সিনেমায় ধর্ম ও অধর্ম
ধর্ম তা যত ঐশ্বরিকই হোক, মানুষের হাতে পড়ে তা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ নেয়। ফিল্মি দুনিয়াতেও নানান উদ্দেশ্যে একে ব্যবহার করা হয়। এই ব্যবহারেরও রাজনীতি থাকে। সিনেমায় ধর্মের উপস্থাপনকে নিয়ে এই লেখাটি। এতে ধুম-৩ আর পিকে চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গই ঘুরেফিরে আসবে যদিও ধুম-৩ ছবিতে ধর্ম সরাসরি আসেনি। পিকেতে এসেছে।
১.
পিকে ছবিতে ধর্মই কাহিনীর ভরকেন্দ্র। কাহিনী বর্ণনার গতানুগতিক ধারায় সেটআপের পরে থাকে সংঘাত। এই মুভিতে সংঘাতটা পিকে নামক এক ভিনগ্রহবাসী মানুষের সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মের মোল্লা, পুরোহিতদের। পরিণতিতে যুক্তিবাদী পিকের জয় হয়। হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৃষ্ট রং নাম্বার পিকে উন্মোচিত করলে, একটি প্রেমকে আমরা পুনরুদ্ধার হতে দেখব।
ধুম-৩ এ কাহিনীটি গড়ে উঠেছে একটি সার্কাসকে কেন্দ্র করে। ইকবাল হারুন খান নামে একজন শিকাগোতে গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস নামে দল চালায়। দলটি একটি ব্যাংকের কাছে ঋণগ্রস্ত। শেষবারের মতো বোঝাবার জন্য ব্যাংকওয়ালাদের সামনে ইকবাল ও তার দল সার্কাস দেখায়। ব্যাংকের অন্য দুই কর্মকর্তা সন্তুষ্ট হলেও প্রধান কর্তা সার্কাস বন্ধ করে দেয় এবং জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করে। ইকবাল মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করে। ধুম ৩-এর প্রথম সংঘাতটা ব্যাংকের সাথে একটি সার্কাস দলের। সুনির্দিষ্ট করে বললে ব্যাংকের সাথে ইকবাল খানের ছেলে সাহির খানের। এর পরিণতি হলো সাহির খানের ব্যাংক ডাকাতি। দ্বিতীয় সংঘাতটা হলো পুলিশের সাথে ডাকাত সাহির খানের। এর পরিণতি হলো আত্মহত্যা।
ধুম ৩-এ আমরা বেশ কয়েকবার শুনব 'বান্দা হে হাম উসকে হাম পে কিস কা জোর/ উম্মিদো কো সুরাজ নিকলে চারো অর/ ইরাদে হে ফালাদি হিম্মাতি হার কদম/ আপনা হাতো কিসমত লিখনে আজ চলে হে হাম'। প্রথমবার ব্যাংকওয়ালাদের সামনে সার্কাস প্রদর্শনের আগে ইকবাল ও তার ছেলে। শেষবার দুই ভাই সাহের এবং সামার যখন ড্যামের ওপর থেকে লাফ দেয় তখন। এখানে ঈশ্বর বা আল্লাহ বা ভগবান ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির ভয় থেকে মুক্ত করে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
২.
এডওয়ার্ড সাইদের একটি লেখা আছে Traveling Theory নামে। এই লেখায় উনি দেখাতে চেয়েছেন কীভাবে কোন ধারণা বা দর্শন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গেলে সেটির পরিবর্তন হয়। ধর্মও একটি ধারণা বা দর্শন। ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। আরব ভূখণ্ড থেকে কিছু দূরে না যেতেই ইরানে ইসলাম মূল ভূখণ্ড থেকে ভিন্ন হয়ে গেছে। আরেকটু দূরে আগ্রা-দিল্লিতে তার আরেক রূপ। বাংলাদেশে তার আরেক রকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বর্তমানে বাংলাদেশের ইসলামকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক, কেতাবি ও রাজনৈতিক ইসলাম; দুই, দেশজ ইসলাম। এডওয়ার্ড সাইদের তত্ত্বানুসারে দেশজ ইসলাম আরব ভূখণ্ড থেকে ভ্রমণ করে এ অঞ্চলে আসার পর স্থানীয় নানা উপাদান এর সাথে যুক্ত হয়েছে। তবে ঊনিশ শতকে ইসলামি সংস্কার বাংলাদেশের ইসলামকে আরব ভূখণ্ডের ইসলামের মতো করে গড়তে চেয়েছে। এই সংস্কার আন্দোলনের চেয়েও গত কয়েক দশকে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ইসলামকে আরব ভূখণ্ডের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। তা ছাড়া বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তি শুধু পশ্চিমা সংস্কৃতিকে এ দেশে সহজলভ্য করেনি, করেছে 'মূল' ইসলামকেও।
ওয়ার অন টেররের নামে পশ্চিমারা যখন ইসলামের একটি অংশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, সেই অংশটিও নিজেদের প্রতিরক্ষা ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য সারা পৃথিবীতে, বিশেষত মুসলমান-অধ্যুষিত দেশগুলোতে নিজেদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করেছে। এর ফলেও রাজনৈতিক ও কেতাবি ইসলামের প্রসার ঘটেছে।
এ দেশে পীর নানা অসাধ্য সাধনে সক্ষম। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় এসব আসলে ভুয়া। অবশ্য এ দেশে ইরানি সুফিবাদের এক অপভ্রংশ রূপ দেখা যায়। প্রকৃত অর্থে সুফিবাদ আত্মস্থ করতে পেরেছেন কেবল সাঁইজি লালন ফকির। আর বাদবাকি সব পীরপূজা। ‘অদৃশ্য খোদার চাইতে দৃশ্যমান মুর্শিদ ভক্তিবাদী মুসলমানের কাছে অধিক আরাধ্য। আজকের বাংলাদেশেও অজস্র মাজারের অস্তিত্ব ও পীরপূজার রীতি সুফিবাদের প্রভাবকেই স্পষ্ট করে তোলে।’ (হক ও ভৌমিক ২০১৪ : ২৭) পীরপূজা আর সুফিবাদ যে এক চিজ না তা বোধহয় লেখকদ্বয় ভুলে গেছেন।
ধুম-৩ মুভিতে অবশ্য অদৃশ্য খোদাই ব্যক্তির অনুপ্রেরণার উৎস। অবশ্য এই খোদা ব্যক্তি বা দুনিয়ায় সারাক্ষণ খবরদারি করেন না। অন্যদিকে পিকে মুভিতে খোদাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক, যে খোদা সারা জাহান বানিয়েছে; দুই, যে খোদাকে ধর্মব্যবসায়ীরা বানিয়েছে। পিকে আমাদের প্রথম ধরনের খোদার ওপর ভরসা রাখতে বলেছে। এই খোদার রক্ষার জন্য ধর্মে-ধর্মে ভেদাভেদ বা হানাহানির প্রয়োজন পড়ে না। পিকের খোদা বা ভগবান বিশুদ্ধ একেশ্ববাদের সাথে মিলে যায়। শুদ্ধবাদী বা 'মূল' ইসলামের খোদা আর পিকের খোদা একই বলে মনে হয়।
‘ফরায়েজি ও একই ধাঁচের কয়েকটি আন্দোলন বঙ্গে খাঁটি ইসলামের ধারণার জন্ম দেয় ও প্রসার লাভ করে এবং লোকধর্মপ্রভাবিত বঙ্গীয় ইসলাম হুমকির মুখে পড়ে।’ (হক ও ভৌমিক ২০১৪: ২৩) পাকিস্তান হওয়ার পর পূর্ববঙ্গে নিশ্চিতভাবে সেই ধারা আরো তীব্র গতিতে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সে ধারা ক্ষীণ হয়ে যায়। সে জন্য এখনো সেখানে ঝার-ফুঁক-তাবিজ-কবজকে ইসলাম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 'অরুন্ধতী' (২০১৪) মুভিতে ইসলামের এই ধারাকেই তুলে ধরা হয়েছে। মনে রাখা দরকার বাংলা 'অরুন্ধতী' তেলেগু 'অরুন্ধতী' (২০০৯) এর রিমেক। দুটোর মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য। ২০১৪ সালের বাংলা 'অরুন্ধতী'তে বাবা ফকিরচাঁদ পীর-দরবেশ। প্রেতাত্মাকে মানুষের দেহছাড়া করে সুস্থ করতে তার জুড়ি নেই। এসবের বিরুদ্ধেই তো হাজি শরিয়তুল্লাহ আন্দোলন করেছিলেন। পিকের আন্দোলনও তো এরই বিরুদ্ধে। অবশ্য ফকিরচাঁদের মধ্যে ধর্মব্যবসা নেই। মানবতাবোধ আছে। আছে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি। কিন্তু যেনতেনভাবে সম্প্রীতি হিন্দু-মুসলমানের স্থায়ী সুসম্পর্ক তৈরি করতে পারে না।
৩.
পিকে মুভিতে OMG- Oh My God (২০১২) মুভির চেয়েও বলিষ্ঠভাবে ধর্মের সমালোচনা করা হয়েছে। অবশ্য এও বলা হয়েছে, পিকে ধর্ম নয় ধর্মের নামে ফন্দি-ফিকিরের বিরুদ্ধে।
এক টিভি চ্যানেলের কর্তা চেরি বাজওয়া পুঁজিবাদের গুণমুগ্ধ। আলোকিত বাজওয়া একসময় ধর্মের বিরুদ্ধে তলোয়ার চালিয়েছে। কিন্তু ধর্মব্যবসায়ীদের ত্রিশূল তার পশ্চাতদেশে স্থায়ী চিহ্ন স্থাপন করেছে। সাংবাদিক জজ্ঞু যখন পিকের 'লাপাতা' লিফলেটের ওপর নিউজ করতে চায়, তখন ঘর পোড়া গরু বাজওয়া জবাব দেয়- ''ভগবান কা খোঁজনা, দ্যাটস রিলিজিওন। ভগবান কা মিল যানা, দ্যাটস নিউজ। You know the company policy. No news on religion and no news on God.'' চুপসে যাওয়া বাজওয়া পরে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে। ধর্মওয়ালাদের বিরুদ্ধে সে ও তার টিভি চ্যানেল যুক্তিবাদী পিকের সহযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়।
পুঁজিবাদী বাজওয়া বাস্তববাদী। ধর্মব্যবসায়ীদের বিরাট বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন পেরে ওঠে না, তখন তাদের এড়িয়ে যায়, ঘাটাতে যায় না। তবে যখন শক্তি সঞ্চয় করে তখন ফিরে এসে আঘাত করে। আমরা কি এও বলতে পারি যে, দরকার হলে পুঁজির স্বার্থে তারা ধর্মের ব্যবহার করবে?
এই উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে। সেক্যুলার জিন্নাহর হঠাৎ মুসলমান পরিচয় বড় হয়ে উঠেছিল এই কারণে যে, অখণ্ড ভারতের মধ্যে মুসলিম স্বল্প বা মাঝারি পুঁজির স্বার্থরক্ষা করা সম্ভব হচ্ছিল না। বঙ্গভঙ্গ রদ করে ব্রাহ্মণদের হাতে পুঁজি ও প্রতিপত্তি একচ্ছত্রভাবে গচ্ছিত রাখায় বাঙালি মুসলমানও বিভেদের পথে হেঁটেছিল। একই পুঁজির স্বার্থে পশ্চিমবঙ্গের দেব এবং গং দুই বাংলাকে এক করে দেওয়ার বায়না ধরছে।
মুসলিমদের বিচ্ছিন্নতাবাদের বিপরীতে ব্রাহ্মণদের অখণ্ড ভারতের তত্ত্বও পুঁজির স্বার্থেই রচিত। যেহেতু ব্রাহ্মণরা নানা কারণে ইংরেজি শিক্ষায় আগে আসে। এভাবে শিক্ষা থেকে চাকরি, চাকরি থেকে ব্যবসা আর জমিদারি থেকে যে উদ্বৃত্ত পাওয়া গেল, তা-ই পুঞ্জিত করে আদি পুঞ্জিভবনের (primitive accumulation) সৃষ্টি হয়। এভাবে ব্রাহ্মণরা পুঁজি সংগ্রহে যতটা আগায়, অন্যান্য বর্ণ বা ধর্মের লোকেরা ততটা আগাতে পারে না। সুতরাং ভারত অখণ্ড থাকলে যারা ইতিমধ্যে পুঁজিবাদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তাদের প্রসারই ঘটবে, ঘাটতি নয়। এটা ঠিক যে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বে উভয় সম্প্রদায়ের উচ্চবর্গ নিম্নবর্গকে ধর্মের নানা বুলি দিয়ে সংগঠিত করেছিল।
ইউরোপে আলোকিত পুঁজিবাদ যেভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে জেহাদ করেছিল তা কারও কারও মতে এযুগে আর সম্ভব না। তাদের মত, এই যুগে পুঁজিবাদী আধুনিকতা ধর্মের সমালোচনা করে না। বরং এর সাথে এক ধরনের আপোস করে চলে। এর বিপরীতে আমরা কি পিকে মুভিটিকে দাঁড় করাতে পারি?
আপনারা নিশ্চয় জানেন, মোদি ক্ষমতায় আসে ২০১৪ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে, আর পিকে মুক্তি পায় ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে। মোদির বিজয়কে কেউ কেউ বলে থাকে তাঁর উন্নয়নের মডেলের বিজয়, স্বচ্ছ রাজনীতির বিজয়; তাঁর হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির নয়। এ বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দেখানো যেতে পারে, পিকে এ যাবতকালে ভারতীয় সিনেমায় সবচেয়ে ব্যবসাসফল মুভি। তবে দিল্লিতে আম আদমি পার্টির বিজয় বিজেপির জনপ্রিয়তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিজেপির বিপুল বিজয় আর আম আদমি পার্টির উত্থান মূলত কংগ্রেসের দ্বিতীয় মেয়াদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া।
অন্যদিকে, ধুম-৩ মুভিতে সাহির খানের ব্যক্তিগত লড়াই ব্যাংক অর্থাৎ ফিন্যান্স ক্যাপিটালিজমের নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে সে খোদা ছাড়া আর কাউকে পরোয়া করে না। নিজের হাতে নিজের ভাগ্য গড়ে খোদার নামেই।
সাহির খান কমপক্ষে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্ত মূলত পুঁজিবাদের রক্ষাকবজ। তবে পুঁজিবাদ সবসময় মধ্যবিত্তের রক্ষাকবজ হয় না। তাই মধ্যবিত্তের কেউ কেউ কখনো কখনো পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারে। সুতরাং ধুম-৩ দেখে আমাদের মনে করার দরকার নেই যে এটি পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে।
৪.
ফরাসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক আলবের কামুর মত যদি মেনে নিই, তাহলে বলতে হয়, পৃথিবীটা এবসার্ড। অর্থাৎ আমরা কখনোই সম্পূর্ণ সত্যে পৌঁছাব না, তাই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আত্মহত্যা করব কি না। কামু আত্মহত্যা করতে চায়নি, সে বিদ্রোহ করতে চেয়েছে।বিদ্রোহে জীবনের অর্থ খুঁজতে চেয়েছে। হিরোইজম প্রদর্শনেও কেউ জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে পারে। যেমনটা ধুম ৩-এ ঘটেছে।
ইকবাল খানের কাছে সার্কাস ছিল জীবনের অর্থ। সার্কাস করা যখন আর সম্ভব হয় না, তখন সে অর্থহীন জীবনকে শেষ করে দেয়। সে খোদার বান্দা, তাই কোনো ব্যাংকারের কাছে নিজের বা ছেলের জীবন ভিক্ষা প্রার্থনাকে অপমানজনক মনে করে। এর চেয়ে বরং আত্মহত্যাকেই শ্রেয় মনে হয় তার কাছে। সে নিজের হাতে নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করার সম্মান পেতে চায়।
সত্যই যদি জীবনের সত্য বা অর্থ না থাকে। তবে সেখানে যে কেউ জীবনযাপনের যেকোনো অর্থ বেছে নিতে পারে। কেউ 'মালাং মালাং দম ইশকে ইশকে হে মালাং মেরা ' গানে বুদ হয়ে কিংবা Love is a waste of time' বলেও প্রেমে পড়ে পড়ে রাবীন্দ্রিক জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। অথবা ধার্মিক হয়ে ধর্মপালন করে কাটিয়ে দিতে পারে।
একদিকে কোনো কোনো ধার্মিক আর অন্যদিকে কোনো কোনো বুর্জোয়া তাদের জীবনযাপনকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায়। সমস্যার শুরু এখানেই। অবশ্য কেউ যদি দার্শনিক নিটশের মতো মদ, মসিহ আর মেয়ে মানুষকে সুপার হিউম্যান হওয়ার পথে বাধা মনে করে। তবে এগুলো বর্জন করে কি সে অতিশয় নীরস জীবনযাপন করে? বেশির ভাগের কাছে এ জীবন নিরস হতে বাধ্য। অবশ্য এই বেশির ভাগের দলে নিটশে ভিড়তে চাননি। তবে এও অনেকগুলো পথের মধ্যে একটি পথ মাত্র। তা ছাড়া সবাই যে এ পথে চলতে পারবে নিটশে তা মনে করতেন না। এই যেমন কেউ একজন কিছু সিনেমা দেখে দেখে জীবনে বুদ হয়ে থাকতে পারে। সিনেমা থেকে এবং এখান-সেখান থেকে কল্পনা ধার নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। একদিন সে মারা যাবে। ব্যস, শেষ!
অনেকেই হয়তো Hugo (২০১১) সিনেমায় জর্জ মেলিয়াসের আহ্বান উপেক্ষা করতে পারবে না। 'My friends. I address you all, tonight, as you truly are- wizards, mermaids, travelers, adventurers, magicians. Come and dream with me.'' আমরা আসলে স্বপ্নে বাস করি। জাদুবাস্তবতাই আসল বাস্তবতা।
জীবনে পরম সত্য যখন অধরা, মনের মানুষের সন্ধান যখন মেলে না, তখন আমরা কেউ ধার্মিক, কেউ নাস্তিক, কেউ প্রেমিক, কেউ নিটশের মতো অপ্রেমিক। একেক জনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন একেক রকম।
৬.
পিকের যুক্তি ধর্মের নামে কুসংস্কারকে আক্রমণ করে। আর ধুম-৩ খোদার প্রতি আস্থা শেখায় প্রতিকূল পরিস্থিতে সাহস না হারাতে। বাংলাদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল ইদানীং গোঁড়া ধার্মিক আর গোঁড়া নাস্তিক এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ‘হয় তুমি আমার দলে, না হয় তুমি আমার শত্রু' বুশের এই মতবাদের প্রতিধ্বনি আমরা দুই শিবিরেই পাচ্ছি। এই প্রতিধ্বনি আশঙ্কাজনক। এই দুই শিবিরের বাইরে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সিনেমায় ধর্মকে সৃজনশীল উপায়ে উপস্থাপন করা উচিত।
দোহাই
হক, ফাহমিদুল ও ভৌমিক, প্রণব (২০১৪), তারেক মাসুদ জাতীয়তাবাদ ও চলচ্চিত্র, ঢাকা : আগামী প্রকাশনী