আর্মি স্টেডিয়ামে স্যার আবেদের জানাজা আজ
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2019/12/20/brac.jpg)
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমেরিটাস চেয়ার স্যার ফজলে হাসান আবেদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে আজ রোববার। এর আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ রাখা হবে ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে। সেখানে দুপুর সাড়ে ১২টায় জানাজা সম্পন্ন হবে। এরপর তাঁকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ ও ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মাদ মুসা জানিয়েছেন, রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত স্যার ফজলে হাসান আবেদের মরদেহ ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। দুপুর সাড়ে ১২টায় সেখানেই জানাজা সম্পন্ন হবে।
শোকবই
স্যার ফজলে হাসান আবেদের স্মরণে আজ দুপুর ২টা থেকে মহাখালীর প্রধান কার্যালয় ব্র্যাক সেন্টারে একটি শোকবই খোলা হবে। এ ছাড়া আড়ং, ব্র্যাক ব্যাংক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আগামী সোমবার (২৩ ডিসেম্বর থেকে) এবং সারা দেশে ব্র্যাকের আঞ্চলিক অফিসগুলোতে আগামী মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শোকবই খোলা থাকবে। শোকবই থাকবে ৩০ জানুয়ারি বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শোক
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার ইমেরিটাস স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশিষ্টজন।
বঙ্গভবনের উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদের মাধ্যমে পাঠানো শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ফজলে হাসান আবেদ ব্র্যাক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপুল অবদান রেখেছেন। তিনি আরো বলেন, দেশের উন্নয়নে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকবার্তায় বলেন, ১৯৭১ সালে ফজলে হাসান আবেদ ইংল্যান্ড থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়, তহবিল সংগ্রহ ও জনমত গঠন করেন। সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনেও তিনি কাজ করেন। তিনি আরো বলেন, তাঁর মতো মানবতাবাদী মানুষের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। প্রধানমন্ত্রী তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক শোকবার্তায় তাঁর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানান। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের নানা ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা স্যার ফজলে হাসান আবেদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বলে ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেন, ‘স্যার ফজলের জীবন মানবতার জন্য এক বিরাট উপহার। ব্র্যাকে ৫০ বছরের নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ও তার বাইরে কোটি মানুষের জীবন আমূল বদলে দিয়েছেন। একই সঙ্গে উন্নয়ন সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনাকেও তিনি বদলে দিয়েছেন।’
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘তাঁর (স্যার ফজলে হাসান আবেদ) কর্মের বিপুল বিস্তৃতি ও প্রভাব এবং যে পরিপূর্ণ বিনয় সহকারে কাজগুলো তিনি সম্পন্ন করেছেন, উভয়ই আমাদের শিক্ষার নিবিড় পাথেয় হয়ে থাকবে।’
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস বলেন, ‘১৯৭২ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে প্রত্যাগত শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ১০ হাজার ৪০০ ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আরো অর্থ সংগ্রহ করে তিনি ১৬ হাজার ঘর করেছিলেন। তারপরও কিছু অর্থ উদ্বৃত্ত থেকে গিয়েছিল, যা দিয়ে পরের প্রকল্প শুরু করেছিলেন। এমনই এক মহৎ মানবতাবাদী ছিলেন তিনি। তিনি আমাদের দেখিয়েছেন, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনকে বিস্মৃত না হয়ে কীভাবে বৃহৎ ও কার্যকর সংগঠন গড়ে তুলতে হয়। তাঁর কাজ আমাদের চিরকালীন অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং এস্তার দুফলো বলেন, ‘ফজলে হাসান আবেদের মতো মানুষ কয়টা হয়? তাঁর অনবস্থানে আমরা সবাই একটু ছোট হয়ে গেলাম।’
ব্র্যাক বাংলাদেশের চেয়ারপারসন হোসেন জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ অসাধারণ দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতার গভীর জীবনদর্শন ও নিরলস শ্রমের এক অবিস্মরণীয় ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষটারও ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, এই বিশ্বাসে ভর করেই তিনি সফলভাবে গড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ যা সারা বিশ্বে সমাদৃত। কিন্তু এই সাহস, এই আকাঙ্ক্ষা একেবারেই শেকড় থেকে আসা। চলে যাওয়ার বেদনার এই মুহূর্তেও পরপার থেকে তাঁর স্মিত হাসি তাই ভরসা দিচ্ছে সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ ও শ্রম আঁকড়ে ধরে আরো বহুদূর যাওয়া যাবে, যেতে হবে। কারণ পৃথিবীতে ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের সংখ্যা এখনো অগণিত। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বিদায়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে দরিদ্রবান্ধব বেসরকারি উন্নয়নে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রাণপুরুষ। একজন গবেষক হিসেবে ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে আমি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। বিশ্ব তাঁকে উন্নয়নক্ষেত্রে বহুমাত্রিক এবং ব্যয়সাশ্রয়ী অনেক সমাধান উদ্ভাবনের জন্য মনে রাখবে। তাঁর এসব সমাধান সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষত নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক হয়েছে। গরিব মানুষের কাছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং আর্থিক খাতে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্ব অবিসংবাদিত।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘স্যার ফজলে ছিলেন শ্রেষ্ঠতম সামাজিক উদ্ভাবকদের একজন। বাংলাদেশ ও আরো অনেক স্বল্পোন্নত দেশের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত কোটি মানুষের অবস্থা পরিবর্তনে তাঁর অসামান্য অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। এই স্বপ্নদ্রষ্টা নেতা তাঁর গভীর প্রজ্ঞা ও গণ্ডির বাইরের চিন্তাভাবনা দিয়ে সিপিডির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছেন। তাঁর মৃত্যুতে ব্র্যাক, সিপিডি, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর বলেন, ‘দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকার ১০টি দেশে ব্র্যাকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়ে তিনি আমাদের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। আমরা, ইউনিসেফের সবাই তাঁর উন্নয়নভাবনাগুলোর অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করব।’
দেশ-বিদেশ থেকে আরো শোকবার্তা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তোমু হোজুমি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অশোকার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিল ড্রেইটন, পুলিৎজার পুরস্কারপ্রাপ্ত কলামিস্ট নিকোলাস ক্রিস্টফ, যুক্তরাজ্য সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ (ডিএফআইডি), অস্ট্রেলীয় সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (ডিএফএটি), সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউকের প্রধান নির্বাহী কেভিন ওয়াটকিনস, বিওপি হাব, ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী সাইদা রশীদ, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল (অব.) সাহুল আফজাল চৌধুরী, ব্রিটিশ রেড ক্রসের সোফেনা লালানি, ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষক জিবাহ নোয়াকো, সাজিদা ফাউন্ডেশন, জাগো ফাউন্ডেশন, ড. চঞ্চল খান, কামরুল মুরাদ প্রমুখ।