বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতিবেদন
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১২ মার্চ, বৃহস্পতিবার দেশটির সরকারি একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
সহিংসতা, হুমকি, হরতাল ও যানবাহন অবরোধে গত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনের অর্জন ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। বাংলদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ (বিএনপি) ১৮-দলীয় জোট সাংবিধানিকভাবে বৈধ নির্বাচনে আপত্তি জানায়, এবং নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না, এই আশঙ্কায় তারা এতে অংশগ্রহণ করেনি। অর্ধেক সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি, এবং আওয়ামী লীগ টানা দুবারের মতো সংসদীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে। নির্বাচনের দিনটি সহিংসতার জন্য চিহ্নিত হয়ে আছে : ২১ জন নিহত হয়, এবং শতাধিক ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
আমরা বার বার সব ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি, রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছি। ৬ জানুয়ারি মানবাধিকার বিষয়ক তৎকালীন ফরেন ও কমনওয়েলথ মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ার্সি দলগুলোর হুমকি-ধমকি ও সহিংসতার জন্য নিন্দা জানান, এবং রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। আমরা একান্তভাবেও সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে আমাদের উদ্বেগ জানাই। বাংলাদেশ সফরে গিয়ে দেশটির মন্ত্রীদের কাছেও ব্যারোনেস ওয়ার্সি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সাবেক সহকারী মন্ত্রী অ্যালান ডানকান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সাবেক সহকারী মন্ত্রী লিন ফেদারস্টোন উদ্বেগ জানান। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে তিন মন্ত্রীই বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান। তারা ভবিষ্যতের নিবার্চন নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও বলেন।
নির্বাচনের পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের অঙ্গীকার করে, যদিও বছর শেষে রাজনৈতিক উত্তেজনায় বিস্তৃত আকারে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে তুলনামূলক হরতাল, যানবাহন অবরোধ (কর্মসূচি) কম ছিল, বছরটি শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। তবে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ; দেশের সবচেয়ে বৃহৎ দুটি দলের মধ্যে কোনো সংলাপ হয়নি। বেসরকারি সংস্থাগুলো জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর দায়মুক্তি সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনের পরে এনজিওগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের নিন্দা জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এগুলোতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাট্যালিয়নের জড়িত থাকার বিষয়টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে। গত মে মাসে বাংলাদেশ হাইকমিশনে গিয়ে ব্যারোনেস ওয়ার্সি দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
সরকার ফরেন ডোনেশন অ্যাক্ট (বৈদেশিক সহায়তা আইন, পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায়) সংশোধন ও একটি নতুন সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করেছে, এর মধ্যে ডিজিটাল মিডিয়ায় সরকারের সমালোচনাকারী কয়েকজনকে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে আটক করা হয়েছে। এর ফলে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সমালোচনা বা ভিন্নমতকে দমিয়ে রাখার সরকারি ক্ষমতা উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিচারকদের অভিশংসন করতেও সরকার ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে, এটা নির্ভর করছে কীভাবে এর প্রয়োগ হয় তার ওপর, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সঙ্গে সমঝোতাতে হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২২ জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি (ক্যামেরন) আমাদের অসন্তোষের কথা জানান। উভয়পক্ষই উন্মুক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ব্যাপারে একমত হন, যাতে গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।