশে শত শত মানুষ মিছিল করেছে। তারা সেখানে ব্যক্তিস্বাধীনতার পক্ষে স্লোগান দিয়েছে। এ নিয়ে সেখানে তালেবানের সঙ্গে তাদের বিরোধ হয়। পরে সেখান থেকে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক বলেছে, গুলিতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।
তালেবানকে এই অব্যাহত বিক্ষোভ মোকাবিলা করতে হবে রাজধানীতে বা প্রান্তিক প্রদেশ ও জেলাতেও। এর বাইরে বড় হুমকি থেকে গেছে হিন্দুকুশ পর্বতমালার পানশির উপত্যকায়। তালেবান বলছে বটে, গোটা দেশই তার হাতে। কিন্তু যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা রয়েছে- প্রতিরোধযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে।
মার্কিন, ন্যাটো সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়তো তালেবান শেষ করে এনেছে। কিন্তু দেশ ও জাতি গঠনের জন্য অভ্যন্তরীণ প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ মাত্র বোধহয় শুরু হলো- এমনটাই ধারণা দিচ্ছে বৈশ্বিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা। ভবিষ্যতই বলে দিবে, আফগানদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে।