নজরুল জন্মবার্ষিকী
দুখু মিয়ার ভবিষ্যৎ
A proletarian class position is more than a mere proletarian `class instinct’. It is the consciousness and class instinct and practice which conform with the objective reality of the proletarian class straggle. Class instinct is subjective and spontaneous.
Philosophy as a Revolutionary weapon: Louis Althusser
দুখু মিয়া নামটা সুন্দর। নামের সঙ্গে কেমন জানি এক অদ্ভুত মায়া ভর করে আছে। মানব জীবনের কষ্ট-শিষ্ট, ব্যথা-বেদনা, অভাব-আশ্রয় সবই যেন রিক্ত করুণায় উদ্ভাসিত। হয়তো অনটনের ভাগ্য তাড়নার অভাব হতে চলতি সমাজে এমন নামের জন্ম। কেউ কেউ বলেন, দুখু মিয়া পারিবারিক নাম। কেউ বলেন, সমাজ উৎসারিত। খোদ বাংলা একাডেমি নজরুল-রচনাবলীতে ‘দুখু মিয়া’ নামকে পারিবারিক ডাকনাম বলে সাব্যস্ত করেছে। বাংলা একাডেমি দুখু মিয়া নাম ধার করেছেন কবি আবদুল কাদিরের কথিকা হতে। কথিকাটি প্রচারিত হয় পাকিস্তান রেডিওর বরাতে। কবি আবদুল কাদিরের মত, “কাজী ফকির আহমেদের ঔরসে সাত পুত্র ও দুই কন্যা পরিগ্রহণ করেন; তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠ কাজী সাহেব জানের পর চার পুত্র অকালে লোকান্তরিত হয়। অতঃপর নজরুলের জন্ম হলে তাঁর ডাক-নাম রাখা হয় ‘দুখু মিয়া’।” কিন্তু ডাকনাম নিয়ে খটকা খানিক রয়ে গেল।
নজরুল পরিবারও নামখানা বিশেষ আমলে নেয় নাই। নজরুলের বংশলতিকার পূর্বাপর দেখলে এমন পারিবারিক নামকরণের ধরন এই সংশয় সৃষ্টি হয়! তবে কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম দুখু মিয়া তৎকালীন সমাজবাহিত কি না সেই প্রশ্ন তোলা থাকল। কারণ লেটোগানের মাহফিল থেকে এহেন নামের উদ্ভব বলে মনে হয়। বলতে দোষ নাই, আদুরে নামের ব্যাপারে বাঙালি সমাজে আদিখ্যেতার শেষ নাই। এও এক সামাজিক অসংগতির বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া বৈকি! যদি দুখু মিয়া সই না হয়, আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয় কেন মেনে নিল? সেও বুদ্ধিবৃত্তির দৈন্যদশা, নয়তো এক বিধাতার ভাগ্যের দুস্তর পারাবার!
যাই হোক, নজরুলের জন্মের নয় বছরের মাথায় পিতা কাজী ফকির আহমেদ গত হন ১৯০৮ সালে। অভাব-অনটনের কারণে ছাত্রাবস্থায় পরের বছরই মক্তবের গুরুভার লন। মাজারের খাদেমও ছিলেন তিনি। একই সময়ে লেটোগানের দলের সভ্য হন। নজরুল শুধু গাইতেন না, গান রচনাও করতেন। সেই অর্থে নজরুলের সাহিত্য উন্মেষ কবিতা দিয়ে নয়, গান দিয়েই। গাওয়া আর লেখা দুই-ই ছিল তার উপজীব্য। তবে উপমহাদেশের নামজাদা রাজনীতিবিদ ও লেখক মুজফ্ফর আহমদ ‘কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা’ বইয়ে বলেন, “১৩২৬ সালের শ্রাবণ সংখ্যাক (খ্রিস্টীয় হিসাবে ১৯১৯ সালের জুলাই-আগস্ট মাস) ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’য় নজরুল ইসলামের ‘মুক্তি’ শীর্ষক কবিতাটি ছাপা হয়। যতটা জানা গিয়েছে এটিই ছিল তার প্রথম পত্রিকায় ছাপানো কবিতা। তার আগেও অনেক কবিতা লিখেছে, কিন্তু এটিই প্রথম ছাপা হয়েছিল।” নজরুল তখন ৪৯ নম্বর বেঙ্গলি রেজিমেন্টে সৈনিকের পদে চাকরি করতেন। একজন পীরের পরলোক যাওয়া নিয়ে কবিতাটি লেখা। কাঁচা হাতের লেখা বলে কবিতাটি শুরুর দিকের কোন বইয়ে ঠাঁই মিলে নাই। পরে, অবশ্য ঠাঁই হয় প্রকাশের ২০ বছর বাদে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত ‘নির্ঝর’ নামক পুস্তকে। চকচকে দিবালোকের মতো সত্য এই, কাজী নজরুল ইসলাম নিয়ে সাধু আর সহজ পুস্তিকাটি কমরেড মুজফ্ফর আহমদেরই লেখা।
কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যের বিকাশ ঘটে সেনাবাহিনী হতে প্রত্যাবর্তনের পর। ১৯২০ সালের মার্চ মাসে উর্দি পোশাক ছেড়ে তিনি কমরেড মুজফ্ফর আহমদের সঙ্গ পান। সাহিত্য আর সাংবাদিকতার শুরু সেখানেই। মুজফ্ফর আহমদ বলেন, “সমালোচক ও সমঝদাররা এই কবিতাটির তারিফ করেননি। কেউ কেউ বলেছেন কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের অনুকরণ। যিনি যা কিছু বলুন না কেন, আমি কিন্তু নজরুল ইসলামের এই কবিতাটিতে তার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেম। তার এই কবিতা এবং ‘হেনা’ ও ‘ব্যথার দান’ প্রভৃতি ছোটগল্প পড়ে আমার মনে হয়েছিল যে বঙ্গ সাহিত্যে একজন শক্তিশালী কবি ও সাহিত্যিকের উদ্ভব হতে যাচ্ছে।” কমরেড মুজফ্ফর যে রাজনৈতিক দূরদর্শী ছিলেন, কোনো সন্দেহ নেই। সবচেয়ে বড় কথা, প্রতিভাকে ঠাওর করতে পারা। শুধু চিহ্নিত করা নয়, চিহ্নের আকারের পথ খুলে দেওয়া। দর্শনশাস্ত্র এটাকে বলছে, চিন্তার চিহ্ন দিয়ে চিন্তাকে ধরা। কারণ, চিহ্নকে কেবল প্রকরণ হিসেবে ধরা মানে চিন্তার আকার তাতে থির চিত্ররূপে বিরাজ করা। কিন্তু চিহ্নকে আকার দিলে সেটা ঐতিহাসিকভাবে সময় হিসেবে ধরা দেয়। এ কথা সত্য মুজফ্ফর আহমদ কাজী নজরুল ইসলামকে চিহ্ন আকারে ধরেছেন। আর নজরুল চিহ্নকে তাঁর সময় আকারে হাজির করেছেন। কথাটা ভাবেরই কথা। কিন্তু ভাব কোথায় থাকে? আমরা দেখব খানিক ইতিহাসে আর খানিক তত্ত্বের আকারে।
১৯২০ সাল মুজাফ্ফর আর নজরুলের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দুজনই সম্পাদক হিসেবে এ কে ফজলুল হকের অর্থায়নে দৈনিক নবযুগের দায়িত্ব লন। সে সময় নজরুলের একটি লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়েন। লেখার শিরোনাম ‘মুহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?’ কিন্তু ‘মুহাজিরিন’ আদতে কী? ১৯২০ সালে ভারতবর্ষে ‘হিজরত আন্দোলন’ নামে একটি আন্দোলন হয়। এই আন্দোলনে প্রায় হাজার আঠারোর অধিক মুসলমান আফগানিস্তানে চলে যায়। আরবি হিজরতের অর্থ স্বেচ্ছা-নির্বাসন। আর মুহাজির শব্দের অর্থ নির্বাসিত। মুহাজিরিন বহুবচন অর্থে চালু। সে সময় ব্রিটিশ সরকারের জুলুম-অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য স্বেচ্ছায় নির্বাসিত হয়েছিলেন তাঁরা। যাই হোক, নজরুলের লেখায় হতভাগ্য হাবিবুল্লার হত্যার তীব্র প্রতিবাদ ছিল। অবশ্য লেখাটির জন্য ব্রিটিশ সরকার সতর্ক করেছিল। পরে কিন্তু খেলাফত কমিটির ইশতিহার ছাপানোর অপরাধে নবযুগ পত্রিকাটির জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। যদিও ইশতিহারটি দৈনিক বসুমতীতে পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিল। ব্রিটিশ রাজের সকল ক্ষোভ নজরুলের ওপরই পড়েছিল। সে সময় চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্যও হন। তবে ফের ১৯২১ সালে নবযুগ পত্রিকায় যোগদান করেছিলেন।
১৯২১ সালের কুমিল্লার ঘটনাকে ‘একটি করুণ অধ্যায়’রূপে বিবেচনা করেছেন মুজফ্ফর আহমদ। প্রেমমুগ্ধ নজরুল নার্গিস খানমকে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ে মাসের আগেই ভেঙে যায়। নজরুল বিরজাসুন্দরী দেবীকে পত্রে লিখেন, ‘মা, আলী আকবর খান আমাকে নোটের তাড়া দেখিয়ে গেল।’ মুজফ্ফর বলেন, ‘১৯২১ সালে জুন মাসে নজরুলের মনে আলী আকবর খানের প্রতি যে-ঘৃণা জমাট বেধেছিল সেই ঘৃণা জমাট বেঁধেছিল সেই ঘৃণা আর কোন দিন তার মন থেকে সরাতে পারেনি।’ সেই করুণ কাহিনীর কথা আর নাইবা বললাম। কিন্তু লেখক আর গায়ক হিসেবে তাঁর জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। শুধু শিক্ষিত সমাজে নয়, কৃষক-শ্রমিক নানা সমাজে নজরুল তাঁর লড়াই আর সাহিত্য জারি রেখেছিলেন। আর আরেক কারণ আছে। নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ছাপা হয়েছিল ‘সাপ্তাহিক বিজলী’ পত্রিকায়। সমসময়ের কিয়ৎ পরে ‘মোসলেম ভারত’ কবিতা প্রকাশ করে। কবিতাটি তখন অসম্ভব আলোড়ন তুলেছিল। কিন্তু বেদনার পরিহাস, মোহিতলাল মজুমদার তাঁর ‘আমি’ নামক লেখা হতে নজরুল ‘চুরি’ করেছেন অভিযোগ তুলেছিলেন। শেষ নাগাদ মোহিতলাল ধোপে টিকে নাই। নজরুলও মোহিতলালের দারুণ জবাব দিয়েছিলেন ‘দ্রোণগুরু’ কবিতায়। দ্রোণগুরু কবিতার ভূমিকাটি বেশ মজার, ‘কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধকালে দ্রোণাচার্য্য কুরু সেনাপতি পদে অভিষিক্ত হইলে, তিনি প্রাচীন ও অকর্মণ্য বলিয়া দ্রোণ-বিদ্বেষী কর্ণের বিদ্বেষ আরো বাড়িয়া যায়। এদিকে দ্রোণ-শিখা অর্জ্জুনের কৃতিত্বও কর্ণের দুঃসহ হইয়া ওঠে। এই বিদ্বেষের কথা মহাভারতে উল্লেখ আছে। কিন্তু নিম্নলিখিত ঘটনাটির কথা মহাভারতে উল্লেখ নাই। কর্ণটদেশে প্রচলিত তামিল সংস্করণের একটি গাথা অবলম্বনে এই কবিতা রচিত হইয়াছে। দ্রোণাচার্য্যের মনে অর্জ্জুনের প্রতি আন্তরিক স্নেহ নষ্ট করিবার জন্য, এবং তাঁহার উপর যাহাতে গুরুর নিদারুণ অভিশাপ বর্ষিত হয় এই উদ্দেশ্যে, অর্জ্জুন কর্তৃক লিখিত বলিয়া একখানি গুরুদ্রোহসূচক কুৎসাপূর্ণ পত্র দ্রোণাচার্য্যরে প্রতি প্রেরিত হয়। বলা বাহুল্য, এই কৌশল সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল।’ মোহিতলালের ব্যর্থতাও ইতিহাসে সমাসীন। নিশ্চয়ই বাংলার নবীন পাঠিকারা সেটা বুঝে নিয়েছে।
‘ব্যথার দান’ই নজরুলের প্রথম গল্পগ্রন্থ এবং প্রথম পুস্তিকা। ব্যথার দানে মূলত ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের প্রভাবেরই ফসল। লেখায় একই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকতা কিভাবে ধারণ করতে হয় সেটা দেখালেন। জাতীয় অর্থে দেশপ্রেম। ‘দেশপ্রেম’ কথাটায় ভাবের খেয়ালি আছে। সেটা কেমন? একদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই, আরেকদিকে গণমানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। দেশপ্রেমের ভেতর একটি স্বাধীন দেশের জন্ম কথাই নিহিত। কারণ, নজরুলই প্রথম ব্রিটিশের কবল থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি তুলেছিলেন। ওই অর্থে নজরুলই ভারতের স্বাধীনতার লিখিত ঘোষক। নজরুল লেখেন, ‘ভারতবর্ষের সম্পূর্ণ দায়িত্ব, সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা, শাসনভার সমস্ত থাকবে ভারতীয়দের হাতে। তাতে কোন বিদেশির মোড়লি অধিকারটুকু পর্যন্ত থাকবে না।’ দাবিটি ‘ব্যথার দান’ বইয়ে নয়, তুলেছিলেন ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায়, ১৩ অক্টোবর ১৯২২ সালে। ব্যথার দানে চিন্তার যে সূত্রপাত ঘটেছিল, তার প্রতিফলন ঘটেছে ‘ধূমকেতু’র সম্পাদকীয়তে। তার জন্য আকাশ সমান কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যথার দানে আন্তর্জাতিকতা কোথায়?
মুজফ্ফর আহমদ লেখেন, ‘আন্তর্জাতিকতার ভাব শুধু তার স্বপ্নালুতা হতেই এসেছিল, না, তার কোনো বাস্তব ভিত্তি ছিল। আমি আগেও বলেছি যে অক্টোবর বিপ্লব রুশ দেশের জনগণ যা পেয়েছিলেন, সেই পাওয়াকে দুনিয়ার জনগণ নিজেদের পাওয়া বলে ধরে নিয়েছেন। তাই দুনিয়ার ভিন্ন দেশ হতে জনগণের প্রতিনিধিরা লালফৌজকে সাহায্য করতে এসেছিলেন।’ নজরুলের চিন্তার জগতে রুশ বিপ্লব যে প্রভাব ফেলে তা ‘সর্বহারা’ ওরফে শোষিত-বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষের পক্ষে দাঁড় করিয়েছে। মানে সময় নজরুলকে চিন্তা দিয়েছিল আর চিন্তা দিয়ে মানুষের মুক্তির সংগ্রামে শামিল হয়েছিলেন। কেননা, চিন্তার দায় তো ইতিহাসের কুঠুরিতে। গণমানুষের মুক্তির বাসনায়। ইতিহাস মানুষ সৃষ্টি করে না। মানুষই ইতিহাসের রচয়িতা। মানে লড়াই আর কর্মদশা তাকে ঐতিহাসিক করে তোলে। ঐতিহাসিকতার ভেতর থাকে ভবিষত্যের দায়। দায় পূর্ণ করার ভেতর দিয়ে মানুষ ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে। আর হয়ে ওঠাকে বলা হয় মুক্তি। সামগ্রিক অর্থে, মুক্তি একা নয়, দশের। বিমূর্ত সময়কে মূর্ত করে তোলা। নজরুল সেই অর্থে ঐতিহাসিকও বটেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, দুখু মিয়ার ভবিষ্যৎ কী? ভবিষ্যৎ শব্দটা অজানা দিশার মতো শোনায়। তবে শুদ্ধ কবি হিসেবে নয়, নানাবিধ কারণে অবগুণ্ঠিত নজরুল ভবিষ্যতের দরজায় কড়া নাড়বেন। প্রথমত, সাম্যের প্রশ্নে; দ্বিতীয়ত, হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের প্রশ্নে; তৃতীয়ত, গণমানুষের লড়াইকে কীভাবে চিন্তার আকার দেওয়া যায় সেই প্রশ্নে; চতুর্থত, নারী-পুরুষের সম্পর্কের প্রশ্নে; পঞ্চমত, ভাষার প্রশ্নে। এইসব প্রশ্নে নজরুলের টুটাফাটা সমালোচনা থাকলেও নজরুলের লেখায় যে চিন্তার খোরাক আছে, সেটা ভবিষ্যৎকেই সামনে এনে দেবে। দুখু মিয়ার ভবিষ্যৎ দুখুতে নাই। আছে ‘উন্নত মমশিরে’, আছে ‘শিখড় হিমাদ্রীতে’, আছে ‘উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোলে’, আছে ‘অর্ধেক নর, অর্ধেক নারী’, আছে ‘সাম্যের গানে’। আর ভাষায় ‘ফিনকি দিয়ে বয়ে চলা’। বস্তুত নজরুল শ্রেণিসচেতন লড়াকু। ফলে বাস্তব দশা তাকে প্রশ্নমুখর করে। তুরীয় ভাব দেয়। জিজ্ঞাসার অন্তরালে মানুষের যে বাঁধনহারা মন তার দিশাই তো নজরুল দেখিয়েছেন। দর্শনশাস্ত্র বলছে, মনের দিশাই আপন বা ব্যক্তির মুক্তি। আর নিছক ব্যক্তির মুক্তি যদি সামগ্রিক চিন্তার পদ হয়, তাহলে ‘দুখু’তে নজরুল নাই। নজরুল আছে ‘দুখু’র ভবিষ্যতে। কেননা মানুষের বেদনা রক্তিম হলে লড়াই অনিবার্য হয়ে পড়ে। আর লড়াই অনিবার্য হলে মুক্তি পায়ে পায়ে হাঁটে। মানে সংকটময় বাস্তবতাকে অতিক্রম করে। অতিক্রমে নজরুল শুধু ব্যতিক্রমই নন, ‘দুখু’ অতিক্রান্ত চিন্তারই চিহ্ন।
হদিস
১. Lenin and philosophy and other essays: Louis Althusser, Translated by Ben Brewster, Aakar books, delhi, 2006
২. Time for revolution: Antonio Negri, translated by Mtteo Mandarini, continuum, London, 2003
৩. নজরুল-রচনাবলী : কাজী নজরুল ইসলাম, সম্পাদনা : রফিকুল ইসলাম গং, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১২
৪. কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা : মুজফফর আহমদ, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০৯