সৌদি জোটের হামলার পর ইয়েমেনে কলেরা তিন গুণ বেড়েছে

ইয়েমেনের হুদাইদাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এলাকাটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব আগের চেয়ে তিন গুণ বেড়েছে। শিশুদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন এই তথ্য জানিয়েছে।
এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ইয়েমেনের হুদাইদাতে কলেরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৯৭ জন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৪২ জনে। শতকরা হিসাবে এই বৃদ্ধির হার ১৭০ ভাগ। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যৌথ বিমান হামলায় সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ বন্ধ থাকায় কলেরা মহামারী রূপ ধারণ করছে বলে উল্লেখ করা হয় সেভ দ্য চিলড্রেনের প্রতিবেদনে।
এদিকে কলেরা আক্রান্তদের ৩০ শতাংশই পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সেভ দ্য চিলড্রেনের হুদাইদা ফিল্ড ম্যানেজার মারিয়াম আলদোগানি বলেন, ‘সহিংসতার কারণে হুদাইদার পরিস্থিতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন শিশু কলেরার লক্ষণসহ হাসপাতালে আসতে দেখছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি দুই সন্তানের মা এমন এক নারীকে দেখেছি, যিনি প্রকট ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এবং তিনি জানালেন, নিরাপদ পরিচ্ছন্ন পানির সরবরাহ না থাকায় আমার পরিবারের সবাই ভুক্তভোগী।’
জাতিসংঘের এক জরিপের বরাতে আলজাজিরা জানায়, জুলাইতে ইয়েমেনের শহরটিতে সন্দেহজনক কলেরা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন এবং পরের মাসে তা বেড়ে এক হাজার ৩৪২ জনে দাঁড়ায়।
জাতিসংঘ পরিচালিত জরিপে ইয়েমেনজুড়ে দুই হাজারের বেশি মানুষের কাছে তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ৫৬ শতাংশ লোক তাদের এলাকায় অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি হিসেবে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে। এবং হুদাইদা শহরবাসীর ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৬২ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর তামের কিরোলোস জানান, গুলি, বোমা হামলার সার্বক্ষণিক আশঙ্কাসহ নানাবিধ রোগবালাইয়ের পাশাপাশি খাদ্য সংকটের মুখে ইয়েমেনের শিশুদের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইয়েমেনের হুদাইদা শহরটিতে গত জুন থেকে হুতি গোষ্ঠী ও সৌদি জোটের মদদপুষ্ট বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ তুমুল পর্যায়ে পৌঁছায়। জুলাইয়ের শেষের দিকে সৌদি জোট উপর্যুপরি বিমান হামলা চালালে সেখানকার পয়ঃনিষ্কাশন এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হয়। এর ফলে সেখানে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, দিন দিন তা মহামারী আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।