খালেদ হামিদীর পাঁচটি কবিতা
নারীই থাকে ভ্রূণ
অদেখা আগুনের চান্দ্র বিগলন
কিভাবে দুর্লভ হঠাৎ সম্প্রতি,
জানার আগেভাগে, পাঁজর গলে আজ
ফুটিছে নানা ফুল বিরল রঙে খুব।
অথচ এরই নিচে আমারই রক্তের
প্রবাহে ভেসে আসে নিথর কন্যার
অনন্তর দেহ, বলাৎকার কিবা
অগ্নিসংযোগে অকালহৃতপ্রাণ।
এমন ঘটনায় পুষ্প অবনত,
শোণিত ও ফুলের মধ্যে জিজ্ঞাসা:
নারীই থাকে ভ্রূণ আদিতে মানুষের।
পুরুষ তোরা এতো এলি বা কোত্থেকে!
মাস্ক
ফিরোজা, আসমানি, নানা সার্জিক্যাল মাস্কে ঢাকা মুখে
ঈভ টিজিঙের বুলি অব্যাহত। তবুও বিকট
গোঁফের বীজাণু থেকে কতোটুকু রক্ষাই বা মেলে
জীবিকা সকাশে ছোটা অনাগ্রহী আমার চলনে?
জানে কি বখাটে যুবা অণুজীব চারদিকে ছড়াতে
সক্ষম এমনকি কিছু আবৃত মুখের ভাষা, দূরে?
দস্যু কিংবা প্রতারক নয় শুধু, মুখোশে কারুরই
লুকানো যায় না মুখ বলেই কি উদোম আননে
কোভিড বিস্তারে দক্ষ এরই মধ্যে অনেকেই খুব!
পোশাক শিল্পের মেয়ে, তাই মোর সুতি আচ্ছাদনে
ঠোঁট প্রসাধনবিহীন, ওরা কেউ দেখে না নাকফুলও।
তাই কি লেখে না কেউ আমাদের জন্যে মুখবন্ধ?
জানার আগেই শুনি চকিত আলাপে: কারা যেন
পরিয়েছে নানা দেশে শল্য চিকিৎসকের মুখোশ
ভাস্কর্যের মেরিলিন মনরো, মার্টিন লুথার কিং,
নিপুণ নগ্নিকা, ষাঁড়, জিসাস ও গৌতম বুদ্ধকে!
ডর কিসে মোর?
(কবি ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মেহেরুন নেসা চিরস্মরণীয়েষু)
আমার দিঘল চুলে বাধ সাধে এখনো তাহলে কারা?
ওড়নাবিহীন খোলা কুন্তলে পরিহাস ছুড়ে খুব
উল্লাসে মাতা পামর জানে কি কোথা আজও দেই ডুব,
আর, কে ওড়ায় পতাকা প্রথম বাড়িছাদে, ভীতিহারা?
কসাই জবাই শেষে তাঁর শির ঘোরালে সিলিং ফ্যানে
দীর্ঘ চুলের প্রান্ত পাখায় বেঁধে পাশবিক ক্ষোভে
কোন্ গূঢ়ার্থ বিকীর্ণ চিরইতিহাসে, অনুভবে?
ডর কিসে মোর? কবি তিনি, দেন স্বদেশের মূল মানে।
চুল
হাতিরও চুল থাকে, জানেনি আগে যারা
সেঙ্গেমালামের কপালে বব-কাট
দেখেই বিস্মিত তবে কি তারা কেউ?
কেরালা থেকে আনা তামিলনাড়ুবাসী,
সোনালি কেশদাম কালোয় বেমানান
কেমন হস্তিনী! নিবাস সকাশেই
পূজারী সকলের। আমার এদিকে তো
নিষেধ প্রার্থনালয়েও যাওয়া আজও।
অশীতি বছরের লালিত কেশ যার
অদ্য সাড়ে সাত ফুটেরও বেশি জটা,
বাঁচার মানে তার চুলেরই রক্ষণ,
নচেৎ কর্তনে মৃত্যু নিশ্চিত!
ভিয়েতনামে বসে এমন প্রতীতির
বৃদ্ধ দেখে কোন্ বয়সে গুলি, বোমা?
জানে কি নারীচুল কিভাবে কেটে নেয়
আউশভিচে ওরা দ্বিতীয় মহারণে?
‘যাস নে সন্ধ্যায় বাহিরে ঝুঁটি খুলে!’
বারণ সত্ত্বেও অলক নামে পিঠে;
কেশর না হলেও কোমর বেয়ে নদী
দিনেও জ্বলজ্বল। শ্যাম্পু ব্যতীতই
নিয়ত ঝরঝরে। তবুও ছোড়ে ঢিল,
‘চিকুর কুচকুচে!’ ব’লেই দুর্মুখ
ফেরায় দশানন। কি আসে যায় তাতে,
চুল তো পড়ে নাই তাদের বাড়া ভাতে!
তবুও দোয়েল দেখে
টাঙানো পোস্টারে তার আত্মপরিচয় :
যুবক, আকর্ষণীয়, তিরিশে সবে পা,
উত্তম জীবিকার্জন সত্ত্বেও কী একা!
প্রেয়সী, জীবাণুমুক্ত, পেলে ভালো হয়।
সুস্থ তরুণী যে নেই করোনাকালেও
তা নয়। তথাপি অমনতর বিজ্ঞাপন
সারি বেঁধে দেখলে দিব্যি ওঠে গুঞ্জরণ:
দেয়াল ছাড়াও কেন ঘোষণা গাছেও!
কিভাবে নিশ্চিত তোর অণুজীব নাই?
ঋতুমতীদের এক, অসংখ্য তোমার।
স্বমেহনে গণহত্যা, দায় তবে কার?
রজঃদিন শেষে তাই কোথাও না যাই।
চেয়েও সফেদ নারী নিজেই কুয়াশা;
মুখখানা অস্পষ্ট রেখে বান্ধবী প্রার্থনা!
কালো মেয়ে বলে আমি কিছু কি অজানা?
সূর্যালোকে হাসা চাঁদ অন্ধকারে ভাসা।
তোদের রঙের মোহে বন্ধুত্ব হয় না।
তবুও দোয়েল দেখে ভাবিস খঞ্জনা।