বিয়ের অতিথি চার হাজার শরণার্থী!
বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তুরস্কের ফেতুল্লাহ উজুমচুগলু আর এরসা পোলাট। যথারীতি বিয়ে নিয়ে নানা পরিকল্পনা চলছিল। এ সময় বরের বাবার মাথায় একটি অদ্ভুত পরিকল্পনা আসে। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজেদের বিয়ের অনুষ্ঠানে চার হাজার সিরীয় শরণার্থীকে দাওয়াত দেন তাঁরা। এমনকি এই শরণার্থীদের মাঝে নিজের হাতে খাবার পরিবেশন করেন বর-কনে।
সে সময় তাদের পরনে ছিল বিয়ের পোশাক। সাদা গাউন আর গয়না পরে কনে পোলাট নিজেই খাবার তুলে দিচ্ছিলেন তাঁদের শরণার্থী অতিথিদের হাতে। আর বর ফেতুল্লাহর পরনে ছিল সাদা স্যুট।
দক্ষিণ তুরস্কের কিলি নামের যে শহরে এই দম্পতি বাস করেন, সেটির অবস্থান সিরিয়া সীমান্তের একেবারে পাশে। শহরটিতে শরণার্থী হিসেবে এখন অবস্থান করছে চার হাজার সিরীয়।
তুরস্কের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, বিয়ের পরিকল্পনা করার সময় হঠাৎ ফেতুল্লার বাবা আলী উজুমচুগলুর মাথায় একটা চিন্তা আসে। সেরহাত কিলি সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, ভাবলাম নিজেদের পরিবারের এই বিশেষ দিনটি তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়, যারা তুলনামূলকভাবে কম সৌভাগ্যবান। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে জীবন বাঁচানোর তাগিদে যাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে তুরস্কের বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। সিরিয়ার সেই সব ভাইবোনদের সঙ্গেই নিজের ছেলের বিয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। অন্যদেরও এই পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এই দম্পতি একটা ভালো কাজের মাধ্যমে নিজেদের নতুন জীবনের শুরু করল বলে ভীষণ খুশি বরের বাবা আলী। বিয়ের অতিথিদের মধ্যে একটি ট্রাকের মাধ্যমে খাবার বিতরণ করা হয়।
আলী বলেন, ‘আমরা ভাবলাম, যদি এই বিয়ের আনন্দময় দিনটি আমাদের সিরিয়ান ভাইবোনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারি তাহলে খুব ভালো হয়। আমাদের জন্য এটা একটা চমৎকার বিয়ের রাতের খাবার ছিল।’
তুরস্কভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন কিমসে ইয়ক মু-এর সহযোগিতায় এই কাজ করেন ফেতুল্লাহ-এরসা দম্পতি। সংগঠনটির মুখপাত্র হাতিস আভসি জানান, বিয়ের খরচের অর্থ দিয়ে শরণার্থীদের খাওয়ানোর জন্য একটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব নিয়ে আসেন ওই দম্পতি। এরপর তাঁদের সহযোগিতা করে সংগঠনটি।
কনে পোলাট বলেন, যাঁদের আসলেই খাবার প্রয়োজন তাঁদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়াটা একটা দারুণ অভিজ্ঞতা। তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমে আমি খুবই চমকে গেছিলাম যখন ফেতুল্লাহ আমাকে এই পরিকল্পনার কথা বলল। এটা সত্যিই খুব দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আমি খুব খুশি যে আমাদের বিয়ের খাবার এমন কিছু মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি, যাদের এই খাবারটুকুর ভীষণ প্রয়োজন ছিল।’
নিজের অনুভূতি বলতে গিয়ে বর ফেতুল্লাহ বললেন, ‘অন্যকে খুশি করতে পারলে একটা দারুণ অনুভূতি হয়। সিরিয়ার শরণার্থী শিশুদের চোখে আমি যে আনন্দ ওই দিন দেখতে পেয়েছি তা আসলেই মূল্যহীন। আমরা অন্যকে আনন্দ দিয়ে আমাদের নতুন জীবন শুরু করেছি, এটা দারুণ অনুভূতি।’
যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার প্রায় ২০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে তুরস্ক। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী শহর কিলিতেই আছে অন্তত চার হাজার শরণার্থী। সিরিয়ার সংকটকে এই প্রজন্মের সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট বলে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলছে, এই যুদ্ধের কারণে অন্তত ৮০ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে।