এমসি কলেজে যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই : তদন্ত কমিটি

ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শহিদুল কবির চৌধুরী বলেছেন, প্রায় ১৪৪ একরের এমসি কলেজে আয়তন অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট নেই। এ ছাড়া অপ্রতুল সীমানা প্রাচীর, আলোর স্বল্পতার বিষয়টিও নিরাপত্তার ব্যঘাত ঘটিয়েছে।
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। দুই দিনে সদস্যরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের বক্তব্য শুনেন। আজ বুধবার রাতেই তাঁরা ঢাকায় ফিরে যাবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ে তাঁদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
সিলেট ছাড়ার আগে আজ সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান শহিদুল কবির চৌধুরী। এ সময় তিনি কলেজের অপর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করেন।
করোনাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্রাবাস খোলা রাখার নির্দেশনা ছিল না উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। এই সময়ে ছাত্রাবাস খোলা রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু এখানে ছাত্রাবাস খোলা ছিল, এ বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লখ করা হবে।’
এ ছাড়া হোস্টেলের কক্ষে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিও অবগত হয়েছেন বলেও জানান শহিদুল কবির চৌধুরী। তিনি আরো জানান, তদন্ত কমিটি গত দুই দিনে পুলিশ, কলেজ প্রশাসন, নির্যাতিতা নারী ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা মূলত এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও অবস্থান বিষয়ে তদন্ত করছেন বলেও জানান তিনি।
আজ বিকেলে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস ও হোস্টেল পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি।
জানা গেছে, স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে গত শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এমসি কলেজে গিয়েছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাঁচ থেকে ছয়জন তাঁদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন তাঁরা। পরে ওই গৃহবধূকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় গত শনিবার ওই গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), তারেক (২৮), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫)। তাঁদের মধ্যে সাইফুর রহমান বালাগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে, তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় আর মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেটের সদর উপজেলায়।
অভিযোগ উঠেছে, মামলার এই ছয় আসামি ছাত্রলীগের কর্মী। এ বিষয়ে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ুম জানান, মামলায় ছয়জনকে সরাসরি জড়িত বলে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলার এজাহারে তাঁদের ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়।
এর আগে অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি এম সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সাইফুরের কক্ষ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি রামদা, একটি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করা হয়।