কঠোরতম জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার মোদির, ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের আহ্বান পাকিস্তানের

কাশ্মীরের পেহেলগাম হামলার অপরাধী ও ষড়যন্ত্রকারীদের ‘কঠোরতম জবাব দেওয়া হবে’ বলে নিজের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অপরদিকে, এ হামলার ঘটনায় নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। এতে দেশটি সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক এবং তারা শান্তির পক্ষে বলে জানিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
আজ রোববার (২৭ এপ্রিল) এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, কাশ্মীরে ‘গণতন্ত্র শক্তিশালী হওয়ার’ এই সময়ে হামলাটি করা হয়েছে। যদিও তিনি ভারত-শাসিত কাশ্মীরে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ দেননি।
মোদির সরকার ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় এবং এটিকে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতাভুক্ত করে। গত বছর থেকে এই অঞ্চলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের শাসন ব্যবস্থায় কার্যত কোনো ভূমিকা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোদির ‘নিরাপত্তা প্রথম’ নীতি কাশ্মীরিদের আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে, যারা ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন। স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হতে চাওয়া কাশ্মীরি বিদ্রোহীরা তখন থেকেই ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে।
আজ রেডিও অনুষ্ঠান ‘মান কি বাতে’ মোদি বলেন, বিশ্ব নেতারা তাকে এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ফোন, চিঠি ও বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে সমগ্র বিশ্ব ১৪০ কোটি ভারতীয়র পাশে দাঁড়িয়েছে।’
ভারত কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় তিন সন্দেহভাজন হামলাকারীর মধ্যে দুজনকে পাকিস্তানি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও গত মঙ্গলবারের (২২ এপ্রিল) হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় নিজেদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
গত শনিবার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি বলেছেন, ‘সত্য উন্মোচিত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পাকিস্তান যেকোনো নিরপেক্ষ তদন্তকারীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।’
এক সংবাদ সম্মেলনে মহসিন নাকভি বলেন, তিনি ‘পাকিস্তান শান্তি, স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তবে সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করবে না’।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ‘পেহেলগামে সাম্প্রতিক ট্র্যাজেডি এই চিরস্থায়ী দোষারোপের আরেকটি উদাহরণ, যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত’ পর্যন্ত আক্রমণকারীদের তাড়া করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, যারা হামলার পরিকল্পনা করেছেন এবং এটি বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ‘কল্পনারও বাইরে শাস্তি দেওয়া হবে’।

ইতোমধ্যে ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিশোধ নেওয়ার আহ্বান ক্রমশ বাড়ছে। হামলার পর ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
পাকিস্তান ভারতীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে এবং ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু নদী এবং এর উপনদীগুলোর জন্য সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে।
ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের দুটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে দুই পক্ষই সম্পূর্ণরূপে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করে। বিগত চার বছর তুলনামূলক শান্ত থাকার পর টানা দুই দিন ধরে দুই দেশের সেনারা সীমান্তে গুলি বিনিময় করেছে।