এসএমই পণ্যের দেশি-বিদেশি বাজার সৃষ্টির তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উৎপাদিত পণ্যের দেশি-বিদেশি বাজার সৃষ্টি করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অষ্টম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সময়োপযোগী আইন প্রণয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে শিল্প উন্নয়নে কাজ করছে।
বর্তমানে মোট জাতীয় উৎপাদন-জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের মধ্যে তা ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্যের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে শুরু হলো অষ্টম এসএমই পণ্যমেলা। খাতটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় পাঁচজনকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। এসএমই পণ্যের প্রচার এবং স্থানীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তাদের এক ছাদের নিচে নিয়ে আসার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ বছর অষ্টম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি এই শিল্প খাতকে এগিয়ে নিতে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এসএমই খাতে উৎপাদিত অনেক পণ্য বিশ্বমানের। এগুলোর সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য জড়িত। কাজেই এই এসএমই খাত উন্নয়নে আমাদের বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এসএমই খাতের উন্নয়নে করণীয় হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর পাঁচ দফা নির্দেশনার উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদানির্ভর শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে মনোনিবেশ করতে হবে।’
দ্বিতীয়ত, ‘দেশজ কাঁচামাল ব্যবহার করে ভারী শিল্পের পরিপূরক পণ্য এসএমই শিল্পের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে।’
তৃতীয়ত, ‘এসএমই শিল্পের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে।’
চতুর্থত, ‘কেউ যাতে আমাদের আর সস্তা শ্রমের দেশ মনে না করে, সে জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে হবে এবং উচ্চতর মূল্য সংযোজনের লক্ষ্য নিয়ে স্বল্প উৎপাদন খরচের সঙ্গে উন্নত প্রযুক্তির সংযোগ ঘটিয়ে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের অংশীদার হতে হবে।’
প্রযুক্তিনির্ভর এসএমই খাত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর নির্দেশনায় বলেন, ‘আমাদের দেশীয় বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ ডিজিটাল, বায়োলজিক্যাল ও ফিজিক্যাল উদ্ভাবনে এগিয়ে রয়েছেন। ভবিষ্যতে উদ্ভাবনী এই তিন ধারার সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে। দেশের মাটিতে তা করতে পারলেই আমরা আসন্ন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘সরকার সারা দেশে একশ বিশেষ শিল্পাঞ্চল (এসইজেড) গড়ে তুলছে। এই বিশেষ শিল্পাঞ্চলে আমার নির্দেশ রয়েছে আমাদের নারী উদ্যোক্তারা যেন বিশেষ সুবিধা পান। কারণ, আমি মনে করি, নারী-পুরুষ যেন সমানভাবে এগিয়ে আসে এবং আরো বেশি করে যেন নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতে পারে। সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে চাই। আমি আশা করব আমাদের বোনেরা আরেকটু আগ্রহী হবেন।’
স্ত্রীর নামে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুললে স্বামীরা বিশেষ সুবিধা পাবেন উল্লেখ করে সেই সুযোগ গ্রহণে ব্যবসায়ী মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি ফসলি জমি রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
দেশের শিল্প উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গ্রাম পর্যায় থেকে উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার বিভিন্ন আইন ও অবকাঠামো সময় উপযোগী করতে কাজ করছে।
এসএমই পণ্যের রপ্তানি বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে বাজার সৃষ্টির তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তাগিদ দেন খাতটিতে আরো বেশি গবেষণারও। তা ছাড়া তিনি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রযুক্তি খাতকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন।
শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিম এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উচ্চপদস্থ বেসামরিক এবং সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকতাবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, উদ্যোক্তাসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এবারের শিল্পমেলায় ১৯৫ নারী উদ্যোক্তাসহ মোট ২৯৬ জন এসএমই উদ্যোক্তা তাঁদের পণ্য প্রদর্শন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে পাটজাত পণ্য, কৃষি ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল শিল্পপণ্য, হস্ত ও কুটির শিল্প, প্লাস্টিক এবং সিনথেটিকজাত পণ্য।
মেলা উপলক্ষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘এবারের মেলায় কোনো বিদেশি পণ্য থাকবে না।’
মেলায় পাঁচটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং কোনো প্রবেশমূল্য লাগবে না।