অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে সেলুনে!
বাইরে লেখা ‘সেলুন’। ভেতরেও চলছে চুল কাটাকাটির কাজ। কিন্তু বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই যে, চুল কাটার আড়ালে চলে মেডিকেল অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির ব্যবসাও। যা অনুমোদনহীন ও অবৈধ। করোনাকালে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এগুলো আবার অন্তত তিনগুণ দামে বিক্রি করেন সেলুনের মালিক গোকুল কুমার।
সেলুন দোকানে চার থেকে পাঁচটি করে সিলিন্ডার রাখেন গোকুল। ওই পাঁচটি বিক্রি হয়ে গেলে তিনি পুনরায় সিলিন্ডার নিয়ে আসতেন। তারা একটি সিন্ডিকেট মেইনটেইন করেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই মূলত অধিক মূল্যে বাসাবাড়িতে এই অক্সিজেন সিলিন্ডার সাপ্লাই দিতেন তারা। মানুষ বিপদে পড়ে তাদের কাছ থেকে এই অক্সিজেন কিনতেন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁও কলোনি বাজার মার্কেটের গোকুল কুমারের সেলুনে অভিযান পরিচালানা করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব-৩-এর সহযোগিতায় এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচানা করেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি নিজেই এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা বলেন।
পলাশ কুমার বসু বলেন, ‘গোকুল কুমার এই করোনাকালে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য নিজের সেলুনে মেডিকেল অক্সিজেন রাখেন। এসব পরিচালনা করার জন্যও কোনো লোক নেই। আবার এগুলো ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমোদনহীন হওয়ায় এর মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। সোজা কথা তিনি এটা রাখতে পারেন না। এ ছাড়া এই অক্সিজেন তিনি তিন থেকে চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। সেজন্য অভিযান চালিয়ে আমরা গোকুলকে দুই লাখ টাকার জরিমানা করেছি।’
র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘শুধু গোকুল কুমার নন, একই মার্কেটে তাহের এন্টারপ্রাইজের এলপি গ্যাস ও ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারের দোকানেও করোনায় গুরুতর অসুস্থদের জন্য অত্যাবশ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি করা হচ্ছে। যার কোনো অনুমোদন নেই, বৈধতা নেই, নেই অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানও। অভিযান চালিয়ে মালিক আবু তাহের কোরাইশিকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। একইসঙ্গে তার কো-পার্টনার মো. ইয়াসিনকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছি। ওই দোকানে ১১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এএসকে এন্টারপ্রাইজে ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন সিলিন্ডারের আড়ালে মেডিকেল অক্সিজেন রাখা শুরু করেছিল আজ থেকে। যা তারা পারে না। সেজন্য ওই দোকানের মালিককে আরো এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট এখানে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
পলাশ কুমার বসু আরো বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে মোট চারটি কোম্পানিকে এই মেডিকেল অক্সিজেন আমদানি বা বিক্রির অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মেসার্স ইসলাম অক্সিজেন লিমিটেড, মেসার্স লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড, মেসার্স স্পেকট্রা অক্সিজেন লিমিটেড এবং মেসার্স বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাসেস লিমিটেড কোম্পানিকে এই মেডিকেল আমদানি বা বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে যদি কেউ বিক্রি করেন তাহলে অবশ্যই তা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদিত ফার্মেসিতে রাখতে হবে।’