ঈদের আয়োজন
পলিয়ার ওয়াহিদের ১০ কবিতা
বনানী
রোদের আপন ছিলাম ভেবেই হাসি
এখন আবার ছায়া কেন ভালোবাসি!
চিরদিন ছায়াবাজ নরম অস্থির!
আপনাকে পর ভেবে বাঁধি না তো নীড়
অনুতাপ
জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তোমার গা ও গতর
ইশ যদি একবার শুধু ছুঁয়ে দেখি
গজলময় শরীরীপৃষ্ঠাগুলো সেকি!
তাপের কিরাত পাঠে রাখছে নজর
তোমার নাভিতে স্যাঁতসেঁতে চাষবাস
আরো গভীরে আছে আফিমের গম
কোমল কামের আগুনে হলাম ছাই
কত ডামাডোল ফেলে প্রস্তুত ছতর!
আমি সূর্যমুখী ফুল
আমি সূর্যমুখী ফুল
কারো কথায় পেছন ফিরে
ক্যান বা দেখবো ভুল
ভুলের পথে যারাই থাকুক
ধুতরো ফুলের দেশে
দেশপ্রেমে থাকবো কেবল
আমি ডুবে ভেসে!
গভীর নদীর ইলিশ হলাম
উজানে সঞ্চার
দ্যাখো—পথে পথে ছড়িয়েছে
ছায়া অন্ধকার!
তৃষ্ণার প্রশাখা
তাকে আমি রোজ রাতে চাই
এমনকি দিনে
জোছনার হাটে ভেজাতে এবং
রোদের হ্যাঙ্গারে তাকে শুকাতেও চাই
দিন দিন ভারী হয়ে পড়ছি
চাই তো হালকা হতে
সে কারো শিকারি চোখে বাঁধা
তৃষ্ণার ফুলেল শাখা নিয়ে সে পুড়ছে
তবু
তার তৃষ্ণাময় ডানাগুলো আমাকে ঝাপ্টাই!
পলিয়ার
জামকালো শরীর আমার আজতক
তোমাদের সামাজিক কয়লায় জ্বলে—
জ্বলে—শুধু দাঁত মাজা কাজে ব্যবহৃত
হতে পারি। যেন সকলেই হয়ে উঠে—
পরিষ্কার! সকালের নিহেরের মতো!
চালধোয়া পানি যেন—স্মৃতি হয়ে গড়ে
আতপচাইল হৃদয় আমার সিদ্ধিতে অমর!
একা
আজ থেকে একা হয়ে যেতে চাই
যেতে চাই দূরে কোথাও
অকারণে—যুক্তিহীন
কোনো সবুজের কোলে
কোনো গোশতের ঘ্রাণে
তবু একা হয়ে যেতে চাই..
একাই—শুধুই একা
বাতাসের ঘরে ঘরে
মাকড়সার জালের মতো
নিবিড় কোমল সুতো
বুনে বুনে হাজারও একার মাঝে—একা
সূর্যের মতোন একা—
কোনো আপত্তির লেজ কোনোদিন
থাকবে না আর…
কণ্ঠপূর্ণ গান
একবার আমি টিয়েপাখি হয়ে—একটা স্বাধীন সবুজ বনেদি বনের ভেতর ঢুকে পড়ি। সেখানে বাস করত কিছু হুতোম পেঁচা। আমি ছিলাম মুক্তপ্রাণ এক। ভালোবাসতাম উদারতাপূর্ণ গান। হুতোমপেঁচা শুনল—টিয়া পাখির দিন দিন বনে সবুজ মনন ও লালাভ ঠোঁটের গানে বিমোহিত সবাই। প্রতিহিংসায় পেঁচা গোষ্ঠীরা অভিযোগ করল—টিয়া নাকি ফলমূলে মগ্ন! বনস্পতি টিয়াকে দেখে বলল—ওমা! এ তো সবুজের রানী।
প্রগতির ধূপ
চিৎকার করে প্রতিবাদ করতে চাইনি
কারণ বাতাসের সাথে বিরোধ করে—তুমি টিকবে না।
তুমি তো অন্ধ তাই সূর্যের সাথেও তুমি বেমানান
কারণ আলো ছাড়া কাউকে আমি বন্ধু মনে করিনি কখনো!
যদিও আকাশের পাণ্ডুলিপিতে
জোছনা গ্রহণ করাই ছিল আমার নেশা!
শোনো নিমের রসে ঢুবানো ছিল আমার শিশুকাল—
হরীতকীর মতো কষ্ট আমার আর্থিক জীবন!
যদিও মধুময় ছিল আমার সবগুলো প্রেমিকা
তাই নির্জনতার খাতায় লিখেছি—মোরগফুলোর লালাভ অহংকার
আর সবুজ কলমি লতায় দোল খাবে আমার প্রতিবাদ!
তুমি তো ঐচ্ছুক মাত্র!
আমার জন্মের সময় পৃথিবী ছিল—বারুদময়
যেকোনো বিধ্বংসী পরিস্থিতি তুড়ি মেরে
কোমরে গুঁজে নিয়েছি আমি
কারণ নিজেকে চিনেছি—সেই বালকে
আমার বিশ্বাস প্রভুর মতো উদার,
স্বচ্ছ এবং সংকীর্ণহীন আমার হৃদয়!
আমি মাছি এবং পিঁপড়েকে ভালোবাসি
বিড়ালের মৃদু নরম পায়ের মতো
যার থাবা থেকে মুক্তি পাবার কোনো সুযোগ নেই
হে মুখোশধারী ভণ্ড!
তোমাদের পোশাকী চেতনাকে আমি ঘৃণা করি
কারণ আমার আঁতুরঘরের কর্পূরে ছিল প্রগতির ধূপ।
কপোতমিথুন
প্রেমিকা বাছাই পর্বে
বরাবরই আমার
পছন্দ বয়সী নারী!
কারণ তাদের ভেতরে একই
সাথে মিলে যায়
মা এবং প্রেমিকার আদর!
নরমাল স্যালাইন
(হায়দার ভাই ও আবু হুরায়রা রায়হানকে)
নিজেকে রক্ষার জন্য যে মেধা-মনন
মাথার ভেতরে পুঞ্জীভূত তা কী?
তোমাকে বাঁচাতে পারে?
খুবই প্রয়োজনীয় শ্বাস ও প্রশ্বাস
যা তোমাকে আয়ু দান করে
সেটাও কি মুখ্য কিছু?
দৃষ্টির কথাও বাদ দেওয়া চলবে না
নান্দনিক দৃশ্যগুলো জীবন্ত করে সে
তবুও সকল নয়!
অসুস্থ স্বদেশ—কিংবা প্রিয়তরতমা
শুশ্রূষা খুবই দরকার
আমাকে করুন পান—
জীবনের জন্য অমূল্য জীবন
আমি তোমাদের নরমাল স্যালাইন!
হতে চাই লবণ জলের মতো
জীবনে সত্তর গুণ?
কবি পরিচিতি
পলিয়ার ওয়াহিদ। জন্ম : ২৬ ফাল্গুন, ১৩৯১ বাংলা। জন্মস্থান : পাঁজিয়া, কেশবপুর, যশোর। পেশা : সহসম্পাদক, যায়যায়দিন, ঢাকা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পৃথিবী পাপের পালকি-২০১৫, ম প্রকাশন, মহাখালী, ঢাকা। সিদ্ধ ধানের ওম-২০১৬, দোয়েল প্রকাশনী, মালিবাগ, ঢাকা। হাওয়া আবৃত্তি-২০১৬, চিরকুট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।