মেলা থেকে
মেলার বেশিরভাগ বই হারিয়ে যায় : মুনতাসীর মামুন
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/02/10/photo-1518255909.jpg)
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে দেখা মিলল। এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি কথা বলেন বইমেলা নিয়ে। মেলা আগের চেয়ে ভালো এবং গোছানো হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
প্রতিবছর অসংখ্য বই প্রকাশ ও বিকিকিনি হয় মেলাকে ঘিরে, সেই প্রসঙ্গে মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘বলা হয় মেলায় অনেক বিক্রি হয়ে থাকে। আমি ঠিক জানি না, কী পরিমাণ বিক্রি হয়। কেননা কোনো প্রকাশকই কোনো বই ৩০০ বা ৫০০ কপির বেশি ছাপে না। বিক্রির যে হিসেবটা দেওয়া হয় তাতে তো সব বই বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। আমার মনে হয় সে হিসাবে ভুল আছে।’
মেলায় প্রতিবছর অসংখ্য বই বের হলেও সব বই টিকে থাকে না বলেমুনতাসীর মামুন মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মেলায় প্রতি বছর প্রচুর বই আসে। কিন্তু বেশির ভাগ বই হারিয়ে যায়। কেন হারিয়ে যায় সেটা লেখকদেরও মনে রাখা উচিত। আমাদের শুধু বইয়ের সংখ্যা বাড়ালেই চলবে না, মানের দিকেও নজর দিতে হবে। তবে প্রতিবছরই মেলায় কিছু পড়ার মতো, কেনার মতো ভালো বই থাকে। সেগুলো খুঁজে খুঁজে দেখতে হবে।’’
তবে সার্বিকভাবে মেলা নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেও স্টল বিন্যাস নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মুনতাসীর মামুন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বইমেলা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে, গোছানো হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় স্টল বিন্যাসে আরো একটু নজর দিলে ভালো হতো। কিছু কিছু স্টল এমনভাবে করা হয়েছে যে, সেখানে যাওয়ার পথ পাইনি। সে স্টলগুলো এবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমপক্ষে ১০টি স্টল আছে যেগুলো এবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে একটু বিবেচনা করা উচিত ছিল।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে মেলা আয়োজন নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন মুনতাসীর মামুন। তিনি বলেন, ‘একটা কথা বলা উচিত বলে মনে করি। সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে বিভিন্ন মেলা বা জনসভার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। সরকারের উচিত বাণিজ্যমেলা, বইমেলা বা অন্যান্য মেলা বা রাজনৈতিক সভার জন্য আলাদা জায়গা ঠিক করা। এতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্যটা থাকে। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটা আদেশও আছে।’
বাংলা ভাষার সাহিত্য বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন মুনতাসীর মামুন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুধু ইংরেজি নয়, ফরাসি, স্প্যানিশ, আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় আমাদের সাহিত্য অনুবাদ হওয়া দরকার। আমাদের মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট করা হয়েছে। তার কোনো কার্যকলাপই আমাদের চোখে পড়ছে না। আমার তো মনে হয় ওখানে বই অনুবাদের জন্য একটা ভালো কেন্দ্র থাকা উচিত।’
মুনতাসীর মামুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ভাষা বিষয়ে আমাদের কোনো নীতি নেই, এমনকি বই বিষয়েও কোনো নীতি নেই যে, এটিকে শিল্প করা হবে কি না।’
বইয়ের রয়্যালিটিসহ বই বিষয়ক একটি সম্পূর্ণ নীতিমালা থাকা দরকার বলে মুনতাসীর মামুন মনে করেন। বইয়ের যাচাই-বাছাইয়ের ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপেরও নিন্দা জানান তিনি। বলেন, ‘এগুলো খুব বাজে ব্যাপার। পুলিশকে কে অধিকার দিয়েছে বই যাচাই-বাছাইয়ের? কেউ দেয়নি।’
অমর একুশে গ্রন্থমেলা দিনদিন আরো সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করেন মুনতাসীর মামুন। তাই মেলাকে আরো কীভাবে সুন্দর ও নান্দনিক করা যায় সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।