রিক্তরঞ্জক : পিয়াস মজিদের কবিতা
গোলাপের রক্তিম অতলান্ত
১.
সব ভোজসভা ম্লান করে বাঁচিয়ে রাখি
মৃত্যু নাম্নী নয়নাভিরাম নাচের ক্ষুধা
২
তোমার খরা-পথে
জনম জনম পুড়ে খাক হওয়া
আমি এক করুণ মল্লার
৩
সূর্য-ঢলে সমুদ্র ভেসে চলে
পূর্ণ চাঁদের তৃষ্ণায়
অন্ধকার গ্লাস আমি;
শূন্য
৪
কঙ্কালিনীর নূপুরনিক্বণ
ঝরে পড়ে সব স্তব্ধতা;
মাংসল
৫
এই নৈঃশব্দ্য
নক্ষত্রে নিনাদিত,
তোমার মুখর শ্রীভাষার
আমি সেই নির্জন পাঠক।
৬
নদী তুমি
পাষাণপ্রবাহী,
আমাকে ডুবাও যদি
তবে তুমি লাবণ্যকুম্ভ...
৭
তোমার অগস্ত্যে জন্ম নেয়
কত বকুলপথ!
৮
সন্ধ্যা,
তোমার খয়েরি গজলে
রাতভর ছেয়ে আছি;
কালো তুষার।
৯
যাও আলো, এসো কালসুর
আমি শিল্পহারা
শেখাও আমাকে;
মরণের
অমল ধবল কারুকাজ
১০
তুমি উড্ডীন ধবল পায়রা,
আমি সেই কালো ছায়ার সরোবর
১১
আমার শ্যাওলাপড়া নেত্র দেখে
সব পুষ্প চিতালুপ্ত,
সর্প মেলে বাহারি বিষপাপড়ি
১২
এমন মানবজনম
একরাশ মরণবাস্তবে ঘেরা।
১৩
বৃষ্টি বৃষ্টি
নিঃসুর সময়গর্ভে
সজল সুরের বীজ
১৪
জলের বন্ধনে
একি তরঙ্গিত বেণি;
সমুদ্র তুমি।
১৫
রাত্রি। বাতাসযামিনী
সামনে সমুদ্র। শত শত ঢেউয়ের খিলান
জললুপ্ত দুপুরের স্মৃতি ভেসে আসে
পারাপার
নীল শশী
কালো ঊষা
আটকে গেছি
সূর্যের অভূত
চন্দ্রচক্রবালে।
হঠাৎ দিগন্তে শুরু
সব মৃত তারার জলসা।
এক ফোঁটা অন্ধকার সুর
এখন সাঁঝবাতির সেতু;
পেরিয়ে যাই তোমাকে।
রক্তশোভা
ঝরে পড়া
প্রতি রাতের
চাঁদনী-সংগীতে
নির্মিত এই
নৈঃশব্দ্য সরোবর,
আমার মরণের ছোঁয়ায়
এখন কাকলিমুখর।
পরিস্থিতি
হৃৎকমল খুঁজছিলেন
শঙ্খ ঘোষ;
পেলেন—
ধাতব কলকাতা।
রিক্তরঞ্জক
আমি রাত্রি;
সন্ধ্যাজাতক;
জলমিনার থেকে
শুষে নেই অগ্নি।
দাউদাউ পোড়া যায়
রক্তের হৃদয়।
শত শত কফিনসরণি
পেরিয়ে মাড়িয়ে
তুমি যখন
দূর পাহাড়ের
দ্বিধাদীর্ণ জরায়ুতে।
টিলারও মগডালে
চিরদুপুরের ঢেউ
আমাকে ছিটকে ফেলে
তোমার সেই ভূতল-বিদ্যায়তনে
অধীত অন্ধজ্ঞানে আমি চক্ষুষ্মাণ আজ।