মেলা
পাগল মেলা

পাগল মেলা। শুনে বিস্মিত হচ্ছেন? হ্যাঁ, পাগলদের নিয়েও যে মেলা হয়, তা নিশ্চয়ই অবাক বিষয়। কিন্তু এমনই এক ব্যতিত্রুমী মেলা সুনামগঞ্জের পাগল মেলা। তিন বছর ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু করে তিন দিনব্যাপী এ মেলা চলতে থাকে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের মাঠে চলে এই ভিন্নধর্মী আয়োজন। পাগল মেলার প্রধান আয়োজক উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও গ্রামের সিদ্দিক মিয়া। এলাকায় সিদ্দিক পাগল নামে পরিচিত তিনি।
তিন দিনের এই মেলাজুড়েই থাকে নানা কিসিমের পাগলদের ভিড়। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত আধা আর পুরো পাগল এসে জড়ো হয় এ মেলায়। পাগলদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জমে ওঠে এ মেলা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৌতূহলী লোকজন ছুটে আসে ব্যতিক্রমী এ মেলা দেখতে। রাষ্ট্র, সমাজ এবং পরিবার থেকে বিভিন্নভাবে অবহেলিত হওয়ায় জীবনের সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। সেইসঙ্গে সমাজে পাগলদের নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এই তিন দিন পাগলদের জন্য বিনামূল্যে নানা ধরনের খাবার-দাবার এবং বিনোদনের আয়োজন করাই হলো মেলার মূল উদ্দেশ্য। মেলায় খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি পাগলদের জন্য চলে গান-বাজনার আয়োজন। এ মেলার প্রধান এবং চমৎকার আকর্ষণ হলো মেলায় সবকিছুই পাগল ভঙ্গিতে করা হয়ে থাকে। মেলায় শুধু পাগলদেরই উপস্থিতি থাকে না, দাওয়াত করে আনা হয় পীর-ফকিরদেরও। মেলায় অংশ নেওয়া পাগল ও পীর-ফকিরদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নাম রয়েছে, তাঁরা হলেন—ইসহাক পাগল, বাহাদুর পাগল, সেন্টার পাগল, লালখাই পাগল, জুলকাস পাগল, বাসনি পাগল, হাসেম পাগল, অমর পাগল, তাজুল ইসলাম ভাণ্ডারি পাগল, গরমপীর আবদু সিদ্দিক পাগল, নূর মিয়া পাগলা, মজিবুর পাগলা, ফসর পাগলাসহ আরো অনেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুনামগঞ্জের পাগল মেলার পরিচিতি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে।