ইইউর পরিধি বাড়ানো কঠিন, আইনে আনতে হবে পরিবর্তন : থু নুয়েন
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে এক ধরনের ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে। এই পথে কীভাবে এগোনো যায় তার পরামর্শ দিতে জার্মানি ও ফ্রান্স একদল গবেষককে দায়িত্ব দিয়েছিল। কয়েকদিন আগে তারা প্রস্তাব পেশ করেছেন।
এই দলের একজন বার্লিনের জ্যাক দেলোর সেন্টারের সিনিয়র পলিসি ফেলো থু নুয়েন। তার মতে, একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ২৭ সদস্যের জোট ইইউ বর্তমানে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, জোট বড় করার পথে রাজনৈতিকভাবে সেটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের হতে পারে।
ইইউর সদস্য হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করা দেশগুলো হচ্ছে ইউক্রেন, মলদোভা, আলবেনিয়া, মন্টেনিগ্রো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, নর্থ মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া ও তুরস্ক। জর্জিয়া ও কসোভোকে ‘সম্ভাব্য প্রার্থী’ বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইইউর সব সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আলোচনা কয়েক মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে। কেননা, কোন পণ্য ও কাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে সব সদস্যকে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে।
অভিবাসন ও আশ্রয়ের শর্তাবলী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বেশিরভাগ ইইউ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। সংখ্যার হিসেবে, অন্তত ১৫ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়।
ইইউতে বর্তমানে যে ব্যবস্থা চালু আছে সেটা অনুযায়ী, চার কোটির বেশি মানুষের দেশ ইউক্রেন সদস্যপদ পেলে ইইউর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠবে।
‘সদস্য যত বেশি হবে, ভেটো প্রয়োগের কারণে সিদ্ধান্ত আটকে যাওয়ার ঝুঁকি তত তৈরি হবে,’ ডয়চে ভেলেকে বলেন থু নুয়েন। তাই তিনি ও তার সহবিশেষজ্ঞরা ইইউর সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ করতে সর্বসম্মতির নিয়ম বাতিল ও বেশিরভাগ বিষয়টি কীভাবে গণনা করা হবে, সেই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়েছেন।
কিন্তু, এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করতে চাইলে ইইউ প্রতিষ্ঠার আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। আইন পরিবর্তনের কারণে যে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা কমবে, তাদেরও সমর্থন প্রয়োজন হবে।
এদিকে, ইইউর সদস্য হতে যারা আবেদন করেছে তাদের বেশিরভাগেরই জিডিপি, বর্তমানে ইইউর সবচেয়ে দরিদ্র সদস্যরাষ্ট্র বুলগেরিয়ার চেয়ে কম। আর বর্তমানে ইইউর বাজেটের এক তৃতীয়াংশ খরচ হয় কৃষিখাতে ভর্তুকিতে। তাই ইউক্রেনের মতো কৃষিখাতের বড় এক শক্তি ইইউর সদস্য হলে ভবিষ্যতে বর্তমান সদস্যরাষ্ট্রগুলোর প্রাপ্ত বরাদ্দে পরিবর্তন আসবে।
ইইউর সাবেক ট্রেড কমিশনার ফিল গোগান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ইউক্রেন একটি বড় দেশ, যার কৃষিখাতে বড় স্বার্থ আছে। তাই ইউক্রেন সদস্য হলে প্রাতিষ্ঠানিক ও বাজেট বরাদ্দে বড় পরিবর্তন আসবে।’ এরপরও তিনি ইইউর পরিধি বৃদ্ধির পক্ষে। কারণ, তা না হলে ওই দেশগুলো এমন কোনো পক্ষে চলে যেতে পারে যাকে হয়তো ইইউর দেশগুলো পছন্দ করে না।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট শার্ল মিশেল সম্প্রতি বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ইইউ তার পরিধি বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে।