এসএসসি পরীক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা : ছাত্রলীগ সদস্য আনিন গ্রেপ্তার
রাজশাহীতে হাসপাতাল এলাকা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সানিকে কুপিয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগ সদস্য আনিন ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দিনগত রাত ১টার দিকে নগরীর বালিয়াপুকুর এলাকা থেকে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
আনিন ইসলাম (২২) রাজশাহী সরকারি নিউ ডিগ্রি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য। তার বাড়ি নগরীর মীরের চক সাধুরমোড় এলাকায়।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম জানান, গত রোববার রাতে নগরীর হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকায় গ্রেপ্তার আনিন ইসলামসহ কয়েকজন রাজশাহী পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম পাখির ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী সানিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এদিন নিহত সানির ১৮তম জন্মদিন ছিল। গতকাল ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে সানির মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। গতকাল দুপুরে সানির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আনিন ইসলামকে গতকাল দিবাগত রাত ১টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত সানির বাড়ি নগরীর দড়িখরবোনা রেলগেট এলাকায়। দুই মাস আগে তিনি বিয়ে করেছিলেন।
নিহত সানির বাবা রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, গত রোববার তার ছোট ছেলে সানির জন্মদিন ছিল। তার ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বন্যার কারণে তাদের পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। ওই দিন রাতে কয়েক বন্ধু সানির জন্মদিন উদযাপন করে। সেখানে বাথরুমে পড়ে গিয়ে সিজার (১৮) নামে একজনের থুতনি কেটে যায়। এরপর সানি, নয়ন ও তৈয়বুর নামের আরেকজন আহত সিজারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। তখনই হাসপাতালের সামনে থেকে চারজনকে একসঙ্গে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। সিজারকে আহত দেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে নয়ন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আর তৈয়বুর ও সানিকে হেতেমখাঁ সবজিপাড়া এলাকার কফিল উদ্দিন জামে মসজিদের পাশে তুলে নিয়ে যায়। সেখানে সানিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আহত হয় তৈয়বুরও।
সানির চাচা যুবরাজ জানান, দুজনকে কোপানোর পর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সানিকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত তৈয়বুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তা তিনি অনুমান করতে পারছেন না।
বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, হত্যাকাণ্ডের আগে চারজন সানিকে কৌশলে হেতেমখাঁ সাহাজীপাড়া কফিল উদ্দিন জামে মসজিদের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে থেকেই আরও ১৪-১৫ জন উপস্থিত ছিল। সানি সেখানে পৌঁছামাত্রই আসামিরা অতর্কিতভাবে তাকে চাকু, চাপ্পড়, হাতুড়ি, চাইনিজ কুড়াল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় লোকজন সানিকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত সানির বাবা রফিকুল ইসলাম পাখির এমন অভিযোগে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলার পর পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ও বোয়ালিয়া জোনের উপপুলিশ কমিশনার সাজিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল আসামিদের অবস্থান শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করে।
ওসি বলেন, তার নেতৃত্বে এসআই মোতালেব হোসেন ও তার দল সোমবার দিনগত রাত ১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে বালিয়াপুকুর এলাকার ভাড়াবাড়ি থেকে আনিনকে গ্রেপ্তার করে।