বয়স আপনাকে ঠিকই গ্রাস করবে : আল পাচিনো
সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের তালিকায় সবার আগে উঠে আসে আল পাচিনোর নাম। ‘গডফাদার’ ছবির ডন মাইকেল কর্লিয়নি কিংবা ‘স্কারফেস’ ছবির মবস্টার টনি মন্টানা অথবা ‘ডগ ডে আফটারনুন’ ছবির ব্যাংক ডাকাত-সব চরিত্রেই পাচিনোর তুলনা ছিলেন কেবল তিনি নিজেই। এই অসামান্য অভিনেতা কাজ করছেন এখনো। গত ২৫ এপ্রিল ছিল তাঁর ৭৪তম জন্মদিন। দ্য গার্ডিয়ানের সাথে নিজের জীবন আর কাজ নিয়ে লম্বা আলাপ করেছেন তিনি। পাচিনোর নিজের বয়ানে অনুলিখিত এই আত্মকথনটি তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধাস্বরূপ ভাষান্তর করা হয়েছে।
আমি বিপুল পরিচিতির মধ্যে থেকে কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, তা শিখে উঠেছি। আমি কোনো মুদি দোকান বা সাবওয়েতে যাইনি অনেকটা বছর। সন্তানদের জন্য আমার সাথে বাইরে বেরোনো খুব কষ্টকর ছিল। জনপ্রিয়তা এখন থেকে বছর বিশেক আগে অন্যরকম ছিল আর এখন যে এটা কী হয়েছে আমি একদমই বুঝি না। আমি যদি এমন একটা জায়গা আর সময়ে থাকতে পারতাম যেখানে আমায় কেউ চেনে না, তাহলে সেটা আমার জন্য হতো বিলাসিতা।
আমার কাজের বিষয়টা আসলে টাকা-পয়সার জন্য ছিল না। যখন বয়স কম ছিল, তখনই টাকা-পয়সা খরচ করার সময় ছিল। কলেজ থেকে বেরুবার পর আমি বেশ কিছুদিন বেকার ছিলাম। ও সময় একটা দোকানের সামনে রাতে ঘুমিয়েছি বেশ কিছুদিন। সে যাহোক, আমি কখনোই একেবারে বস্তুবাদী হয়ে উঠিনি। তবে ওটুকু বাদে আমি অবশ্য বস্তুবাদীই বলা চলে, কারণ আমার জীবনযাপনই আমাকে খরুচে বানিয়েছে।
কাজের বিষয়ে আমায় শিক্ষা দিয়েছিলেন দাদা জেমস জেরার্ডি। তিনি ছিলেন নির্মাণমিস্ত্রি- কাজ, যেকোনো ধরনের কাজই ছিল তাঁর জীবনের আনন্দ। আমি যা চাই, সেটাকে হাতের মুঠোয় আনার জন্যই বেড়ে উঠেছি। কাজের আনন্দই আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।
আমার ব্যাপারে শিক্ষকদের শেষ কথা, আমার একজন বাবার দরকার ছিল। আমি এক্কেবারে বিগড়ে যাওয়া টিনেজার ছিলাম না, তবে অনেকটা অমনই হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার যখন বয়স দুই, তখনই আমার মা-বাবার ডিভোর্স হয়ে যায়, আর তার পর থেকে তিনি আমার জীবনে আসনেনি কখনোই। আমি আমার সন্তানদের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা হতে দেব না। আমি ওদের দায়িত্বটা নিজের কাছে রাখতে চাই, সে জন্য আমার সময়টা দুই ভাগে ভাগ করে নিয়েছি।
সন্তানরা আমার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছে। আমার বাচ্চা তিনটের আগে আমি এলোমেলো চিন্তা করতাম, অনেক কিছুই বুঝতাম না। সবই ছিল অভিনয়কেন্দ্রিক। কিন্তু এখন ওদের জন্য বলা যায়, অভিনয় অনেক ছোট্ট একটা অধ্যায় কেবল।
আমার বন্ধুবান্ধবের অভাব নেই। আমরা জানি যে জীবন বা ক্যারিয়ার যেকোনো সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু জীবনে বন্ধুত্বের প্রয়োজনটা সব সময়ই আমি উপলব্ধি করেছি।
আমার জীবনের কষ্টকর দিক ছিল মাকে হারানো, রোজকে হারানো আর আমার দাদাকে-কয়েক বছরের ব্যবধানে তারা সবাই চলে গেছে। আমার বয়স তখন মোটে ২২, আর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুজন মানুষকে হারালাম। আমি একদম পড়ে যাচ্ছিলাম তখন। সত্তরের দশকটায় আমি হারিয়েই যাচ্ছিলাম, তবে তখনই মদ খাওয়া ছেড়ে দিই। একই সাথে, কাজে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি।
সামাজিক মাধ্যমের মূল্য আর গুরুত্ব, দুটোই বুঝি আমি। যদিও নিজের ক্ষেত্রে এটা ঠিক আমার মাথায় ঢোকে না। আমার একটা ফেসবুক পেজ আছে, ওতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ ‘লাইক’ দিয়ে রেখেছে; এর মানেটা আসলে কি? আমি ঠিক জানি না। তবে এই প্ল্যাটফর্মটা ভালো, কারণ এর মাধ্যমে নিজের কথাগুলো মানুষ সবাইকে জানাতে পারে।
মাইকেল কর্লিয়নি চরিত্রটি আমার জীবনে তখনো এবং এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, কঠিনতমও বটে! আমি তাকে (মাইকেল কর্লিয়নি) কখনোই একজন গ্যাংস্টার হিসেবে দেখিনি। আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম তার ক্ষমতাকে, যেটা ছিল তার জাদুকরি বৈশিষ্ট্য। তবে দুর্ভাগ্যবশত, স্টুডিও সেটা প্রথম দফায় বুঝতে পারেনি আর তারা আমাকে ছাঁটাই করার চিন্তা করছিল! তখন আমার ক্যারিয়ারের প্রথম দিককার কথা, মার্লোন ব্র্যান্ডোর সাথে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ছবি! একমাত্র ফ্রান্সিস (ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা) ছাড়া কেউই আমাকে ওই চরিত্রটায় উপযোগী মনে করেনি, চায়ওনি।
আমার পিতামহরা সিসিলির একটা এলাকা থেকে এসেছিলেন, সেটার নাম ছিল কর্লিয়নি! নিয়তি? হ্যাঁ, হতে পারে- আসলে এটা খুব অদ্ভুত। তবে তারপরে জীবনে অনেক চমক এসেছে, এসেছে অনেক মোড়।
মানুষজন মনে করে আমার আর রবার্ট ডি নিরোর মাঝে বুঝি দ্বন্দ্ব আছে। আমি ববিকে খুব ভালোমতন চিনি। সে আমার ভালো বন্ধু। আমি আর ও, দুজনেই প্রায় একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি। ওর মজা করতে করতে কাজ করাটা আমার খুবই দারুণ লাগে; একদম খাঁটি প্রতিভা যাকে বলে!
আমি জানি যে আমি আমার সেরায় পৌঁছেছি, তাই কাজ করে যাচ্ছি। যতক্ষণ শিল্পের জন্য প্যাশন রয়েছে, কাজ করে যান; কারণ বয়স একটা সময় ঠিকই আপনাকে গ্রাস করবে।