রেকর্ডভাঙা তাপমাত্রায় জ্বলছে ইরান
মার্কিন মুলুকের উত্তরাঞ্চলে মোজাভি মরুভূমিতে আছে অদ্ভুত একটি জায়গা। ১৮৪৯ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিত উপত্যকাটির নামকরণ করা হয় ‘ডেথ ভ্যালি’। ভয়ংকর এই নামকরণের পেছনে আছে ওই মরু উপত্যকাটির তাপমাত্রা। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাতের ওই এলাকায় সারা বছর তাপমাত্রা থাকে গড়ে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি। বেশি তাপমাত্রার ওই মৃত্যু উপত্যকার বেশির ভাগ জায়গায় কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। কিছু ক্যাকটাস ছাড়া আর কোনো গাছ জন্মায় না। ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই এলাকাটির সর্বোচ্চ রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা ছিল ১৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
গতকাল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ এলাকায় নয়, গরমের এক নতুন রেকর্ড তৈরি হলো এশিয়ার দেশ ইরানে। রাজধানী তেহরানের পাশের খুজেস্তান প্রদেশের তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৭৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। বৃহস্পতিবারই ইরানে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। শুক্রবার আরো চার ডিগ্রি বেড়ে যায়। অ্যাকিউ ওয়েদারের আবহাওয়াবিদ অ্যান্টনি সাগলিয়ানি তাপমাত্রার মাপের একটি ছবিসহ টুইট করেন, ‘আমার দীর্ঘ পেশার জীবনে এত তাপমাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা হয়নি। বিশ্বের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটাই।’
দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্রে বিবিসি জানায়, মরু অঞ্চলে ঘটা এক বিশেষ তাপপ্রবাহের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের তাপগম্বুজে পরিণত হয়েছে ইরান। এই গরমে চারদিকের মরুভূমি থেকে তাপ বিকিরণ হয়ে জমাট বেঁধেছে ইরানের উত্তরাঞ্চলে। আর এর ফলেই এই রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ।
গরমের কারণে এরই মধ্যে সপ্তাহে চার দিন স্কুল-কলেজ, অফিস সব বন্ধ করে দিয়েছে প্রাদেশিক সরকার। গত বৃহস্পতিবার থেকে সপ্তাহে তিন দিন করে কাজকর্ম চলছে প্রদেশটিতে।
ইরানের খুজেস্তান প্রদেশের বন্দর-ই-মাহশাহর ইরানের সবচেয়ে জনবহুল ও অন্যতম প্রধান শহর। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। শহরের বাসিন্দারা খুব প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে বেরোনোর কথা ভাবতেও পারছেন না। বিবিসির প্রতিবেদককে অনেকেই জানান, এত তাপমাত্রায় কাজ করছে না এসি মেশিনও।
গরমে ত্রাহিদশা ইরানের খুজেস্তানের আগাজারি শহরটিরও। ১৯৮০ সালে শহরটির জনসংখ্যা ছিল ৬৫ হাজারের অধিক। কিন্তু ইরান-ইরাক যুদ্ধ ও অব্যাহত গরম বৃদ্ধির কারণে শহরটির বেশির ভাগ অধিবাসী এখান থেকে পালিয়ে যায়। বর্তমানে শহরটির জনসংখ্যা মাত্র ১৪ হাজার। শুক্রবার শহরটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট।
একই অবস্থা পাশ্ববর্তী দেশ ইরাকেও। শুক্রবার ইরাকে রাজধানী বাগদাদের তাপমাত্রাই ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল। বিবিসির খবর অনুযায়ী শুধু ইরাক-ইরানই নয়, সৌদি আরবের অনেক প্রদেশের তাপমাত্রা এখন ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে।