এবার সৌদিবিরোধী অভিযানের ভিডিও প্রকাশ করেছে হুতিরা
ইয়েমেনের হুতি বাহিনী সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে, তার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার ওই অভিযানে সৌদি আরবের বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা এবং কয়েক হাজার সেনাসদস্য আটক হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
গতকাল রোববার বিকেলে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি সৌদি আরবের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানকে ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয়’ বলে অভিহিত করেন।
২০১৫ সালের ২৬ মার্চ দারিদ্র্যপীড়িত ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করার পর সৌদি সেনাদের ওপর এটি ছিল ইয়েমেনি সেনাবাহিনী ও হুতিদের সবচেয়ে বড় অভিযান।
ইয়েমেনে সামরিক বাহিনী যে ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে তাতে কোন এলাকায় তারা অভিযান চালিয়েছে, তার যেমন বর্ণনা রয়েছে, তেমনি ইয়েমেনি যোদ্ধারা সৌদি অবস্থানে যেসব গোলাবর্ষণ করছে, তার দৃশ্য রয়েছে বলে ইরানের গণমাধ্যম পার্স টুডের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভিডিওতে সৌদি সেনা ও তাদের সমর্থক যোদ্ধাদের পালিয়ে যেতে দেখা যায়। এ ছাড়া রাস্তার আশপাশে বহু মৃতদেহ এবং ধ্বংস হওয়া সামরিক যান পড়ে আছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি বড় তেল স্থাপনায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তেলের বিশ্ববাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হুতিদের দাবি, তারাই এ হামলা চালিয়েছে। কিন্তু সৌদি আরবসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এ হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে সমালোচনা করে আসছে। আর ইরান এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে শুরু থেকেই।
পেছনের ঘটনা কী?
২০১৫ সালে ইয়েমেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বাহ মনসুর হাদি ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দেশটির রাজধানী সানা ছেড়ে পালাতে বাধ্য করে হুতিরা। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের প্রায় পুরোটা দখল করে রেখেছে হুতি বিদ্রোহীরা। সেখান থেকেই তারা সৌদি আরবে মর্টার আর মিসাইল ছুড়ে মারছে।
এদিকে হাদিকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব এবং আরো আটটি সুন্নি মুসলিম-অধ্যুষিত দেশ একজোট হয়ে ইরানের সমর্থিত হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে অস্ত্র ও গোয়েন্দা সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স।
২০১৭ সালের নভেম্বরে রিয়াদে ইয়েমেনের মিসাইল পড়ার পর দেশটির চারদিকে অবরোধ জোরালো করে সৌদি আরব।
প্রায় প্রতিদিনই ইয়েমেনে বিমান হামলা চালায় সৌদি সামরিক জোট, আর হুতিরাও পাল্টা জবাবে প্রায়ই সৌদি আরবে মিসাইল হামলা চালায়।
এ সংঘাতের কারণে ইয়েমেনে বিশ্বের ভয়াবহতম মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় আড়াই কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা কিংবা নিরাপত্তা প্রয়োজন। এর মধ্যে এক কোটি ইয়েমেনবাসী বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে আছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের সংকটের জেরে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।