সরদার ফারুকের কবিতা
একালের পদ্য
আবার বৃশ্চিক রাত, রুগ্ন দোলাচল
মুখস্থ ভিড়ের ছবি, মূর্খ কোলাহল
এখানে কণ্টক শুধু, মরুর দহন
বিচারের নামে চলে মিথ্যা, প্রহসন
প্রতারণা জয়ী হলো ‘সত্য বাণী’ নামে
মৃত্যুর শকট এসে সহসাই থামে
তর্জনির অহংকার কাঁপায় বাতাস
ঘরে ঘরে কাপুরুষ, জনপদে ত্রাস
তস্কর-লুটেরা যত পরেছে মুকুট
অমিয় সুধার পাত্রে তিক্ত কালকূট
সেই দেশে
দীর্ঘ এক ভ্রমণের শেষে সেই দেশে গিয়ে
আমরা সবাই চমকে উঠেছি
কৃষিজমি, নদী, বসতভিটার চিহ্নমাত্র নেই
সবখানে সারি সারি প্রার্থনার ঘর, ধর্ম-শিক্ষালয়
‘মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার তো তিনিই দেবেন।’—
বললেন এক সাবেক কৃষক
‘এতদিন শুধু পাপ বাড়িয়েছি।’—বিচিত্র পোশাক-পরা
রোগা এক শ্রমিকের কথা শুনি
‘প্রকৃত বিশ্বাসী হতে কতকিছু বাকি!’—শিক্ষকের বাক্যে ছিল
তীব্র অনুতাপ
চৌকিদার, ফেরিওয়ালা, গবেষক আর বিদ্যার্থীর দল
বিদেশি বইয়ের পাতা খুলে খুঁজে পায় ‘সঠিক নিয়মে সহবাস’।
কেউ কেউ জেনে নেয় ‘রমণীর লজ্জাস্থান দেখা যাবে কি না!’
‘পথভ্রষ্ট তোরা, আমরা-ই শতভাগ ঠিক’...
এই কথা বলে দু’দিকে দু’দল উঁচিয়ে ধরেছে বন্দুকের নল
কারও বা শরীরে বাঁধা আত্মঘাতী বোমা
বুনো ফুল
[একটি কণ্ঠস্বর বলল, ‘কথা বল!’ তখন লোকে বলল, ‘আমাদের কি বলা উচিত?’ ওই কণ্ঠস্বর বলল, ‘মানুষ চিরকাল বাঁচে না, তারা আসলে ঘাসের মতো। তাঁদের ধার্মিকতা বুনো ফুলের মতো।’ : ইসাইয়া অধ্যায় : পুরাতন নিয়ম]
পায়ের তলায় সিংহ, হাতে উদ্যত বল্লম—তুমিও প্রেমের দেবী, ইশতার!
নিমরুদ আর আশুর নগরে তোমার পূজায় আমিও ছিলাম
ইসাইয়ার অভিশাপে নেবুচাডনেজারের পরিণতি জেনে
আমি কি হাসিনি?
ময়ূর-দেবতা একদিন বেরিয়ে এসেছে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে
জনতা বলেছে , ‘ওই দ্যাখো, উড়ে যায় আজাজিল শয়তান!’
কত যুদ্ধ, কত রক্তপাত শেষে ইজনিক হ্রদে
মৎস্যকুমারীর দেখা পাই
করিন্থের হেলে-পড়া দেবালয়ে দেবদাসীদের কথা শুনি
কতবার উগড়ে দিয়েছে বিষ, বুড়ো পুরোহিত—লালায় মেশানো ছিল
ধর্মের কস্তুরি আর কণ্ঠে ছিল প্রাচীন সংগীত
ভাঙা সমাধিতে শুয়ে নিদ্রাহীন হাম্মুরাবি ভাবে,
পাথুরে লিপিতে তার আইনের ধারাগুলো আজও কি বহাল?
অবতার আসে, অবতার চলে যায়
মৌষলপর্বের মতো কত কৃষ্ণ উদাসীন হয়ে হাঁটে
পায়ে বিঁধে আছে জ্ঞানহীন ব্যাধের শায়ক
বুনো ফুল বারবার ফোটে, বাতাসে ঝরার আগে পাপড়িতে
লিখে যায় নশ্বরতা, ভালোবাসা, ঘৃণার ক্বাসিদা