কবিতা
কান্দে ক্যানে মন
কও দেখি বুবু, অমন জোসনা আসে ক্যান আকাশের গায়
শীতের পাখি সব দলে দলে দক্ষিণে ক্যান যায়।
কী এমন দুঃখ তার, এত ক্যান অস্থির অয়
এক তিল তর না সয়
মাঝি নাই নাও নাই খালি জোনাকির ঢেউ শত শত
মুই ক্যান আসি ফির বসি থাকো
ট্রেন ফেল করা যাত্রীর মতো,
কিসে মোর টান এত?
মোর কি কোনো কাম নাই
কারো সাথে কথা নাই
ভালো-মন্দ, উনিশ-বিশ দেখবার কাঁয়ো নাই।
কিসে মোক টানি আনে যখন তখন
ক্যান ঘরের ভেতর সারাক্ষণ ভাঙে ছিঁড়ে মন?
শোন বুবু, কই তোক, সেদিনও আছিল জোসনা এমন
মোর যৈবতী মন,
কী যে খোঁজে, কী যে বোঝে, কী জানি কখন
ঘর থাকি বারায়া আসে
নদীর শীর্ণ ঢেউ ছাড়া কিছ্ছু নড়ে না চারপাশে।
সাইকেল কাঁধে, কে যেন পার হয় হাঁটুজল
ঘর হারা পরী বিবি কান্দি কান্দি ভিজায় আঁচল।
সুনসান মধুপুর, মুন্সিপাড়া, শেখের হাট, আর তখন হঠাৎ
কার হাত ছোঁয় মোর
পিঠ চুল কাঁধ, অকস্মাৎ
যেন কত জনমের তিয়াস নিয়া মোর শরীর জাগি ওঠে;
ধর্মের ধজা, বংশের মান
ভাঙি ছিঁড়ি পড়ি থাকে কোঠে!
কখন যে মাথা মোর নত হয়া পড়ে তার বুকের ওপর,
চোখ খুলি দেখো ভোর!
সেই সুখ দিনে দিনে বড় হয় দেহের ভিতর
কিছু চিহ্ন চোখে-মুখে, কিছু করে ভর দেহের ওপর।
কও দেখি বুবু, মানুষ এমন ক্যানে হয়
দেখিলে এখন মোক, অয় কথা ক্যানে না কয়
মুই যদি হাঁটো পুবে অয় হাঁটে উত্তরে
যখন সূর্য ওঠে, কী দিয়া ঢাকা যায় এমন সত্যরে।
যদি দুই মন এক হয়া ধরা দেয়, যদি সত্য হয়
চিকলীর ঢেউ, আজানের
সুর, ক্যান কয় ওরা কপাল পুড়িছে মোর বাজানের;
হাজার মুখের কথা যদি এক হয়, মানো কি না মানো, তাও…
সত্য হয়া ওঠে বড় মিথ্যাও।
খিলি পানে ঠোঁট লাল করি ঘোরে ফিরে অয়, অয় ফির হইল
কোঠেকার জমিদার?
মুই যদি পাপী হও, অয় কি নয় তার
সমান ভাগিদার?
মধুপুর, কাশিগঞ্জ, ফেচকিপাড়া দিয়া যখন গামছা
কান্ধে হন হন করি হাঁটি যায়
অর পায়ের আওয়াজ, নিঃশ্বাস হা-হুতাশ ঘুরিফিরি আসি
মোর বুক্ত আছাড় খায়।
সারাক্ষণ পূর্ণিমা চাঁদ হয়া ভাসে অর মুখ
মনে হয়, মোর মতো অভাগীর এই বুঝি বড় সুখ।
যেই নাম মোর ধ্যানজ্ঞান
জান দিয়া যাক ভালোবাসো মুই
খোদার নামের পর যার নাম নিয়া চলি ফিরি শুই;
সেও মুখ ফিরা থাকে, কথা না কয়
এও কি হয় বুবু,
এও কি হয়..