ভিনিতার নদীর গল্প
নদীমাতৃক বাংলার সৌন্দর্যকে তুলে ধরতে সাম্প্রতিক সময়ে আঁকা ৩৬টি চিত্রকর্ম এবং চিত্রায়িত অবজেক্ট নিয়ে ১৬ মে বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে শুরু হয়েছে ‘রিভার স্টোরিস’ শিরোনামে শিল্পী ভিনিতা করিমের একক প্রদর্শনী। যৌথভাবে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ এবং শিল্পী রফিকুন নবী।
ভিনিতার চিত্রভাষা অনেক সাবলীল, আলংকারিক আর রয়েছে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। ক্যানভাসে শিল্পীর মনোনিবেশ স্পষ্ট বোঝা যায় নিজস্ব কৌশলের অঙ্কনরীতি দেখলেই। তিনি শহুরে নিসর্গের বিমূর্তায়ন ঘটান নানা রঙে, রেখার আঁচরে, ফোঁটায় আর বুননে। বিশাল বড় ক্যানভাসজুড়ে ছড়িয়ে আছে আকাশ, সেখানে কখনো খণ্ডিত চাঁদ, কখনো আবার ভোরের আলো বা অস্তমিত সূর্য। কোনো কোনো ক্যানভাসের বিশাল অংশ জুড়ে শুধু একটি রঙের আধিক্য, অবশ্য সে ক্ষেত্রে রংগুলো সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে মিশ্রিত আলো-ছায়ায়। ছড়িয়ে যাওয়া সূর্যের আভার মতো চারপাশটা হলুদ, আম্বার, কমলা প্রভৃতির সমন্বয়ে লাল হয়ে উঠেছে আকাশ। আবার মিশ্র উপাদানে গড়ে ওঠা ফর্মের সামঞ্জস্যপূর্ণ বৈপরীত্যে কোনো কোনো রং প্রধান হয়ে উঠেছে। নানা রঙের এই ফর্মগুলো উঠেছে অ্যাক্রিলিক, অয়েল, মসলিন, সাধারণ কাপড়, গোল্ড লিফ ও কপার লিফের মতো বিচিত্র সব উপাদানের সংমিশ্রণে।
এই প্রদর্শিত চিত্রকর্মগুলোতে বর্ণিল রং আর গঠনের যে সচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে, তা মানুষের ভাষায় বর্ণনীয় বাস্তবতাকে ছাপিয়ে যায়। ভিনিতার চিত্রকর্ম দর্শককে আবেদন জানায় তার নিজস্ব জগতে, নিয়ে যায় এক কল্পলোকের দুনিয়ায়, যা একমাত্র বর্ণনা করা যেতে পারে সৌন্দর্য আর নির্মলতার সংজ্ঞা হিসেবে।
ভারতীয় পাঞ্জাব বংশোদ্ভূত ভিনিতা করিম তাঁর শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবন মিলিয়ে জার্মানি, সুইডেন, মিসর, ফিলিপিন, লিবিয়া, বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই বিচরণ করেছেন আর সংগ্রহ করেছেন শিল্পের কাঁচামাল।
ভিনিতার চিত্রকর্মে স্পষ্টতই তাঁর বিশ্বভ্রমণ কিংবা আরব্য উপদ্বীপ অথবা সুদূর প্রাচ্যের প্রভাব ফুটে ওঠে। কিন্তু ‘রিভার স্টোরিজ’-এর গল্পের শিকড় এই বাংলাদেশই, যা কি না দর্শককে নদীতীরের জাদুকরি ব-দ্বীপের সৌন্দর্য এবং অলীক শহরের গরিমা স্মরণ করিয়ে দেয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিলিয়ে এটি শিল্পীর ২৩তম একক প্রদর্শনী, তবে বাংলাদেশে এটি তাঁর চতুর্থ প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীটি প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চলবে ৬ জুন পর্যন্ত।