জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে বিলুপ্ত দৈত্যাকৃতির ক্যাঙ্গারু

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাচীন জীবাশ্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে— এক সময় অস্ট্রেলিয়ার সবুজ রেইনফরেস্ট যখন ধীরে ধীরে মরুভূমিতে রূপান্তরিত হয়, তখন ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের’ ফলস্বরূপ প্রাগৈতিহাসিক দৈত্যাকৃতির ক্যাঙ্গারুর বিলুপ্তি ঘটে।
এএফপি-র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর পূর্বে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ‘প্রোটেমনোডন’ নামক বিলুপ্ত প্রজাতির ক্যাঙ্গারুদের অবাধ বিচরণ ছিল। এই প্রজাতিটি আকারে এতটাই বিশাল ছিল যে তাদের ওজন প্রায় ১৭০ কেজি (৩৭৫ পাউন্ড) পর্যন্ত হতো, যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভারী ক্যাঙ্গারুর দ্বিগুণ।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা জীবাশ্ম দাঁতের দীর্ঘস্থায়ী রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এবং সম্প্রতি আবিষ্কৃত শিলার উপাদানের পারস্পরিক তুলনা করে একটি প্রাচীন জনবসতির খাদ্যাভ্যাস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন। রাসায়নিক উপাদানের এই সাদৃশ্য থেকে বিজ্ঞানীরা ধারণা পেয়েছেন যে, এই ক্যাঙ্গারুগুলো খাদ্যের সন্ধানে কত দূর পর্যন্ত যেত।
কুইন্সল্যান্ড জাদুঘরের বিজ্ঞানী স্কট হকনাল এই প্রযুক্তিটিকে ‘প্রাচীন যুগের জিপিএস ট্র্যাকার’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে জানতে পারি একটি প্রাণী কোথায় ঘুরে বেড়িয়েছে, কী খেয়েছে, কাদের সঙ্গে থেকেছে এবং কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে—এটি যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের ‘বিগ ব্রাদার’।’
বিজ্ঞানীরা আরও জানতে পেরেছেন, এই বিশাল তৃণভোজী প্রাণীরা একসময় ঘন রেইনফরেস্টে বসবাস করত এবং খাবারের জন্য খুব বেশি দূরে যেত না। তবে, প্রায় তিন লাখ বছর আগে জলবায়ু ক্রমশ শুষ্ক ও অস্থির হয়ে উঠলে রেইনফরেস্ট ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
গবেষকদের মতে, ‘তীব্র জলবায়ু পরিবর্তনের সময়েও দৈত্যাকৃতির ক্যাঙ্গারুরা যখন তাদের আবাসস্থলের কাছাকাছি থাকতে চেয়েছিল, সেটাই তাদের বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
তবে, অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য কিছু অঞ্চলে এবং পাপুয়া নিউগিনিতে এই প্রজাতির অন্যান্য শাখা তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ সময় টিকে ছিল। এদের মধ্যে শেষ দিকের কিছু প্রজাতি প্রায় ৪০ হাজার বছর আগেও জীবিত ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিজ্ঞানী অ্যান্থনি ডসেটো মনে করেন, এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অস্ট্রেলিয়ার মেগাফোনার বিলুপ্তির ইতিহাস আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘এক সময় অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিশাল আকারের ইকিডনা, প্রায় দুই টন ওজনের ওয়ম্ব্যাটের মতো মার্সুপিয়াল এবং বিশাল মাংসাশী টিকটিকির মতো প্রাণীদের বিচরণ ছিল।’
ওলংগং আইসোটোপ জিওক্রোনোলজি ল্যাবের গবেষক ডসেটো আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলীয় মেগাফোনার বিলুপ্তি নিয়ে বহু দশক ধরে বিতর্ক চলছে, কিন্তু এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা প্রতিটি ব্যক্তি ও প্রজাতিভিত্তিক আরও নির্ভুল বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হব।’
এই গবেষক আরও যোগ করেন, ‘এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন প্রতিটি স্থান ও জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে আরও নিখুঁত বিলুপ্তি-সংক্রান্ত চিত্র তৈরি করা সম্ভব।’
পিয়ার-রিভিউড জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।