বানান বিতর্ক
‘ঈদ’ ও ‘ইদ’, বিশিষ্টজনদের মন্তব্য
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত, জামিল চৌধুরী সম্পাদিত ‘আধুনিক বাংলা অভিধানে’ প্রস্তাবিত ঈদের বিকল্প বানান ‘ইদ’ নিয়ে সম্প্রতি তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে এই আলোচনা এখন জায়গা করে নিয়েছে গণমাধ্যমেও। এই বানানটি নিয়ে বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক এবং কয়েকজন সাহিত্যিক ও বিশিষ্টজনের ভাবনা নিচে দেওয়া হলো।
হাসান আজিজুল হক
কথাসাহিত্যিক
‘ই’ ও ‘ঈ’ মধ্যে উচ্চারণগত পার্থক্য অবশ্যই রয়েছে। ‘ঈদ’ যেহেতু আরবি শব্দ, ফলে এর উচ্চারণটা আরবি ব্যাকরণসম্মত। তাই বলে এতদিনের প্রচলিত শব্দে ‘ঈ’ বাদ দিয়ে ‘ই’ লিখতে গেলে বিদঘুটে লাগবে। তবে এও ঠিক, কেউ যদি ‘ই’ লেখে, তাকে অপরাধী বানানো যাবে না।
শামসুজ্জামান খান
মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি
এটি একটি বিদেশি শব্দ। আর বিদেশি শব্দ লিখতে ‘ঈ’ বা ‘ঈ-কার’ নয় ‘ই’ বা ‘ই’-কার লেখার নিয়ম। তাই ঈদকে ইদও লেখা যাবে। দুটো বানানই শুদ্ধ। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ঈদ শব্দটি সঠিক। তবে আমার মনে হয় দুটো বানানই নিয়ে নেওয়া যায়।
আবুল কাশেম ফজলুল হক
সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি ঈদ লিখি। ঈদ বানান ঈদ-ই লিখি। কারণ আরবিতে ঈদ যেভাবে লেখা হয় তার উচ্চারণ ঈদ ঠিক হয়। কিন্তু এক ভাষার শব্দ যখন অন্য ভাষায় যায় তখন তার উচ্চারণে অনেক জায়গাতেই পরিবর্তিত হয়ে যায়। সে কারণেই অনেকে ঈদ বানানে ইদ ব্যবহার করেন।
এখন আমার মনে হয় কালক্রমে ইদ দিয়ে ঈদ বানানটি ইদ হয়ে যাবে। তাই ইদ লেখা যায়।
বিশ্বজিৎ ঘোষ
অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম দীর্ঘ-ঈ ব্যবহার করতেন। তাহলে কেন ঈদ বানান হ্রস্ব-ই দিয়ে লেখার প্রস্তাব এলো? ঈদ শব্দটি বাংলার এবং বাঙালির উৎসবের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কোনো কোনো বানান থাকে যার পরিবর্তন হলে চোখে লাগে। কখনো কখনো আবেগে লাগে, কখনো কখনো বিশ্বাসে লাগে। এর ফলে সমাজে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। ফেসবুকে অনেকেই এর প্রতিবাদ করে লিখছে। আমার মনে হয় কিছু কিছু শব্দ ব্যতিক্রম বানান নিয়ে থাকতে পারে। যেমন ঈদ-এর বেলায় এমনটি হতে পারে। তাই আমার মনে হয় ঈদ বানান অপরিবর্তিত রাখলে বেশির ভাগ বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
সাখাওয়াত টিপু
কবি
আরবিতে তিনটি বর্ণ মিলে ঈদ বানান হয়। আইন, ইয়া ও দাল। এই তিনটি মিলে ঈদ হয়। কিন্তু আইনের পর যদি ইয়া থাকে তাহলে উচ্চারণ ‘ঈ’ স্বরের হবে। আর ইদ অপভ্রংশ বা বিকৃতি।