উদীচীর আয়োজনে ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রণী সৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং জীবনস্পর্শী প্রতিবাদী সাহিত্যধারার অন্যতম পুরোধা জহির রায়হান। কি চলচ্চিত্র কি কথাসাহিত্য, সবখানেই অসামান্য তাঁর কাজ, প্রতিভা। গতকাল শুক্রবার দেশের এই খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্রের প্রবাদ পুরুষের ৮১তম জন্মবার্ষিকীর দিনে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করেছিল ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’।
এই আয়োজনে তাঁর পরিচালিত চলচ্চিত্র, তাঁকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র আর তাঁর চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানের পরিবেশনা ও কথোপকথনে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় এই অসামান্য মেধাবী মানুষটিকে। ‘প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্যামেরা’—এ স্লোগানে উদীচীর ঢাকা মহানগর সংসদ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন।
এ উৎসবের উদ্বোধন করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন মুরাদ। এরপর আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন উদীচী সভাপতি কামাল লোহানী, সহসভাপতি শংকর সাঁওজাল, জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মশিউদ্দিন শাকের।
জহির রায়হানকে নিয়ে বক্তারা বলেন, তিনি যে দেশপ্রেমের আদর্শে উদ্বুব্ধ হয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সেই আদর্শকে বুকে ধারণ করেই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে হলে চলচ্চিত্র আন্দোলনকে নতুন করে গুছিয়ে তোলা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।
বক্তারা সার্বিক পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্র মাধ্যমের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সাধারণ মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রাম, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে চলচ্চিত্র মাধ্যমকে আরও বেশি বেশি করে কাজে লাগাতে হবে।
উদ্বোধনী পর্বের পর শুরু হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শন পর্ব। শুরুতেই প্রদর্শিত হয় জহির রায়হান নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। এরপর তারেক মাসুদ নির্মিত ‘রানওয়ে’ প্রদর্শিত হয়।
সেন্টু রায় নির্মিত জহির রায়হানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জহির রায়হান’ প্রদর্শনের পর ছিল ভারতীয় নির্মাতা সৌমিত্র দস্তিদার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘এ লেটার টু মাই ডটার’র প্রদর্শনী। সবশেষে প্রদর্শিত হয় কামার আহমাদ সাইমন নির্মিত আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘শুনতে কি পাও’।
এ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসের ন্যক্কারজনক বোমা হামলাগুলোর ইতিহাসভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র ‘ক্ষতচিহ্ন’ প্রদর্শিত হয়। এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছে উদীচী কেন্দ্রীয় চলচ্চিত্র ও চারুকলা বিভাগ।
দেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বিচ্ছিন্ন করে এ দেশকে একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সদা তৎপর উদীচী। গান, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তির পাশাপাশি উদীচী মনে করে, চলচ্চিত্র মাধ্যমকে এ লড়াইয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।
আর সেই লক্ষ্য থেকেই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং সুন্দরবন রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে ‘প্রতিরোধে প্রস্তুত ক্যামেরা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে উদীচী আয়োজন করে ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র উৎসব’। বর্তমান সময় এবং উৎসবের মেজাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এবারের উৎসবে প্রদর্শিত চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্বাচন করা হয়। উৎসবটি চলে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।