সাক্ষাৎকার
ব্রিটিশরা নজরুলকে ভয় পেত : নাসির আলী মামুন
তাঁকে ‘ক্যামেরার কবি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন কবি শামসুর রাহমান। তিনি বাংলাদেশ শুধু নয়, বিশ্বের বিখ্যাত মানুষদের মুখচ্ছবির আলোকচিত্র তুলে নিজেই এখন বিখ্যাত-তিনি নাসির আলী মামুন।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশে পোরট্রেট ফটোগ্রাফিকে নাসির আলী মামুন নিয়ে যান শৈল্পিক পর্যায়ে। মাদার তেরেসা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মওলানা ভাসানী, শিল্পী জয়নুল আবেদীন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, কাজী মোতাহার হোসেন, জসীমউদদীন, এস এম সুলতান, ওস্তাদ কানাই লাল শীল, কবি আহসান হাবিব, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদসহ অগণিত বিখ্যাত মানুষের পোরট্রেট তাঁর ক্যামেরায় বন্দী হয়েছে।
নাসির আলী মামুনের ছবি তোলার নেশা ছিল খুব ছোটবেলা থেকে। যখন তাঁর বয়স ৯, তখন তিনি বাসায় রাখা পত্রিকা মর্নিং নিউজ ও অবজারভারে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও বিখ্যাত লেখকদের ছবি কেটে রাখতেন। বন্ধুদের বাসা থেকে পত্রিকা চুরি করে নিয়ে আসতেন। বন্ধুরা বাসার পত্রিকা পড়া হলে জানালার কাছে ইচ্ছে করে রেখে দিতেন, যাতে পত্রিকাটি চুরি করা সহজ হয়। ক্যামেরাও তাঁর নিজের ছিল না। বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ক্যামেরা ধার করে এনে ছবি তুলতেন তিনি। বন্ধু ওমর ফারুক মুন্নার কাছ থেকেই বেশি ক্যামেরা ধার করতেন তিনি। ওমর ফারুক আবার সেই ক্যামেরা ধার করতেন আরেকজনের কাছ থেকে। ক্যামেরার রোলের টাকাও দিতেন সেই বন্ধু। কারণ ওমর ফারুক চেয়েছিলেন বিখ্যাত মানুষদের ছবি প্রিয় বন্ধুর হাত দিয়ে উঠুক।
কবি নজরুল ইসলামের অনেক দুর্লভ মুহূর্তের ছবি তুলেছেন নাসির আলী মামুন।
কীভাবে সম্ভব হয়ে উঠল বিদ্রোহী কবির ছবি তোলা? বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন তিনি।
নজরুল পর্ব
আমার পরিবারের কারো সাধ্য ছিল না যে নজরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাঁর ছবি তোলার সুযোগ করে দেবে। আমার সঙ্গে তাঁর কোনো ধরনের ব্যক্তিগত সখ্য ছিল না।
১৯৭২ সালে মে মাসে কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে তাঁকে অতিথি করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। কবিকে এনে রাখা হয় ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর রোডে। যে ভবনে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেটার নাম ছিল ‘কবি ভবন’। এখন সেই ভবনটাকে ‘নজরুল ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছে।
‘কবি ভবনে’ যাওয়ার জন্য ধানমণ্ডির সোবহানবাগের মসজিদ থেকে হাজার হাজার মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। লাইনে মারামারি পর্যন্ত বেধে যেত। পুলিশ পাহারা দিত। কবিকে একনজর দেখা সবার জন্য ছিল বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রথম দিন লাইনে দাঁড়িয়ে আমি ‘কবি ভবন’ পর্যন্ত যেতে পারিনি।
এত ভিড় হয়েছিল যে রাত হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনেও যেতে পারিনি। পরে কবির জন্মজয়ন্তীতে ভবনে পৌঁছানোর সৌভাগ্য আমার হয়।আমার হাতে ক্যামেরা ছিল, সেই সুবাদে পুলিশ আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিয়েছিল। ভেতরে ঢুকে দেখি তখনো প্রেসের ফটোগ্রাফাররা আসেনি। ভবনের নিচে বাগানে একটা ছোট্ট স্টেজ করা হয়েছিল। তখন তো বাংলাদেশ কেবল স্বাধীন হয়েছে। অনেক সমস্যা। বাংলাদেশে খাবার নাই, পোশাক নাই। সব জায়গায় অরাজকতা। বঙ্গবন্ধু দেশের দিকে নজর দিতে গিয়ে কবির জন্মদিনে বেশি নজর দিতে পারেননি। জন্মদিনে তাঁর স্টেজটা চটের ছালা ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল।
কবির পরনে ছিল হাফহাত ঢিলেঢালা চেক শার্ট। শার্টের পকেট বড়। আর ছিল ঢিলা লুঙ্গি। হাঁটার সময় তাঁর পায়ের সেন্ডেল খুলে যাচ্ছিল। কবির দুই পুত্রবধূ উমা কাজী ও কল্যাণী কাজী তাঁর পাশে বসে ছিলেন। কবি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সবকিছু দেখছেন। আমি সেই দৃশ্যগুলোর কিছু ছবিও তুলি। প্রথম তাঁকে দেখে একবারও মনে হয়নি তিনি বাংলাদেশের না। তিনি নির্বাক কিন্তু তাঁর চোখ টগবগ করছে। তাঁকে দেখে মনে হলো চোখে তাঁর সমস্ত বাংলা সাহিত্যের ভাষা খেলা করছে। শিল্পী তবলা বাজাচ্ছিল। নজরুলসংগীতের বড় শিল্পী ফিরোজা বেগম এসে গান গাইলেন। নজরুল তবলার তালে উত্তেজিত হয়েছিলেন বটে কিন্তু গান শুরুর পর তন্ময় হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ধীরস্থিরভাবে গান শুনছিলেন তিনি। দেখে মনে হয়েছিল গানের নিযার্সও নিচ্ছেন।
এই দৃশ্য দেখে আমি এত আবেগপ্রবণ হয়েছিলাম যে, আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। আমি দুএকটা ছবি তোলার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু আলো কম হওয়ার কারণে কিছু ছবি আউট অব ফোকাস হয়েছিল। ছবিগুলোর মধ্য থেকে একটি ছবি পোরট্রেট করতে পেয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে নজরুলের ছেলে কাজী সব্যসাচী, কাজী অনন্ত, পুত্রবধূ উমা কাজী, কল্যাণী কাজী ও তাঁর নাতি-নাতনিরা উপস্থিত ছিলেন।
হঠাৎ লক্ষ করি অনুষ্ঠান চলাকালে ভবনের বারান্দায় কাজী সব্যসাচী মদ পান করছেন। এই দৃশ্য আরো অনেকের চোখে পড়েছে। কিন্তু এই ছবিটি আমার তোলা হয়নি। অনুষ্ঠানে শিল্পী ডাক্তার অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়, রেনু ভৌমিকসহ আরো বিখ্যাত শিল্পীরা এসেছিলেন। তাঁদের দেখার ও ছবি তোলার সৌভাগ্য আমার হয়।
প্রায় এক রোলের বেশি ছবি আমি তুলেছি। ক্যামেরাটা কিন্তু আমার ছিল না।
আমার প্রিয় এক বন্ধু ওমরের কাছ থেকে ধার করে এনেছিলাম। আমার সুসময়-অসময় সব সময় ওমরকে পাশে পেয়েছিলাম আমি।
এ ছাড়া কবি বাংলাদেশে ছিলেন বলেই আফ্রিকার একজন বড় লেখক ও সেনেগালের প্রেসিডেন্ট সেদার সেঙ্গোর বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে ঢাকায় এসেছিলেন।
ঢাকায় আসার পরদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তিনি কবি নজরুলকে দেখতে গিয়েছিলেন।
১৯৭৩ সালে ২০ বছর বয়স ছিল আমার। কম বয়স তাই উত্তেজনা অনেক বেশি ছিল। বাসায় এসে ছবিগুলো তো দেখতে পাইনি। কারণ তখন তো ডিজিটাল কিছু ছিল না। ভারতীয় উপমহাদেশের এত বড় কবি, যার শুধু লেখা পড়ে ব্রিটিশরা ভয়ে কাঁপত, তাঁর ছবি তোলা তো চাট্টিখানি কথা নয়। তিনি তো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। একজন কবি ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়েও ব্রিটিশরা ভয়ে কাঁপেনি, কিন্তু নজরুলের লেখা পড়ে কে ভয় পায়নি? রবীন্দ্রানাথকে তারা সমীহ করত, আর নজরুলকে তারা ভয় পেত। নজরুলের পক্ষে তখন অনেক আমজনতা ছিল। তাঁর কবিতা পড়ে সবাই আন্দোলনের অণুপ্রেরণা পেয়েছিল।
তাঁর ছবি আমি তুলেছি এটা ভেবে আমার আনন্দ হচ্ছিল। সবকিছু মনে হয়েছিল স্বপ্ন। যখন ক্যামেরাটা কবির সামনে ধরেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল একটি বাধ্যগত শিশু দাঁড়িয়ে আছে আমার ক্যামেরার সামনে। বিপ্লবীর কোনো ছাপ ছিল না। শিশুর মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিলেন কবি। কী নিরীহ দৃশ্য। তখন মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল আমার। কারণ বিপ্লবী কবি নিষ্পলক, নির্বাক হয়ে আমার ক্যামেরার সামনে! তাঁর শরীর ছিল ক্লান্ত প্রজাপতির মতো। আমার তোলা সব ছবির মধ্যে ছয়-সাতটা ছবি টিকে যায়। এর মধ্যে একটা পোরট্রেট ভালো হয়েছিল। সেটা দেখে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট ও পরিশ্রম বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।
আর একটা ঘটনা বলি, কবি কিন্তু মোটা ফ্রেমের চশমা, লাঠি, ক্যামেরা দেখলে চিৎকার করে একটা আওয়াজ করতেন। আমার মনে হয় তিনি এসব দেখে কিছুটা ভয় পেতেন। তাঁর এই আওয়াজে শিশুরা কাছে আসতে ভয় পেত।
বঙ্গবন্ধু না চাইলে কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে কেউ নিয়ে আসতে পারত কি না, এ বিষয়টি এখনো আমাকে ভাবায়। কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও সাহসের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কবিকে এ দেশে আনার অনুমতি দিয়েছিলেন। কবিকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে ইন্দিরা গান্ধী অনেক বৈঠক করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু নজরুলের আত্মীয়স্বজনরা চাননি তিনি বাংলাদেশে আসুক। তবে কবির ছেলেরা চেয়েছিলেন। নজরুলের আত্মীস্বজনরা চিঠি লিখে এবং নানা প্রকার তৎপরতা চালিয়েছিলেন যাতে নজরুলকে বাংলাদেশে না আনা হয়। যাইহোক সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাংলাদেশে কবিকে নিয়ে আসার পর সরকার তাঁকে সম্মানের সঙ্গে নাগরিকত্ব দেন। সম্ভবত তিনিই প্রথম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু পর্ব
বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ যখন এলোই তখন তাঁর ছবি তোলা প্রসঙ্গে একটু বলি- আমি যখন তাঁর ছবি তুলি, তখন আমার বয়স ২০ বছর। প্রেসের ছবি নয়, আমি তাঁর পোরট্রেট তোলার চেষ্টা করেছিলাম। প্রথম কয়েকবার সফল হইনি। ১৯৭৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে একটি অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অতিথি হয়ে এসেছিলেন। আমি সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে আস্তে আস্তে তাঁর পায়ের কাছে গিয়ে বসি এবং ছবি তুলি। তাঁর পাশে বসা ছিলেন সেই সময়ের জাতীয় সংসদের স্পিকার মাহামুদউল্লাহ্। তাঁর ছবি তুলতে দেখে বঙ্গবন্ধু মাহামুদউল্লাহকে বলেছিলেন, ‘ওরা ক্যামেরা দিয়ে আমার সাইকোলজি পরীক্ষা করে।’ এই কথা বলার পর তিনি হাসেন।
আমি সেই হাসির ছবি ক্যামেরাবন্দী করি। যদিও নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে ইশারা করে উঠে আসতে বারবার বলেছিলেন কিন্তু আমি তাঁদের কথা শুনিনি।
বঙ্গবন্ধুকে দেখে আমি শুধু সালাম দিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে কোনো বাক্যবিনিময় হয়নি। তাঁর মতো লম্বা চওড়া সাহসী মানুষ আমি আর দেখিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য অনেক মানসিক শক্তি দরকার ছিল।
নজরুলের নাতি, কল্যাণী কাজীর বড় ছেলে, কাজী অনির্বাণ বঙ্গবন্ধুকে ‘কবি ভবনে’ প্রথম দেখে বলেছিলেন, ‘তুমিই বঙ্গবন্ধু!’ এই কথা শুনে বঙ্গবন্ধু খুব আবেগ আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। তৎকালীন দৈনিক বাংলা পত্রিকায় ‘তুমিই বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটা লেখাও ছাপা হয়েছিল।
ক্যামেরা পর্ব
আমার বয়স যখন আট তখন শুধু দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তানসহ হাতেগোনা কিছু পত্রিকা ছিল। আমি সেসব পত্রিকায় বিখ্যাত লোকদের ছবি দেখতাম। আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মনে হলো আমিও বিখ্যাত লোকদের ছবি তুলব। যুদ্ধের পরপর ছবি তোলার জন্য আমি প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। মনে মনে এমন একটি জগৎ তৈরি করে নিয়েছিলাম যে, এই পথ ধরে আমি হাঁটতে থাকব। ক্যামেরার মধ্য দিয়ে বিখ্যাত লোকদের মুখচ্ছবি দিয়ে ইতিহাস রচনা করার ইচ্ছে ছিল আমার। মনে মনে নিজেকে বোঝাতাম, ‘মামুন তুমি এটার জন্য নির্বাচিত লোক’। তখন এমন একটা যুগ ছিল ক্যামেরার চল তেমন ছিল না। এ জন্য কেউ ছবির প্রতি এতটা জোর দেয়নি।
সওগাত পর্ব
‘সওগাত’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের অফিসে আমি প্রায়ই যেতাম।
তাঁর কাছে নজরুল সম্পর্কে জানতে চাইতাম। তিনি অনেক কথা বলতেন নজরুল সম্পর্কে। আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেসব কথা মন দিয়ে শুনতাম। তাঁর ছবিও তুলেছি। নজরুলের কবিতা তিনি বেশি প্রকাশ করেছিলেন। কবি নিয়মিত তাঁর কাছে যেতেন।
গল্প করতেন। দুজন মিলে একসঙ্গে পান খেতেন। অনেক স্মৃতি তাঁদের। নজরুলকে নাসিরউদ্দিন সাহেব নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন। তাই হয়তো কবিকে তিনি অনেক বেশি সমর্থন করেছিলেন। নিঃসন্দেহে তিনি খুব সাহসী সম্পাদক ছিলেন। কারণ তিনি প্রথম মুসলমান সম্পাদক যার পাতায় প্রথম মেয়েদের ছবি ছাপানো হয়। মওলানা ভাসানীর সঙ্গেও নজরুলের সখ্য ও মানসিক যোগাযোগ ছিল। কারণ তাঁরা ব্রিটিশের কঠোর বিরুদ্ধে ছিলেন।
বিদায় পর্ব
নজরুলের মৃত্যুর দিন বাংলাদেশের সব প্রান্ত থেকে হাজার হাজার লোক চলে এসেছিল। আমি গিয়ে দেখেছিলাম ড. কাজী মোতাহার হোসেন কবির মৃতদেহের পাশে বসে কোরআন শরিফ পড়ছিলেন। একটু পর জিয়াউর রহমান আসেন। আর কবির মৃতদেহের পাশে বসে কান্না করছিলেন ফিরোজা বেগম, উমা কাজী ও কল্যাণী কাজী। কী যে মর্মান্তিক দৃশ্য! সব দৃশ্যগুলো আমি ক্যামেরায় বন্দী করি।
নজরুলের ছেলেরা চেয়েছিলেন কবির কবর কলকাতায় দেওয়া হোক। নজরুলের উত্থান হয়েছিল কলকাতায়। তাদের দাবিও যুক্তিসংগত ছিল। তারা ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কীভাবে মৃতদেহ কলকাতায় নেওয়া যায়। জিয়াউর রহমান এটা জানতে পেরেছিলেন। প্রশাসনের সহয়তায় খুব দ্রুত তিনি কবির মৃতদেহ দাফন করেন।’
তারপর খুব দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মসজিদের পাশে কবিকে কবর দেওয়া হয়। প্রশাসন ভেবে নিয়েছিল লাশ দাফন হলে তো তাঁকে আর ওঠানো যাবে না। জিয়াউর রহমানসহ সবাই দ্রুত কবরে মাটি দিচ্ছিলেন। টিভি ও খবরের কাগজে কবির মৃত্যু ও দাফনের সংবাদ বের হয়। তাই কবির পরিবারবর্গের আর করার কিছুই ছিল না। কবিকে দাফনের পর সেই কবরের ছবিও আমি তুলি।
এক বছর পর কবির প্রথম মৃত্যবার্ষিকীতেও আমি ছবি তুলেছি। তখন বাঁশের বেড়া দিয়ে কবির কবর ঘেরা ছিল।
ফটোজিয়াম পর্ব
এখন ‘ফটোজিয়াম’ নামে একটি আলোকচিত্র জাদুঘর গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এ জন্য সাভার রোডের পাশে একটা জায়গাও কেনা হয়েছে। অবশ্য এ জন্য অনেক অর্থ প্রয়োজন। তাই এটি গড়ে তুলতে হয়তো আরো বছর খানেক সময় লাগবে।