ইরাকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেট পাস

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাজেট পাস হয়েছে দেশটির পার্লামেন্টে। ২০২৩ সালের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১৯৮ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন দিনার (ইরাকের মুদ্রা) বা ১৫ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। দেশটির এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। একইসঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর জন্য ও অবকাঠামোগত নির্মাণের জন্য রেকর্ড ব্যয় ধরা হয়েছে। আজ সোমবার (১২ জুন) এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদক মাহমুদ আবদেলওয়াহেদ আজ বাগদাদ থেকে জানিয়েছেন, পার্লামেন্টে অনুমোদিত বাজেট দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এই বাজেট ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের বাজেটকে কভার করবে। বাজেটের বিরাট অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ বিভিন্ন লক্ষ্যে।
ইরাকের কাউন্সিল অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেপুটি স্পিকার শাখওয়ান আব্দুল্লাহ আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাজেটে আমাদের মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন হবে। কর্মসংস্থান ও কাজের সুযোগ হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠন হবে ও বাস্তুচ্যুত মানুষের দুর্ভোগের অবসান হবে।’
প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের পর প্রায় এক দশক ধরে ইরাকে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধের ফলে দেশটির অবকাঠামো অনেক ক্ষতি হয়। এমনকি, যুদ্ধের পর থেকে দেশটির উন্নয়নে ভাটা পড়ে। সেই জড়তা থেকে রেহাই পেতেই এবারের বিরাট বাজেট। ইরাকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ বাজেটের মূল লক্ষ্য পাবলিক সেক্টরে নতুন করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এই বাজেটের ফলে ১০ হাজার মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশের তালিকায় রয়েছে ইরাক। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা চার কোটি ৩০ লাখ থেকে বেড়ে আট কোটিতে যাবে। চাকরি এবং সরকারি পরিষেবার অভাব নিয়ে সম্প্রতি সময়ে ইরাকে বার বার বিক্ষোভ হয়েছে।
মাহমুদ আবদেলওয়াহেদ বলেন, ‘দেশটির বেশিরভাগ মানুষ এই বাজেট নিয়ে আশাবাদী। বছরের পর বছর ধরে অবহেলা ও যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো শেষ পর্যন্ত এই বাজেটের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে এবং আরও কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ ইরাকের এই বিরাট বাজেটের বিরোধী। তারা দেশটির রাজস্ব খাতে বিরাট ঘাটতির কথা তুলে ধরেছেন। বাজেটের নথি ও আইন প্রণেতাদের তথ্য মতে, ২০২২ সালে ইরাকের বাজেট ঘাটতি ছিল ৬৪ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন দিনার বা চার হাজার ৯০০ ডলার। এই ঘাটতি দেশটির ২০২১ সালের বাজেটের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স মিডল ইস্ট সেন্টারের ভিজিটিং ফেলো আহমেদ তাবাকচালি ইরাকের নতুন সরকারি কর্মচারীর সংখ্যা ছয় লাখের কোটায় রেখেছেন। তার মতে, সরকারি কর্মচারীদের মজুরি ও পেনশনের জন্য দেশটির সরকারকে ৭৬ ট্রিলিয়ন দিনার বা পাঁচ হাজার ৮০০ ডলারের বেশি খরচ করতে হবে।

আহমেদ তাবাকচালি বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের পেছনে আপনি যত খরচ বাড়াবেন, তত বেশি আপনি আপনার দুর্বলতা বাড়াবেন। এতে করে তেলের দাম বার বার বাড়বে। আপনাকে আরও অর্থ ধার করতে হবে।’