ঈদের আয়োজন
জিয়াবুল ইবনের ১০ কবিতা
পুনরায় রাই
কানু-রাই মিলন হয় কাঠমালতি ঝোপে
কলিগুলো ফুটে যায়
ঝরে ফুল যায় যাক
ব্যাকুল মালতি মন
তার যে সময় যায়
কুলবতীর শ্যাম নাই
তারই কি সব দায়?
প্রকৃতির আকুল টানে লোকভয় ভুলে
পুনরায় রাই কানু প্রেমে
বাজার
ছিপি খুলতেই হয়
না হয় বোতলটা নিজেই বোমা
তলপেট টনটনে ব্যথায়
প্রায় যায় যায় হুঁশ, হাঁফ ছাড়ে
কোনো এক দেয়ালকে আড়াল করে
দেয়ালে সাঁটানো বিজ্ঞাপন-মেয়ে
খেয়ে নেয় চোখ, মন এবং
আরো কিছু অতিরিক্ত গরম
ভাঙে মন
মনের মানুষ তৃপ্তি খোঁজে
বাজারে আসে দীর্ঘায়ুর প্রোডাক্ট
শহীদ
পৃথিবীতে মানুষ মরে না কখনো—
এ কথা জেনে গেছি যখন, লাশগুলো
নিয়ে তখন আর কোনো কষ্ট নেই।
লাশগুলো আমি গুনে গুনে রাখি
পরম মমতায়। সন্তানেরা বড় হয়ে
স্মৃতিসৌধের বেদিতে দাঁড়িয়ে
জানতে চাইবে কতজন শহীদ ছিল
বিমোক্ষণ
একটা শ্বাস
খুব দীর্ঘ হয়ে চেপে বসেছিল
বুকপকেটের ভেতরে
একটা কবুতর
আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম
সাথে সাথেই
ফলে কষ্টের শ্বাসকষ্ট থেকে
আমার একটা জন্ম
তা তো কেবলই আমার নয়
পরীর নজর
কাশপারে পাতিমেঘ পইপই ওড়ে
উড়ে উড়ে চোখে বসে দুধসাদা পরী
পরী মানে ডানাঅলা, না পইখ না মানুষ
এপাড়াতে আসে রোজ, সুবহে রাতের তারা
তারা বলে, এই ছেলে চল যাবি?
আকাশের ওপারে সে আরেক আকাশ
সেখানে পরীর দেশ—বোন্নাগাছে বেলী
চম্পাগাছে জবা ধরে, বকুলে গোলাপ
এসব শুনে ভ্রূ বেঁকে চমকে ওঠে মা
সংশয়
প্রজাপতি নিভে তারার তারপিনে
ফিরছে ফ্রিকোয়েন্সি। তখন আমার
ব্যক্তিগত দাহ। সন্ধ্যা শেষে আমার
দিকে না তাকানো চাঁদ। রাত্রিজুড়ে
জল্পনা। বাড়ে আরো। তুমি নেবে কি
নেবে না। হাসপাতালের বেড থেকে
মেঝেতে পড়ে গিয়ে ভেঙে যাওয়া
বহুখণ্ডে আমার একখানা চুমো। সংশয়ের
আগুন রাত্রি জাগে কামারশালায়
রেসিপি
ঝালমুড়িওয়ালার কাছে
আর যেতে হয় না
খরচা করে খেতে হয় না
কৌটো উপুড় করা
সেনপাড়া মোড়ের ঝালমুড়ি
ইদানীং তুমি আমাদের
বিনা পারিশ্রমিকেই রেঁধে দিচ্ছ
ঝাল সম্পর্কের
ঝাল ঝাল রেসিপি
এ জার্নি বাই পোয়েম
চাষাঢ়া রেলস্টেশনে হাইওয়ে এসে দাঁড়িয়ে আছে
গাঢ় লিকারে চা খেতে খেতে প্রেরণা
মোবাইল নম্বর ঘেঁটে প্রতিটি দরজার কড়া নেড়েও
কোনো সাড়াশব্দ পেল না
রিংটোন ও ভায়াব্রেটিং অ্যালার্ট অফ করে ঘুমোচ্ছে
ভরদুপুর
কবিতা কোথায় থাকে সবাই তা জানলেও
এ জার্নি বাই পোয়েম রচনাটি কেহ-ই বুঝতে
আগ্রহী নয়
জালালউদ্দিন পীর
আমার মা জালালউদ্দিন পীরের মুরিদ। একবার পরীক্ষার আগে মা নিয়ে গেল তার দরবারে। ভেতরে শাদা আলখাল্লা পরা স্বাস্থ্যবান একজন বসে ছিলেন কাঠের টুলে। হাতের কাছে প্রায় আমার সমান লম্বা এক বেতের লাঠি। সুতানালি সাপের মতো লিকলিকে ওই লাঠিটা দেখে আমি বেশ ভড়কে যাই এবং পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া দিতে বলি। তিনি আমার কলমে দোয়া পড়ে দিলেন। যা দিয়ে লিখেই নাকি স্নাতকোত্তর আমি! বৈরাগী বাড়ির মাসিমাও বলেন সে কথা
উৎসব
স্বর্গের নজরে পড়ে একটা ঘুম আমার চোখে এসে বসলো। এইমাত্র আমি তার নৃত্য দেখতে দেখতে একটা শামর হরিণের ডাক শুনতে পেলাম। আমার দেহটি আরো পবিত্র, আরো হালকা হয়ে উঠলো। আমাকে ফুল-চন্দন দিয়ে সাজালো ওরা। অর্ঘ্য দিল আনন্দগীত গেয়ে। এভাবে, আমার জ্যান্ত শরীরের গোশত খেয়ে পশুকে বশে রাখার মন্ত্র শিখে নিলো একটা গোত্র। আর আমিও বেঁচে গিয়ে পশুহত্যাকে বলে দিলাম উৎসব। বছর বছর ধরে নানান আয়োজনে যা পালন করছো তোমরা, পৃথিবীর শিশুরা।
কবি পরিচিতি
জিয়াবুল ইবন। জন্ম ২০ নভেম্বর ১৯৮৫, শীতলক্ষ্যা যেখানে ধলেশ্বরীতে পড়েছে তার অল্প দূরে মদনগঞ্জের ফরাজিকান্দায়। মায়ের নাম আক্তার বানু, বাবা মোক্তার হোসেন। ২০০১ সালে স্কুল অতিক্রম করতে না করতেই স্থানীয় সাহিত্য সংগঠন সাহিত্য বিকাশ আন্দোলনের সঙ্গে পথচলা আর কবিতার চেষ্টা তখন থেকেই শুরু। কবিতার বই ‘কোনো বাইপাস নেই’, ২০১৬ সালের বইমেলায় বেহুলাবাংলা থেকে প্রকাশিত হয়। পেশা : শিক্ষকতা।