ফারহানা আনন্দময়ীর কবিতা
অপেক্ষাদণ্ড
কবি তুমি আক্ষেপ কোরো না
জীবন তুমি লজ্জা পেয়ো না
সুসজ্জিত তোমাকে যদি নগ্ন করি,
আড়চোখে দেখে ফেলি চাঁদের রোদ্দুরে দীঘল হতে চাওয়া...
এবং না-হতে পারা আকাঙ্ক্ষার শরীর।
সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে আঁকা
আবেগ-মসৃণ রং-তুলির বেরঙিন আঁকিবুকি
লেখা হলো না মুক্তিরঙা সূর্যমুখি কবিতা!
ব্যর্থই বা বলি কী করে,
সফল সুসমাচার যখন শুনতেই চাওনি!
নাও, এখন নতজীবনে মেনে নাও
যাবজ্জীবন অপেক্ষাদণ্ড, বিকল্পহীন এক জীবনের জন্য।
দৃষ্টি
চোখে পড়লে চোখ, পৃথিবী আলো হোক
কোটি মাইল দৃষ্টিসেতু পেরিয়ে
পৌঁছালাম যেখানে, একদা কবিতার লোক
নাম দিয়েছিল তার স্বর্গলোক।
আমরা মর্ত্যের বেপথু আদম-ইভ
নতুন নামকরণে স্বর্গ হলো দোজখ।
চোখে পড়েছে চোখ, পৃথিবী আগুন হোক
অতঃপর পুড়ে আর পুড়িয়ে
আগুনশরীর জড়িয়ে জুড়িয়ে
পৃথিবীও আজ শীতল হোক।
বলেছিলাম দেখা মানে শুধু দেখাই হোক
কে জানত, চোখে পড়লে চোখ
দৃষ্টি হবে এমন শপথঘাতক!
সূর্যস্নান
রোদ্দুর ঝুঁকে পড়ে পাশের বাড়ির
ছাদে। সূর্য জমে জলে। একটি চড়ুই
একটি শালিকের যৌথ সমুদ্রস্নান।
তোয়ালে সাবান কোলে,
বর্ষামঙ্গল ঠোঁটে নিয়ে আমি বসে।
তুমিও কেমন স্নানের মতো!
আবার কখনও মেঘের মতো...
গড়িয়ে পড়া অবিরাম বীতশোক মেঘ।
গায়ের তুমি শুকোতে আরেকটা জন্ম চাই আমার!
স্বপ্ন
প্রায়ই ভাবি, স্বপ্ন লিখব।
ঘুম ভেঙে যায়, চোখ খুলি না,
ভয়ে, পাছে হারিয়ে ফেলি,
যদি ভুলে যাই, যাপন যদি শুষে নেয় সবটুকু নির্যাস!
মনের টাইপরাইটারে লিখতে শুরু করি।
যতখানি সুন্দর বেশে এসেছিল,
লিখতে চাই সমস্তটা, সবটুকু সুন্দর আঁকতে চাই।
আমার স্পর্শের নির্মাণ! আমার সত্যনির্মাণ!
স্বপ্নের ঘোরে যা আসে, সত্যের চেয়েও সুন্দর।
সত্যরূপ পায়, হয়ে ওঠে স্বপ্নের চেয়ে সুন্দর।
কিঙ্কর হতে ইচ্ছে করে। আমার সুজাতা প্রস্তরখণ্ডে নয়,
পাতায় পাতায় মূর্ত হতে চায়।
তার বিভায় হাড়পাঁজরে রক্ত সঞ্চালিত হতে থাকে
মত্ত হাওয়ার ছন্দে মিলে যেতে থাকে, মিশে যেতে চায়।
রূপকাঁথা টেনে-নেয়া ওম দেয়,
বর্ষারাতের শেষে ভোরের নরম রোদ্দুর মেখে দেয়।
প্রায়ই ভাবি, সেই স্বপ্ন লিখব।
অন্ধ গাছ
রাতমায়ায় জড়ানো অন্ধ গাছের
রাত জেগে থাকা কি কেবলই অলীক?
সেও ভোর দ্যাখে...
অনুভবে, স্পর্শে, একরোখা মায়ায়।
অন্ধের স্পর্শ বড় বেশি আলো ধারণ করে।
যদি অকস্মাৎ কেঁপে ওঠে কুয়াশাসেতু,
চোখ-বাঁধা কিউপিডকেই
সে সঙ্গী জানে... নিশ্চিত জানে,
কে তাকে পৌঁছে দেয় স্থির কেন্দ্রে...
সব বিপরীত পথ পেছনে ফেলে।