ইরানে বিক্ষোভ, কী বলছে যুক্তরাষ্ট্র?
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অসমতার জের ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানের বিভিন্ন শহরে চলছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভের জবাব ইরান কীভাবে দেয় তা ‘বিশ্ববাসী নজরদারি করছে’ বলে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউস।
স্থানীয় সময় শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয় হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ মন্তব্য করা হয়।
ইরানে চলমান বিক্ষোভকে ‘সরকারবিরোধী’ উল্লেখ করে হোয়াইট হাউস জানায়, ইরানের দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নে জাতীয় তহবিলের অপব্যবহারের ফলে দেশটির নাগরিকরা বিরক্ত।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ হুকাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে লেখেন, ‘ইরান সরকারকে তাদের নাগরিকদের অধিকারকে সম্মান করা উচিত। তাদের মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান দিতে হবে। বিশ্ববাসী এটা নজরদারি করছে।’
পরে ইরানের নাগরিকদের সমর্থন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাশহাদ শহরে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। সেখানে ‘কয়েক হাজার’ বিক্ষোভকারী অংশ নেয় বলে জানিয়েছে সরকারবিরোধী কয়েকটি দল। পরের দিন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তেহরানেও। এ ছাড়া আর্থিক অসঙ্গতির জের ধরে আরো কয়েকটি শহরের রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা।
ইরানের বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, শুক্রবার কারমানশাহ শহরে প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর চালালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।
গত কয়েকদিনে ইরানে প্রধান প্রধান কয়েকটি খাদ্যের মূল্য শতকরা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইরানের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশাক জাহাঙ্গিরি। তিনি বলেন, কিছু জিনিসপত্রের দাম আদতেই বেড়েছে। তবে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ সামাল দিতে কাজ করছে সরকার।
বিক্ষোভের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিবিসি জানায়, অর্থনৈতিক অসঙ্গতির জের ধরে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা অনেকটা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দেশটির প্রেসিডেন্ট বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে ইরানের অভিযানের বিরুদ্ধেও কথা বলেন অনেকে। তাঁরা জানান, ইরান অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর চেয়ে বিদেশি ইস্যুগুলোতে বেশি খবরদারি করছে।
এদিকে বিক্ষোভের পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও অন্য কোনো শক্তির হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন ইশাক জাহাঙ্গিরি। তিনি বলেন, ইরানের রাস্তায় যা হচ্ছে, তার পেছনের ব্যক্তিরা ধারণা করছে তাঁরা সরকারের ক্ষতি করতে পারবেন। তবে পেছন থেকে এসব বিক্ষোভের কলকাঠি যারা নাড়েন, তাঁরা অনেক সময় তা নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতা রাখেন না।
ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানায়, চলতি বছরে ইরানের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে দেশটিতে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক সাত শতাংশ বৃদ্ধি পায়। যা বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক।