বঙ্গবন্ধু স্মরণে
বঙ্গবন্ধু স্মরণে
(মুজিববর্ষ উপলক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উৎসর্গকৃত)
হিন্দু-মুসলমানদের দাঙ্গায় ভারত ভেঙে হলো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান।
কোথায় রইল শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা, শেখ মুজিবুরের মানসম্মান?
জিন্নাহ্, লিয়াকত আলী খান, নাজিমুদ্দিন সবাই চাইল যাহ্,
উর্দুই হবে পূর্ব বাংলার একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
ভাষা আন্দোলনের দাবিতে গ্রেপ্তার হলো যারা,
মওলানা ভাসানী, শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমানসহ ছাত্রলীগের নেতারা।
ভাষার দাবিতে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ হলো গঠন,
দুই পাকিস্তানের শতকরা ৫৬ জন লোক বাংলা ভাষায় করে ভ্রমণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন বাড়া,
চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন ধরা।
সাধারণ কর্মচারীদের সাথে শেখ মুজিব আন্দোলনে সহমত,
কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে আইন অনুষদ থেকে এ কোন আলামত।
১৫ টাকা জরিমানা মুচলেকা দিলে পুনরায় ফিরে পাবে ছাত্রত্বের অধিকার,
আপস করেনি ছাত্রনেতা শেখ মুজিব, নিজের জীবনকে করেছে নির্বিকার।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, বন্দি ভাইদের মুক্তি চাই,
পুলিশের জুলুম চলবে না, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে পারবে না।
বাঙালিরা চেয়েছিল উর্দু-বাংলা দুটোই হবে রাষ্ট্রভাষা,
পশ্চিম পাকিস্তানের হর্তাকর্তারা রাজি না হয়ে করল নীলনকশা।
বোঝাতে লাগল মুসলমানদের ভাষা উর্দু, হিন্দুদের ভাষা বাংলা।
কলকাতার দালাল, এটা হবে না হালাল, কমিউনিস্টদের ভাষা বাংলা।
আরবের ভাষা আরবি, পারস্যের ভাষা ফার্সি, ইংরেজদের ভাষা ইংরেজি।
বাঙালি মুসলমানদের ভাষা বাংলা হলে দোষ কোথায় হে বদমেজাজি?
ভাষার দাবিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব শুরু করল অনশন,
অনশনের ৪ দিন পর নল দিয়ে জোর করে পেটে দেয় খাওন।
হাতে-পায়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে এভাবে করে অত্যাচার,
শান্তিতে মরতেও দেবে না, এই হলো পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিচার!
শেখ মুজিবের অনশন দেখে ডেপুটি জেলার বলত,
আপনাকে যদি মুক্তি দেওয়া হয় তবে খাবেন তো!
মুক্তি দিলে খাব, না দিলে খাব না,
তবে আমার লাশ মুক্তি পাবে, তখন কেউ আটকাবে না!
রাষ্ট্রভাষা বাংলা, বিরোধী দল আওয়ামী লীগ বাস্তবায়নের দাবিতে,
২৭ মাস জেল খেটে মুক্তি পায় না শেখ মুজিব বাংলার মাটিতে।
২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ না করলে, মুসলিম লীগ কেন্দ্রীয় আইনসভায়,
উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, বাংলা ভাষাকে ফেলে দিত অসুবিধায়।
২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলো জোরালো আন্দোলন,
সালাম, বরকত, জব্বারদের রক্তের বিনিময়ে হলো বাংলা ভাষার পতাকা উত্তোলন!
ভাষাশহীদের বিদ্রোহের নাম ছড়ে গেছে আজ সারা বিশ্বে,
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে, শান্তি নিশ্বাসে, নিশ্বাসে।
৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে স্বায়ত্তশাসনের জোরদার আন্দোলন।
তিন মাসে আটবার, শেখ মুজিবুর রহমান করে কারাবরণ।
শেখ মুজিবসহ আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে পালিত হয় ধর্মঘট,
পুলিশের গুলিতে নিহত হয় মনু মিয়াসহ ১১ জন শ্রমিক কর্মঠ।
পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে মুজিব খায় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা,
আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে মুক্তি পায় নেতা-নেতৃবৃন্দ, বন্ধ হয় হামলা।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রামের উদ্যোগে দেন মুজিবকে সংবর্ধনা
১০ লক্ষ ছাত্র-জনতার সংবর্ধনায় নেতাকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে দেয় সম্মাননা।
গণঅসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন,
বঙ্গবন্ধুর দাবি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অগ্রাহ্য করলে গোলটেবিল বৈঠক হয় বর্জন।
ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন,
বঙ্গোপসাগর ছাড়া বাংলা শব্দটির অস্তিত্ব একেবারেই বিলীন।
বাংলার মেহনতি মানুষ সর্বস্তরের জনগণ মিলে সাজাবে এ দেশ।
পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে বঙ্গবন্ধু নাম সংস্কার করে দেয় ‘বাংলাদেশ’।
৭০ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকার প্রতীকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয় অর্জন,
বাংলার চারদিকে জেগে ওঠে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গর্জন।
আওয়ামী লীগের সদস্যরা ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রে, করে শপথ গ্রহণ,
বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদ সদস্যদের বৈঠকে পার্লামেন্টারি দলের নেতা নির্বাচিত হন।
ভুট্টো কোয়ালিশন ঘোষণা দিয়ে চায় দুই প্রদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দলে ক্ষমতা হস্তান্তর।
বঙ্গবন্ধু দাবির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলে, এটা ভুট্টো সাহেবের চাওয়া একান্তর।
ক্ষমতার মালিক আওয়ামী লীগ, সংখ্যাগরিষ্ঠ এখন পূর্ব বাংলার জনগণ,
ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণার মাধ্যমে করে বর্জন।
৩ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে করা হয় জাতির জনক উপাধিতে ভূষিত,
বাঙালির হৃদয়ে থাকবে চিরকাল শেখ মুজিবুর রহমান সুরক্ষিত।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সভায় ৩ মার্চ দেশব্যাপী ডাকা হয় হরতাল,
ক্ষমতা হস্তান্তর না করে প্রেসিডেন্ট শুরু করে এ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে বানচাল।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’
‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো,
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।
রক্ত যখন দিয়েছি আরো দেবো, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ।’
বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন।
অফিস, আদালত, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক-বিমা, নির্দেশে সময়মতো খোলেন।
১৬ মার্চ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকে বসেন।
ক্ষমতার ভাগের জন্য ভুট্টো ঢাকায় আসেন।
২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হলে ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেন,
কালরাত্রিতে পাক সেনাবাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আক্রমণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা রাইফেল, সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স,
অপারেশন সার্চলাইট নামক এই গণহত্যায় নিহত হয় কয়েক হাজার।
বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত বারোটা বিশ মিনিটে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
বাংলার জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছ, যার যা কিছু আছে তাই
নিয়ে দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ কর।
পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটি বাংলাদেশের
মাটি থেকে যুদ্ধ করে মুক্ত কর।
শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়,
মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য যুদ্ধে রত।
দেশকে স্বাধীন করতে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান,
যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য পুলিশ ইপিআর বেঙ্গল রেজিমেন্ট আনসারদের কাছে যান।
কোনো আপস নাই, জয় আমাদের হবেই,
পবিত্র মাটি শত্রুমুক্ত রবেই।
বার্তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে ধানমণ্ডি থেকে,
২৬ মার্চ ইয়াহিয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আওয়ামী লীগকে, দেশদ্রোহী বঙ্গবন্ধুকে।
সেনানিবাসে তিন দিন রেখে নিয়ে যায় বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানে,
২৬ মার্চ এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণাপত্র পাঠ করে নিজ অবস্থানে।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে, গঠন করে বিপ্লবী সরকার,
দেশ পরিচালনার দায়িত্বে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবার,
তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে জনগণের খোঁজ রাখার।
ভারতীয় সহযোগিতায় সামরিক ট্রেনিং নিয়ে,
বাঙালির দামাল ছেলেরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুত বুক ফুলিয়ে।
বঙ্গবন্ধু ৭১-এ তুলেছে যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বনিতার মনে ঢেউ,
দেশকে মুক্ত করতে ঘরে বসে থাকতে পারেনি কেউ!
উড়িয়ে দিল একনলা, দুনলা, মেশিনগানের গুলিতে
পাকিস্তানি ঘাতক, রাজাকার মিশিয়ে নিল বাংলার মাটিতে।
দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ২ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা।
মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বাঙালি জাতিতে এসেছে সার্থকতা।
সাড়ে বারো বছর জেল, ২৩ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমে এই স্বাধীনতা,
৭ কোটি বাঙালি পায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ করার নির্ভরতা।
বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদে পেলাম দেশ,
১৬ ডিসেম্বর বিশ্বে পরিচিত স্বাধীন বাংলাদেশ।
মীরজাফরেরা করল তাকে হত্যা,
বাঙালির হৃদয়ে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বক্তা।
মানচিত্র চিরঋণী ১৫ আগস্টে,
বঙ্গবন্ধুকে কেন হত্যা, কীসের লোভ এই রাষ্ট্রে?
জাতির জনককে মেরে ১৫ আগস্টে পালন করে বর্তমানে
কারোর জন্মদিন, কারোর বা বিয়ের দিন,
আবার কেউ বা পালন করে বুকফাটা হাসির দিন।
এটাই কি আমাদের চরিত্র হওয়া উচিত?
ভুয়া জন্মদিন বন্ধ কর,
জাতীয় শোক দিবস পালন কর।
প্রাণ নেয় শেখ ফজলুল হক মনির,
অন্তঃসত্ত্বা আরজু মনি,
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে কেন হত্যা, কেন এই নোংরামি?
ভাবলে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী উত্তরসূরিদের সরানোর বিক্ষোভ,
আত্মাগুলো করেছিল সেই দিন কলরবের মহোৎসব।
’৭১-এর দালালরা বলে জাতির পিতা নাকি ইব্রাহিম (আ.) হয়,
আমরাও মানি ইসলামের জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-কেই কয়।
প্রত্যেক জাতিতে একজন পিতা থাকে,
যেমনটি থেকেছে পাকিস্তানে, ভারতে,
প্রশ্ন একটাই—যদি পাকিস্তানে থাকে, বাংলাতে দোষ কি তাতে!
কবিত্ব সাহিত্যের মন নিয়ে ভাবলে বোঝা যায়,
ওরা ইতিহাসকে নষ্ট করে দিতে চায়।
বুঝতে দিতে চায় না নতুন যুবসমাজকে তা,
যাতে ভুল পথে ফেলতে পারে এ সমাজ পা।
তাতে ওদের লাভ হয়, বেড়ে যায় জনসংখ্যা,
পূরণ হয় এ দেশের পাষাণদের মনের আকাঙ্ক্ষা!
ওরা কি জানে না, একদিন ওদের জবাবদিহি করতে হবে?
এপারে নয়তো ওপারে, ক্ষমা চাইলেও লাভ হবে না তৎক্ষণাৎ তবে।
সময় থাকতে এসো, জাতির জনকের মাজারের কাছে গিয়ে
বলি ভুল করেছি, ক্ষমা করো হে বাংলা মায়ের আশিক প্রিয়ে।
বঙ্গবন্ধুর বঙ্গ চারণে, গড়ব দেশ, তার স্মরণে,
বাঙালি জাতি ব্যস্ত শেখ মুজিবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে।
বিশ্বাসঘাতক, খুনি, টুপিবাজ মোশতাক
বঙ্গবন্ধু হত্যায় সমগ্র জাতিকে করে নির্বাক।
দূতাবাসে চাকরি, খুনিদের পাঠায় কত দেশে।
সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকে হার মানায় অবশেষে
খুনিদের সূর্যসন্তান বলে আখ্যায়িত করে,
অবৈধ ক্ষমতা সেনাবিদ্রোহের দ্বারা হেলে পড়ে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী মুহিতুল ইসলাম।
বাঙালি জাতি হবে কলঙ্কমুক্ত, তোমায় সালাম।
মামলার প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক,
বঙ্গবন্ধু হত্যার, তুলে ধরে বিচারের ছক।
পাঁচ কুলাঙ্গারের হয়েছে এ দেশে ফাঁসি,
বাকিদের অপেক্ষায় ফাঁসি মঞ্চের রশি।
আওয়ামী লীগ পেরেছে একমাত্র সমাধান দিতে
ক্ষমতায় এসেছে শুধু জনগণের মনে হাসি ফোটাতে।