গল্প : করোনা নামের পৃথিবীর অসুখ

সবকিছুই কেমন জানি ফ্যাকাশে লাগে ঈশিতার, যা আগের মতো নয়। মনে হয় দিন-রাত সব একই রকম। ঈশিতার এমন দিন ভালো লাগে না। বাসার সবাই মনমরা হয়ে থাকে। স্কুলকে সে খুব মিস করছে। বন্ধুদের মিস করছে প্রচুর। তবুও সে তার আনন্দ কাজে লাগায়। কিছুদিন আগেও ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়ে যেত তার, আর এখন সে প্রতিদিন নতুন স্বপ্ন নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে—যেন স্কুলে যাবে খুব শিগগির। ঈশিতা ছবি আঁকে প্রতিদিন একটি করে। খুব ভালো ছবি আঁকে সে। আজও আঁকার সময় মামা দেখে বলে, বাহ! খুব ভালো কাজ করছিস।
: কীসের ছবি আঁকছিস?
: করোনাকে মারার ছবি।
: ওহ।
করোনাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে এমন একটি ছবি আঁকল ঈশিতা।
: খুব সুন্দর হয়েছে। আমাদের এই ভাইরাস সতর্ক থেকে প্রতিরোধ করতে হবে, জানিস তো?
: জি মামা, জানি। মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস পরে বাইরে বেরোতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে থেকে এলেই সাবান দিয়ে হাত বিশ সেকেন্ড ধুয়ে ফেলতে হবে।
: একদম ঠিক।
: আমাদের এভাবে আর কত দিন থাকতে হবে, মামা?
: হয়তো অনেক দিন। কিন্তু তাই বলে কি আমরা হাসব না, হাসা ছেড়ে দেব? মোটেও না। ঘরে বসেই আনন্দ করব। মানবসেবা করব। যতক্ষণ সুস্থ আছি, ভালো আছি, আমাদের যতটুকু সাধ্য আছে, আশপাশের দরিদ্রদের জন্য কাজ করব। পারলে রান্না করে খাওয়াব। ওদের মুখে সামান্য হাসি ফোটাতে পারলে দেখবি তোর মনেও চরম আনন্দ লাগছে।
: জানো, আম্মু আজ স্যারকে রান্না করে দিয়েছে।
: বাহ!
: শহরে স্যারের কেউ থাকে না। স্যার খুব কষ্ট করেন। স্যার পড়িয়ে যা পান, তা থেকে উনার বাবা-মাকে টাকা পাঠান। এই সময় কোথাও যেতে পারছেন না। তাই আম্মু বলেছে, কোনো সমস্যা হলে আম্মুকে জানাতে। স্যারের বেতনটাও দিয়ে দেবে বলেছে আম্মু।
: বেশ বেশ, এ তো আরো ভালো। এমন অনেকে আছেন, যাঁরা লজ্জায় কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না। অনেক সচ্ছল পরিবারেরও এমন অবস্থা। যাঁরা দুর্নীতি করেননি, যাঁরা সৎ উপায়ে আয় করেন, তাঁদেরও অবস্থা খারাপের পথে। যাঁরা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাড়ি করেছে, তাঁদের অবস্থাও ভালো না। তোর নানার কথাই বলি, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ঘর বেঁধেছে। সেই টাকা দিতে এখন হিমশিম খাচ্ছে। ঘর ভাড়া দিয়ে তোর নানাকে চলতে হয়। অনেক ভাড়াটিয়া টাকা দিতে পারছেন না, তাই তোর নানাকে বাড়ি ভাড়াও মওকুফ করতে হয়েছে। এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যায়?
ঈশিতা মুখে হাত দিয়ে মামার কথা শোনে আর মাথা নাড়ে।
: তাই বলে মন খারাপ করা যাবে না। ধৈর্য ধরতে হবে। নতুন সুন্দর সময়ের জন্য যে যার ধর্ম অনুযায়ী প্রার্থনা করতে হবে। সঙ্গে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, প্রশাসনের সবাই যা বলছেন, টিভিতে সাংবাদিকেরা যা বলছেন, সব মেনে চলতে হবে।
: তাহলে কী হবে? এই করোনাভাইরাস দূর হয়ে যাবে?
: ঠিক একদম। তাই করোনায় ভীত হওয়া যাবে না। ভয়কে জয় করতে হবে সাহসের সঙ্গে। দেখবি, এভাবেই একদিন সেরে যাবে করোনা নামের পৃথিবীর অসুখ।