তালেবানকে নারীদের সব ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে : জাতিসংঘ
তালেবান কর্তৃপক্ষকে নারীদের অবশ্যই সমাজের সব ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রোজমেরি ডিকার্লো। কাতারের দোহায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনা শেষে গতকাল সোমবার (১ জুলাই) এ কথা বলেন তিনি।
রোজমেরি ডিকার্লো বলেন, ‘তালেবান কর্তৃপক্ষ এভাবে আফগান সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না। তবে তারা খুব স্পষ্ট শুনেছে, জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারী ও সুশীল সমাজকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
নারী অধিকার কর্মীদের বাদ দিয়ে তালেবান সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের দুই দিনের আলোচনায় বসার জন্য তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
গত রোববার (৩০ জুন) থেকে দোহায় জাতিসংঘ আয়োজিত এই বৈঠকটি শুরু হয়। এক বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে কাতারে অনুষ্ঠিত হওয়া এটি জাতিসংঘ আয়োজিত তৃতীয় বৈঠক। তবে এবারই প্রথমবার তালেবান কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তানে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে তালেবান।
আফগানিস্তানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পৃক্ততা বাড়ানো, অর্থনৈতিক সমস্যা ও মাদকবিরোধী প্রচেষ্টাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে এবারের বৈঠকে আয়োজন করা হয়। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রীতিমতো কুস্তি করেছে, কোনো দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে লিঙ্গ বৈষম্য। তালেবান সরকার ইসলামের শরিয়ার দোহাই দিয়ে আইন প্রয়োগ এবং নারীরা কোনা কাজে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়, যা জাতিসংঘ ‘বৈষম্য’ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেছে। নারী স্বাধীনতা বিষয়ে জাতিসংঘ তালেবান সরকারকে কয়েকবার আলোচনায় বসতে আমন্ত্রণ জানালেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এসেছে। তাদের দাবি, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ছাড়া তারা আলোচনায় বসতে চায়।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উপপ্রধান মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, দোহায় অবস্থিত আফগান নারী ও মেয়েদের অধিকারবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত থমাস ওয়েস্ট ও রিনা আমিরি স্পষ্ট করে জানান, অর্ধেক জনসংখ্যার অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে আফগান অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে না।
এই আলোচনায় সভাপতিত্বকারী জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ডিকার্লো বলেছেন, মেয়েদের শিক্ষাসহ জনজীবনের সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে তালেবান সরকার নীতিগুলো পুনরায় বিবেচনা করবে। কিন্তু তালেবান সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, ইসলামী আইনের অধীনে নারীদের সব নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান অ্যাগনেস ক্যালামার্ড আলোচনা শুরু হওয়ার আগে এক বিবৃতিতে বলেন, তালেবানের শর্ত মেনে আলোচনায় মানবাধিকার কর্মীদের অনুপস্থিত রাখা লিঙ্গভিত্তিক নিপীড়ন ব্যবস্থাকে বৈধতা দেওয়ার শামিল।
তালেবান প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ উদ্বোধনী অধিবেশনে ২০ জনেরও বেশি বিশেষ দূত এবং জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বলেছেন, তালেবানের নীতি নিয়ে যদি মতপার্থক্য থাকে, তাহলে কূটনীতিকদের সংঘাতের পরিবর্তে যোগাযোগ বজায় রেখে সমাধানের পথ বের করা উচিত।
জবিহুল্লাহ মুজাহিদ আরও বলেন, ‘যেকোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের মতো আমাদেরও কিছু ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ রয়েছে এবং জনসাধারণের আকাঙ্ক্ষা, আগ্রহকে আমরা সমর্থন করি।’ তিনি আফগানিস্তানের ওপর থাকা বৈদেশিক নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো আলোচনা করা হয়নি।