হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইরানে বিক্ষোভ, সহিংসতা
সরকারের কড়া হুঁশিয়ারির পরও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক অসমতার বিরুদ্ধে ইরানের রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীদের রাস্তায় আগুন দিতে দেখা গেছে। তারা পুলিশের গাড়িতে এবং সরকারি ভবনেও হামলা চালাচ্ছে—এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও তা এখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।
তবে রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, সরকারের সমর্থনে হাজার হাজার মানুষ মিছিল করছে।
গত শুক্রবার রাজধানী তেহরান, কারমানশাহ ও মাশহাদ শহরে এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তেহরান থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুরুদ শহরে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলেও বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের পর একে সবচেয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০০৯ সালে একই রকমের এক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ইরান সরকার কঠোরভাবে দমন করেছিল।
এদিকে, শনিবার হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরান কীভাবে এই বিক্ষোভের জবাব দেয়, তা ‘বিশ্ববাসী নজরদারি করছে’।
এর জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এ ধরনের বিবৃতি নিছক ‘অপ্রাসঙ্গিক’ এবং ‘সুযোগসন্ধানী’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বরাত দিয়ে আলজাজিরা ও বিবিসি জানায়, গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাশহাদ শহরে বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। সেখানে ‘কয়েক হাজার’ বিক্ষোভকারী অংশ নেয় বলে জানিয়েছে সরকারবিরোধী কয়েকটি দল। পরদিন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তেহরানেও। এ ছাড়া আর্থিক অসংগতির জের ধরে আরো কয়েকটি শহরের রাস্তায় নামে বিক্ষোভকারীরা।
গত কয়েক দিনে ইরানে প্রধান প্রধান কয়েকটি খাদ্যের মূল্য শতকরা ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছেন ইরানের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ইশাক জাহাঙ্গিরি। তিনি বলেন, কিছু জিনিসপত্রের দাম আদতেই বেড়েছে। তবে এই মূল্যবৃদ্ধির কারণ সামাল দিতে কাজ করছে সরকার।
বিক্ষোভের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বিবিসি জানায়, অর্থনৈতিক অসংগতির জের ধরে বিক্ষোভ শুরু হলেও পরে তা অনেকটা সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দেশটির প্রেসিডেন্ট বর্তমান প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে ইরানের অভিযানের বিরুদ্ধেও কথা বলেন অনেকে। তাঁরা জানান, ইরান অভ্যন্তরীণ সমস্যগুলোর চেয়ে বিদেশি ইস্যুগুলোতে বেশি খবরদারি করছে।
এদিকে, বিক্ষোভের পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও অন্য কোনো শক্তির হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন ইশাক জাহাঙ্গিরি। তিনি বলেন, ইরানের রাস্তায় যা হচ্ছে, তার পেছনের ব্যক্তিরা ধারণা করছে তারা সরকারের ক্ষতি করতে পারবে। তবে পেছন থেকে এসব বিক্ষোভের কলকাঠি যারা নাড়ে, তারা অনেক সময় তা নিয়ন্ত্রণের যোগ্যতা রাখে না।
ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস জানায়, চলতি বছরে ইরানের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে দেশটিতে বেকারত্বের হার ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।