বেঙ্গল গ্যালারিতে শিল্পকর্মে প্রতিবাদ
প্রাচীন ঐতিহ্য, অস্থির রাজনীতি, অর্থনৈতিক আগ্রাসন, পেট্টোলবোমা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি সমসাময়িক প্রেক্ষাপটকেই ইদানীং ধরার চেষ্টা করছেন সময় সচেতন শিল্পীরা। ধানমণ্ডির বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে চলছে এমন শিল্পকর্মেরই একটি প্রদর্শনী। এতে প্রকাশ পেয়েছে তিন চিত্রশিল্পীর প্রতিবাদ।
আনিসুজ্জামান সোহেল, ফিরোজ মাহমুদ ও ইয়াসমিন জাহান নূপুরের ৯টি স্থাপনাকর্মসহ মোট ৩৬টি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী চলছে বেঙ্গল গ্যালারিতে। ‘দি প্যারাডোক্সিকাল নাও’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে তিন চিত্রশিল্পীই সৃষ্টি করেছেন স্বতন্ত্র সুর নিজেদের শিল্পকর্মে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রদশর্নী চলবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি খোলা থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।
আনিসুজ্জামান সোহেল নিজের চিত্রকর্ম সম্পর্কে বলেছেন, ‘মানুষের সন্ত্রাসে মানুষের মৃত্যু ও যন্ত্রণার চিৎকার। শুদ্ধ চিন্তা বা মূলজ মূল্যবোধ-কই আর আর পাওয়া যায় এই মিশ্র হিংস্র কালে? থাকলেও থাকবে হয়তো অভিধানে আর জাদুঘরে! পণ্য করে বিকিয়েই তো দিয়েছি সবাই সেসব-অন্য মানের দামে, অন্য মনের ভ্রমে!’
এ বিষয়ে চিত্রশিল্পী আনিসুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের খারাপ সময়ের চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। পথে পথে মানুষের হাহাকার, আর্তনাদ, ভয়ের পাশাপাশি প্রতিবাদী চিত্র তুলে ধরেছি।’
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ফিরোজ মাহমুদের আটটি খোদাইকর্ম। এতে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন ঔপনিবেশিক সময়ের নবাবদের দুর্ভাগ্য ও ইংরেজদের কাছে পরাজয়ের কাহিনী। একইসঙ্গে বাংলার মানুষের জীবনধারণের চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। বাংলার নবাবদের দুর্ভাগ্য ও স্বাধীনতা হারানোর বেদনা শিল্পীর চিন্তাকে প্রভাবিত করেছে। উজ্জ্বল রং এবং বিভিন্ন মোটিফের ব্যবহার তাঁর অঙ্কনকে করেছে ঋদ্ধ।
ইয়াসমিন জাহান নূপুর পৃথিবীর স্মৃতি এঁকেছেন। শিল্পী নিজের কাজ দিয়ে পৃথিবীর জন্মের বেদনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনার নির্মাণশৈলী, মোগল আমলের দরজা, জানালা, স্তম্ভ, গম্বুজ ইত্যাদি বিচিত্রভাবে তুলে এনেছেন নিজের শিল্পকর্মে।
নিজের চিত্রকর্ম সম্পর্কে নূপুর লিখেছেন, ‘সব মানুষ কি সমানভাবে সূর্যের আলো পায়? সূর্য তার আলো সবার ওপর সামনভাবে ফেলে না। সবকিছুর মধ্যে বেশ কিছু জিনিস উদ্ধার করার চেষ্টা করেছি।’
অঙ্কনরীতির সরলীকরণ, বিচিত্র প্রতীকের ব্যবহার, অতীতের অবগাহন, সত্যের ধাঁধাময় উপস্থিতি-নানাভাবেই এই তিন শিল্পীর চিন্তার জগত বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে।
হরতাল–অবরোধের কারণে সারাদিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম। তবে বিকেল ৫টার পর থেকে সন্ধ্যার সময় দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় বলে এনটিভি অনলাইনকে জানান গ্যালারির অফিস সহকারী আলমগীর হোসেন সুমন।
প্রদর্শনী দেখতে আসা এ এস এম হাসান মাহমুদ নামের এক দর্শনার্থী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শিল্পকর্মগুলো অনেক সুন্দর, বিশেষ করে মোগল আমল নিয়ে করা কাজগুলো। আর সমসাময়িক প্রেক্ষাপটভিত্তিক চিত্রগুলোরও প্রশংসা করেন তিনি।