শিল্পী ইকবালের ‘সামাজিক বন্ধনের বাইরে’
‘চারুকলায় পড়ার সময় চারুকলার উল্টো দিকে মোল্লা ভাইয়ের চায়ের দোকানের আশপাশে দেখতাম সাধু-সন্ন্যাসী মানুষদের। মোল্লা ভাইয়ের জীবনও অনেকটা সে রকম ছিল। তখন কোনো কিছু না ভেবেই ক্লাসওয়ার্ক ও নিজের স্টাডির জন্য তাঁদের ছবি আঁকতাম। এভাবেই আঁকতে আঁকতে তাঁদের নিয়ে কাজ করার আরো আগ্রহ তৈরি হলো। তাঁদের জানার জন্য কুমিল্লার বেলতুলি গেলাম। সেখানে তাঁদের নিয়ে প্রতিবছর একটা বিশাল উৎসব হয়। এভাবে দেখা ও জানার মধ্য দিয়ে পরে আমি তাঁদের জীবনযাত্রা নিয়ে কাজ করি।’ সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়ে আঁকা যাযাবর মুখ, আধ্যাত্মবাদের যাত্রা, কারামুক্ত জীবনসহ এই সিরিজের শিল্পকর্মগুলো নিয়ে কথা বলছিলেন শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল।
গ্যালারি কায়ায় ‘সামাজিক বন্ধনের বাইরে’ শিরোনামে ৩৪টি শিল্পকর্ম নিয়ে শুরু হয়েছে শিল্পী মোহাম্মদ ইকবালের একক চিত্র প্রদর্শনী। গত ২২ আগস্ট বিকেল ৬টায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী এবং ঢাকায় জাপান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবে।
এ প্রদর্শনীতে বিভিন্ন নামে তিনটি সিরিজের শিল্পকর্ম রয়েছে। অচেনা মুখ, অভিব্যক্তি ইত্যাদি শিরোনামের শিল্পকর্মগুলোতে মূর্ত-বিমূর্ততার আলো-ছায়ায় ফুটে উঠেছে অবহেলিত নারী ও শিশুর মুখ। এ ছাড়া রয়েছে অপরূপ রঙের বিন্যাস ও আলো-ছায়ার মায়াজালে আচ্ছাদিত ‘অন দ্য ওয়ে’ এবং ‘ডিসট্যান্স স্কি’ সিরিজের বিমূর্ত ধারার লান্ডস্কেপ। প্রতিটি সিরিজের কাজেই রয়েছে শিল্পীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।
শিল্পী রফিকুন নবী বলেন, ‘মোহাম্মদ ইকবাল আমার মনোযোগী ছাত্রদের মধ্যে একজন। তখন থেকেই দেখেছি, সে খুব কাজ ও সমাজ-সচেতন মানুষ। ছাত্রাবস্থা থেকেই সে বাউল-সন্ন্যাসীদের নিয়ে কাজ করত, সেই সমাজ-সচেতনতা তার ক্যানভাসে প্রতিফলিত হতো তখনই। সে ধারাবাহিকতা এখনো রয়েছে। ক্যানভাসে একজন শিল্পীর উদ্বেগ ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ফুটে উঠেছে।’
জাপান ও বাংলাদেশে শিল্পীর মোট ৩৮টি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়েছে। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ, ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে ৪৮টি যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
শিল্পী মোহাম্মদ ইকবাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ থেকে বিএফএ এবং এমএফএ শেষ করেন। পরে তিনি টোকিও ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফাইন আর্টস থেকে তৈলচিত্রের ওপর পিএইচডি করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রদর্শনীটি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা) সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।