মেলা থেকে
আমাদের প্রকাশনা বইমেলাকেন্দ্রিক : তপন বাগচী
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/02/08/photo-1518063604.jpg)
প্রতিদিন অমর একুশে গ্রন্থমেলায় স্টলে স্টলে ঘুরেন তপন বাগচী। একাধারে তিনি কবি, প্রাবন্ধিক, গীতিকার ও গবেষক; একই সঙ্গে বাংলা একাডেমিতে কাজ করছেন উপপরিচালক হিসেবে। বিভিন্ন স্টলে ঘুরতে ঘুরতেই বইমেলার নানা দিক নিয়ে কথা হলো তাঁর সঙ্গে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে জানতে চাইলে তপন বাগচী বলেন, ‘আমাদের প্রায় সব প্রকাশনা বইমেলাকেন্দ্রিক। জুন মাসে একটা পাণ্ডুলিপি পেলে প্রকাশকরা সেটি ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করেন, আবার ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পাণ্ডুলিপি পেলেও তা ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করেন। এর একটা ইতিবাচক দিক হলো এতে উৎসবমুখরতা থাকে। অন্যদিকে নেতিবাচক দিক হলো, বের হওয়া বইটিতে যত্নের ছাপ থাকে না।’
বইয়ের মান নিয়ে জানতে চাইলে তপন বাগচী বলেন, ‘প্রযুক্তি সহজ হয়ে যাওয়ার কারণে অনেক সময় লেখকরাই কম্পোজ করে প্রুফ দেখে প্রকাশকের কাছে দেন। আর প্রকাশকও তা হুবহু ছাপিয়ে দেন। দেখা যায় ছাপার পর প্রচুর ভুলত্রুটি থেকে যায়। এতে করে পেশাদারিত্ব থাকে না। একজন লেখক, যে সব সময় বানান বিষয়ে মনোযোগী হবেন, তা নাও হতে পারে; এটা দোষেরও কিছু নয়। লেখক কিংবা প্রকাশক, যাকেই দায়ী করি না কেন শেষমেশ মার খাচ্ছে কিন্তু পাঠকরা। তারা একটি অশুদ্ধ বই পাচ্ছে।’
তপন বাগচী বলেন, ‘হাজার হাজার বইয়ের মধ্যে পাঠক ভালো বই খুঁজে নিতে হিমশিম খায়। তখন তারা গণমাধ্যমের সহযোগিতা নেয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো, গণমাধ্যমে কেবল জনপ্রিয় লেখক-প্রকাশকদের প্রাধান্য দিয়ে প্রচারণা করেন। ফলে এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁরা ভালো লেখেন কিন্তু গণমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে তেমন প্রচারণা হয় না বলে পাঠক তাদের বই সম্বন্ধে জানতে পারে না।
প্রতিদিনই মেলায় মানুষের ভিড় বাড়ছে। কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে তপন বাগচী বলেন, ‘এটা ইতিবাচক। পাঠক যদি প্রতি স্টলে স্টলে ঘুরে বই নাড়াচাড়া করে দেখে, তবে অন্তত পাঁচটি বই তার পছন্দ হবেই বলে আমার বিশ্বাস। এর মধ্যে সে দুটি বই কিনবে। আর বাকিগুলো মেলায় না কিনলেও পরে ঠিকই কিনবে। তাই মেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখাকেও আমি ইতিবাচক মনে করি।’
শিশুরা যাতে অন্য স্টলে গিয়েও তাদের উপযোগী বই সংগ্রহ করতে পারে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের তিনি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান করেন তিনি।
শিশুদের উপযোগী বই কেমন বেরোচ্ছে—জানতে চাইলে তপন বাগচী বলেন, ‘লেখা তো লেখাই। শিশুদের জন্য আলাদা করে লেখার ব্যাপারটা আমাদের এখানে খুব বেশি নয়। যাঁরাই শিশুদের জন্য লিখেছেন, তাঁরা বড়দের জন্যও লিখেছেন। আসাদ চৌধুরী, হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, মুহম্মদ জাফর ইকবালসহ আরো বিখ্যাত লেখক ছোটদের জন্যও লিখেছেন, বড়দের জন্যও লিখেছেন। তবে শিশুদের জন্য, ওদের মন বুঝে লেখা, ওদের মতো করে সহজ-সরল ভাষায় লেখা অনেক কষ্টের।’
স্টল খুঁজে না পাওয়ার বিষয়ে অনেক পাঠকের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্টল খুঁজে পাওয়া তো খুবই সহজ বিষয়। বাংলা একাডেমি www.ba21bookfair.com নামে ওয়েবসাইট করেছে এবার। যে কেউ মোবাইল ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে ঢুকে তার কাঙ্ক্ষিত স্টল অতি সহজেই খুঁজে পেতে পারে।’
এ বছর মেলায় তপন বাগচী ও আলী আহাম্মদ খান আইয়োবের যৌথ সম্পাদনায় এসেছে ১২৭ বছর আগে প্রকাশিত নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের ‘শিশুরঞ্জন রামায়ণ’। বইটি বের করেছে শোভা প্রকাশ। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক গ্রন্থের রচয়িতা তপন বাগচীর বিভিন্ন বইয়ের পুনর্মুদ্রণ ও নতুন সংস্করণও পাওয়া যাবে মেলার বিভিন্ন স্টলে।