আফগান নারীদের দুবাই গিয়েও পড়তে দিচ্ছে না তালেবান
আফগানিস্তানের যে নারীরা দুবাইতে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পেয়েছেন, সকল অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে দেশের বাইরে গিয়ে পড়াশোনা করতে দিচ্ছে না তালেবান সরকার৷
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী খালাফ আহমাদ আল হাবতুর এখন পর্যন্ত একশজন আফগান নারীকে বৃত্তি দিয়েছেন দুবাইতে গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য৷ কিন্তু তাদের সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পড়ার অনুমতি দিচ্ছে না আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবান৷
কথা ছিল গত সপ্তাহেই কাবুল থেকে দুবাই উড়ে যাবেন কয়েকজন আফগান নারী, যেখানে আল হাবতুর তাদের সাথে দেখা করবেন৷ কিন্তু রওনা দেওয়ার অল্প সময় আগেই তালেবান তাদের থামিয়ে দেয়৷
ডয়চে ভেলেকে আল হাবতুর বলেন, ‘‘তালেবান যে এভাবে তাদের যাত্রা থামিয়ে দেবে, তা আমরা ভাবিনি৷ আমরা অবাক হয়েছি কারণ দুবাইতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে সব ধরনের অনুমতি নিয়েছি আমরা, যেমন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অভিবাসন দপ্তর, পুলিশ সবাই সাহায্য করেছেন৷ সব কিছু প্রস্তুত ছিল৷”
দুবাইয়ের ধনকুবের ও আল হাবতুর গোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক গণমাধ্যম এক্সে (যা আগে টুইটার নামে পরিচিত ছিল) এমনই এক আফগান নারীর পাঠানো একটি ভয়েস রেকর্ডিং প্রকাশ করেন৷ সেখানে সেই নারী জানান, তিনি তালেবানের আইন মেনেই সঙ্গে একজন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু তাকে আটকে দেওয়া হয়৷
প্রতিবাদে মানবাধিকার সংগঠন
দুই দশক পর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আবারও তালেবান৷ প্রাথমিকভাবে ক্ষমতায় এসে তারা বলেছিল যে নারীদের অধিকার শরিয়া আইন অনুসারেই তারা করবে৷ কিন্তু সময় যেতে যেতে দেখা যায় যে নারীদের ওপর আরও কড়াকড়ি বাড়িয়েছে তারা৷ যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চাকরির বাজার থেকে দৈনন্দিন চলাফেরার ক্ষেত্রেও ব্যাপক নিয়ম চালু করা হয়েছে নারীদের জন্য৷
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে৷ তারা জানায় যে নারী সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সরকারি কর্মী ও সংখ্যালঘু নারীদের আলাদা করে হেনস্তার প্রমাণও দেখেছে তারা৷
আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের দাবিতে আফগান নারীরা
পড়তে চেয়েও না পারা আফগান তরুণী জাহরা রাজাবি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুরো পৃথিবী শুধু দেখছে৷ আমরা শুনে শুনে ক্লান্ত যে মানুষ আমাদের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছে৷ চাইলেই আন্তর্জাতিক মহল একটা দৃঢ় পক্ষ নিয়ে এই পরিস্থিতি বদলাতে সাহায্য করতে পারে৷”
রাজাবি আশা রাখছেন যে হয়তো আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তালেবান কিছুটা হলেও আফগান নারীদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি শিথিল করবে৷
রাজাবির মতো একই পরিস্থিতিতে আছেন আরও অনেক আফগান নারী, যারা চান বাইরে গিয়ে নিজেদের শিক্ষা সম্পন্ন করতে৷ আল হাবতুরের বৃত্তি পেয়ে ২৪ আগস্ট তিনজন আফগান নারী দুবাইতে এসে পড়াশোনা শুরু করতে পেরেছেন৷
আল হাবতুর জানান, ‘‘কথোপকথন ও আলোচনা চলছে, কিন্তু আমরা সেটি করছি না৷ অদূর ভবিষ্যতে সুরাহার আশা রাখছি আমরা, শিগগিরই এই সমস্যার নিষ্পত্তি হবে বলে মনে করছি৷”