ঈদের আয়োজন
শঙ্খচূড় ইমামের ১০ কবিতা
ক্ষুধার্ত ছুরি
যেন ডুবে যাচ্ছ হেলেঞ্চা দলের সাথে
মৃতনদীর দিকে তোমার মেধাবী পৃষ্ঠা
আঙুলের আয়ুতে মাখছ রাত্রিবাতাসের টোপ...
তোমার ঘুম, ঘুমের বাজপাখি, মলাটে বাধা মনন
উড়ে উড়ে ফুটছে টেরাকোটা রঙে...
যত সব নিরুত্তাপ খসে পড়া জলের পালক
মেখে নিচ্ছে জলজ্যোৎস্না কাজল।
এই যে উঠোন, উঠোনে জেগে থাকা জ্যামিতিক বন্ধন
কেন তুলে দিচ্ছ মৌসুমী কাকের ঠোটে?
কোথায় রেখেছ আয়নাঘর?
আলোঅন্ধ মিশেল ছায়ায় গিলছ দারুচিনি উৎসব।
এসব দেখি না, দেখতে চাই না। তবু লুপ্ত চেতনার
খসড়া মেলে ধর ঈগলের ডানায়
নগ্ন রাত্রির দেহ বেয়ে বেয়ে চাঁদ নিভে গেলে
আমার ক্ষুধার্ত ছুরিটা খোঁজে মোমঘর
কেবলই হয়ে ওঠে অশ্বখুর...
কাগজী লেবুর পৃথিবী কেটে তুলে দিতে চায়
রক্তমদের হাড়
যা দেখে তোমার ছায়ারা গুনবে নৈঃশব্দ্যের আধুলি
প্রস্থান
এইসব বাকল থেকে উড়ে আসা উসকানি
খেয়ে গেছে আদর্শ বল্লম
মিইয়ে যাওয়া প্রান্তিক প্রলাপে
বিভ্রম ঝড় জেগেছে তাই—
তবু এখানেই জেগে থাকা, শেষ প্রস্থান
যদিও মুখোশে ভাঙি নিষেককাল
এই সাইকেল জ্বরে জ্বরে
মাটির দেরাজ থেকে
একদিন বেরিয়ে আসবে
প্রিয় কবুতর
ফ
সি
ল
হে জারুলপাতা, মেপে দ্যাখো বাকলের অজীর্ণতা। নুয়ে পড়ছ; তোমাদের পিঠের ঈষৎ ম্লান রং দিয়ে মেলে ধর প্রার্থনাপেখম।
জেনে রেখ, নিজস্ব নির্দেশও ফিরে আসে—
আ
ঙু
লে
সমবায় আরশলা
সমবায় আরশলা জিতলে এ দায় কার?
বরং বাথটাব থেকে তুলে নাও সাবানের আয়ু
আগুন লাগিয়ে আঙুল টিপে হাঁট
দেখবে বেরিয়ে আসছে সুচতুর শঙ্খসুর...
জলের গল্প গায়ে মেখে ডাঙ্গায় এসেছি বলে—
ভেব না ভুলে গেছি মাছের নীল চোখ
জানি, আমার উৎস তিমিদের গ্রাম
সময় শিখিয়েছে—
শেকড়-বাকড় ছেড়ে এই নোঙর ফেলার
যদিও এখানে ভন ভন লাটিমজীবন...
আমি সাহস করে বলে রাখলাম—
লাটিম লাটিম ভন ভন খেলে খেলে
বেগুন তলায় যে উৎসব সাজাবে ফ্যান্টাসি ব্যাঙদল
কালের ডানায় তাই তোমাদের সভ্যতা
উৎস চাও? তবে এসো আরশলার গল্প শিখি...
বসন্ত এক্সপ্রেস
ঘরে ঢুকে অদ্ভুত দুই টিকটিকি—
লেজ খসানো উৎসবে শৃঙ্খল ভাঙার পাঁয়তারা
এদিকে পূর্ণশস্যক্ষেতে বেহায়া এক ইঁদুর
স্বৈরাচারীকামে পুড়ে খুন করছে ধান-পাতা-দুধ
এসবই নাকি তাদের শিমুলসংসার, বিধান-বিলাপ...
হাটে-ঘাটে-মাঠে কিছু নিজস্ব আদর্শলিপি আওড়িয়েও
আয়না দেখায় বেকুব দর্শকদের
নিজেকে স্থির করে যে ঘড়ি গুনে দিচ্ছে— নীল সময়
সে জানে উজান বেয়ে আসা মাছের প্রকৃত ভূগোল
আমিও জানি— এইসব কেবল-ই বিধান!
হে হলুদলোভী প্রাণীরা, আমাকে বানাস না অশ্বখুর
একবার না, ক্ষেপে গেলে—
কালের আয়নায় লাথি মেরে ঢুকে যাব
তোদের প্রাপ্তবয়স্ক লাল খনিজে...
বিপন্ন দ্বৈরথ
শঙ্খ, আমন ক্ষেতের সিঁথি কেটে
উঠে গেছে জোড়া পা।
একটা ঘুঘু তা দেখে—
উড়তে উড়তে ছেড়ে গেছে বন
বাগানবণিক নিড়ানি তুলে
মুখ রেখেছে পশ্চিমে
তবু শঙ্খ, তোমার পা
ক্ষমা পাবে না পৃথিবীর কাছে।
পূর্ণ পাহাড়ে তাকাও—
কিংবা চিলের নিম্নগামী
ঠোটের দিকে—
নিজের সাথে কেমন বিপন্ন দ্বৈরথ!
বহনের বাণিজ্য ভেঙে
চিরদিন তারা দেখে যায় কফিনকাহন
সম্ভবত তুমি তাই করছ শঙ্খ
এবং ইঁদুর সভায় পান হচ্ছ
ম্যাজিকজলে
বিল পেরিয়ে স্টেশন
এরপর দেখা যায়—
মানুষের হাড় পোড়ানো চিমনি
যেখানে কুণ্ডলি পাকিয়ে উড়ে যাচ্ছে
সভ্যতার ইতিহাস
তোমাদের কারখানায় আজ
কি উৎপাদন হবে
দ্যাখ শঙ্খ, এই দুই হাত
রেখেছি ঊর্ধ্বগামী
নৈঃশব্দের মঞ্চ ভেঙে
গড়েছি লাল ইস্কুল
যেখানে এখন পাঠ বলে কিছু নেই
তবু, অসংখ্য ইঁদুর শস্য লোভে
কালো ইউনিফর্ম পরে
ঢুকে পড়ছে দিন-রাত
আর তুমি—
মা মা চিৎকার করে
লুটিয় পড়ছ ভূমিতে।
আমি জানি—
রাত নামলেই বুঁদ হয়ে যাও
এবং দেখতে থাক
বিল পেরিয়ে চলে যাচ্ছ
হাড় পোড়ানো চিমনিতে।
উৎপাদন শুরুর আগে
টিপসইয়ের আদলে যেখানে তুমি
পুশ করো ফোর টু জিরো
সেখানে নাক বরাবর ঝুলছে
তোমার আস্ত একটা লাশ!
শব্দটি
শব্দটি হেঁটে যাচ্ছে—
মুদ্রার দিকে কিংবা মুখে।
কখনো কখনো ঘাসফুলে
নদীর নাভী পেরিয়ে
একদিন গোলাপের দুধ চেখে দ্যাখে
তার গলা থেকে বেরিয়ে আসছে
রক্তের হাড়, গার্হস্থ্যজল।
তবু সে হেঁটেই যাবে
অদ্ভুদ এসবের দিকে—
সুন্দর
এই জেব্রাক্রসিং
স্থিরের ভেতরে বয়ে যায় ডেথ
সেখানে উগড়ে পড়া
জ্যোৎস্নালহরে
খেলে যাচ্ছে বেসামাল
কুকুরের চোখ
আহা! ওয়ান্ডারফুল! ওয়ান্ডারফুল!
পৃথিবী, ক্যারিঅন ওয়ান্ডারফুল!!
সত্য
তোমার জমা আছে খাদ
খাদের ভেতর থেকে
বেরিয়ে আসে অহম
যা পেপের রক্ত থেকেও উজ্জ্বল
অহম ভালোবেসেই
মাছেরা চিরকাল সাঁতরায়
জমা রাখে নতুন প্রহর
অদ্বিতীয়
অহর্নিশ দেখে যাচ্ছ—
পাখি ক্যাম্পাস আর
নাভিবিদ্যার শিক্ষক।
ক্যাম্পাসে শিক্ষক আঁচল ভাঙে
ঘুমিয়ে পড়ে
নতুবা পাখিতাপে জ্বর আসে।
আদতে আমরা যে নাভি চিনি
পৃথিবীতে তার কোনো শিক্ষক নেই।
আমার নাম
বাতাসে পাতা কুড়াবার গান ভেসে যায়
ইনসোমনিয়ার পথ ধরে দুটি চোখ
সোনালি ধান দেখে। সেইসব ধান
ইলিশের মৌসুমে কুয়াশা ঝরায়।
তখন শীতকালীন বাবলাবনের কথা
মনে পড়ে। আমার সহপাঠীরা
ইস্কুল ফাঁকি দিয়ে বহুদিন
বাবলাফুল কুড়িয়েছে
বাবলাফুল শিখিনি বলে—
আমার নাম রাখা হয়েছিল
চতুর সরীসৃপ
কবি পরিচিতি
শঙ্খচূড় ইমাম। গ্রাম চরগরবদী, উপজেলা দুমকী, জেলা পটুয়াখালী। পেশা সাংবাদিকতা।