আকিরা কুরোসাওয়ার পেইন্টিং
জাপানের অতর চিত্রপরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া তরুণ বয়সে চেয়েছিলেন তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলবেন রঙের ভাষা অর্থাৎ চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নানা কারণে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি কুরোসাওয়ার। তবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে এসে তিনি যে দৃশ্যভাষা নির্মাণ করেছেন সেটা কিন্তু কম বিস্ময়কর নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তিনি নতুন ভাষাই নির্মাণ করেছেন রুপালি পর্দায়। অল্প বয়সে ক্যানভাসে ছবি আঁকতে পারেননি তাতে কী? বড় পর্দায় তিনি ঠিকই বড় শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আকিরা কুরোসাওয়া যখন এক, দুই করে একাধিক ছবি নির্মাণ করে ফেলেছেন তখন তিনি ক্যামেরায় দৃশ্য ধারণের আগে পুরো ফ্রেমটাই এঁকে নিতেন কাগজে, সেটা কখনো হতো ড্রইং, কখনো বা পেইন্টিং। এর ফলে শুটিং ইউনিটের লোকদের শটটি সম্পর্কে আগেভাগেই ধারণা দেওয়া যেত সহজেই। একই রকম অভ্যাস আমরা সত্যজিৎ রায়ের ক্ষেত্রেও দেখি। তাঁরা কিন্তু পরস্পরের কাজের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন এবং একে অপরের কাজের প্রশংসাও করতেন।
মহাকাব্যিক ‘কাগিমুশা’ নির্মাণের জন্য যখন অর্থকড়ি কী পরিমাণ লাগবে সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে তখন কয়েক শ পেইন্টিং আঁকতে হয় কুরোশাওয়াকে- অর্থ দেনেওয়ালাদের শুধু এটা বোঝানোর জন্য যে তিনি কী অদম্য ইচ্ছা পুষছেন এই ছবি বানানোর জন্য। ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, নিজের এই আত্মজীবনীমূলক বইতে কুরোসাওয়া এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘ভালো পেইন্টিং করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।’ তিনি লিখছেন, ‘আমার হাতের কাছে যা ছিল সেটাই আমি কাজে লাগিয়েছি।’ এই তরিকা তিনি জারি রাখেন জিদাইগেকি ঘরানার গল্প ‘র্যান’ ছবিতেও। জিদাইগেকির আক্ষরিক অর্থ পিরিয়ড ড্রামা অর্থাৎ একটি বিশেষ সময়কে ধরে নিয়ে কাজ করা। এই ঘরানায় সাধারণত জাপানের এদো আমলকে(১৬০৩-১৮৬৮ সাল) তুলে ধরা হয়। তবে এই আমলের আগে-পরের সময়কেও অনেকে জিদাইগেকি ধরনে অন্তর্ভুক্ত করেন। সেই সময়কার সামুরাই যোদ্ধা, কৃষক, কারুশিল্পী, সাধারণ মানুষদের তুলে ধরাই জিদাইগেকি ধারার মূল বৈশিষ্ট্য।
যাই হোক, কুরোসাওয়ার মতো জগদ্বিখ্যাত পরিচালক শয়ে শয়ে পেইন্টিং এঁকে চলেছেন আর স্টুডিওগুলো তাতে নড়েচড়ে বসবে না তা কি হয়? তারা বিষয়টি আমলে নিতে শুরু করে। কিন্তু এই যে এত দেরিতে চিত্রশিল্পী কুরোশাওয়াকে মানুষ আবিষ্কার করল সেটাকে তিনি তুলনা করেছেন স্বপ্নের সঙ্গে। আর তখন থেকেই নিজের একখানা চিত্রপ্রদর্শনী করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
পরে অবশ্য কুরোসাওয়ার চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী হয়েছে এবং সেটির আয়োজক ছিল একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স। তাঁর চিত্রকর্ম নিয়ে এখন একটি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি সেসব সংরক্ষণের কাজ হচ্ছে আন্তর্জালেও। ফ্লেবার ওয়্যার তেমনই একটি সাইট যেখানে সংরক্ষিত হয়েছে কুরোসাওয়ার কিছু পেইন্টিং ও সেই পেইন্টিঙের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু ফ্রেমের ছবি, এই সাইটে বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন আলিসন নাসতাসি, রচনার শিরোনাম: ‘আকিরা কুরোসাওয়া’স পেইন্টিং অ্যান্ড মুভি ফ্রেমস সাইড বাই সাইড’। বর্তমান লেখাটি সেটারই ভাবানুবাদ মাত্র।
অবশ্য এই নাতিদীর্ঘ রচনাকে- আকিরা কুরোসাওয়ার হাতে আঁকা পেইন্টিঙের সঙ্গে ক্যামেরায় আঁকা চলচ্চিত্রের ফ্রেম মিলিয়ে দেখার জন্য একটি মুখবন্ধও বলতে পারেন। চলুন উপরের গ্যালারি থেকে দেখে নেওয়া যাক কুরোসাওয়ার আঁকা পেইন্টিঙের কিছু নমুনা।