ওমিক্রন গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে : বিএসএমএমইউ
ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য এবং জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার) অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিএসএমএমইউ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এ সব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, এমন কোনো রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে গত এক মাসে ওমিক্রন শনাক্ত হয়নি। সংগৃহীত ৯৬টি নমুনার মধ্যে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে ওমিক্রন ধরন শনাক্ত হয়েছে। তবে এর কোনোটি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর নমুনা নয়।
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ও ৮০ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। পরবর্তী মাসে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান গবেষণায় গত বছরের ২৯ জুন থেকে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশের করোনা রোগীদের ওপর পরিচালিত হয়। দেশের সব বিভাগের রিপ্রেজেন্টটিভ নিয়ে স্যাম্পলিং করা হয়েছে। গবেষণায় ৯ মাসের শিশু থেকে ৯০ বছর বয়সী বৃদ্ধা সব ধরনের রোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ থেকে ৫৮ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এতে মোট ৭৬৯ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়।
উপাচার্য আরও বলেন, গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের ক্যানসার, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি ষাটোর্ধ্ব রোগীদের দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হলে সেক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে।
বিএসএমএমইউর উপাচার্য আরও জানান, গবেষণায় মনে হচ্ছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। প্রকৃত ফলাফল আমরা চলতি মাসেই আপনাদের জানাবো। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ওমিক্রনের জেনেটিক কোডে ডেল্টার চেয়ে বেশি ডিলিশন মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগেই ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিন রয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশিরভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। স্পাইক প্রোটিনের বদলের জন্য প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়।
উপাচার্য বলেন, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে কোনো কোনো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া, তৃতীয়বারের মতো সংক্রমিত হওয়া, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের থেকে সংগৃহীত স্যাম্পলের জিনোম সিকোয়েন্স করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া ও ওমিক্রন সংক্রমণে মৃদু উপসর্গ থাকায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ওমিক্রন না পাওয়ার কারণ হতে পারে। পাশাপাশি মৃদু উপসর্গের রোগীদের মধ্যে টেস্ট না করার প্রবণতা রয়েছে। তাই প্রাপ্ত ফলাফলের চেয়েও অনেক বেশি ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী রয়েছে বলে মনে করে গবেষক দল।
ডা. শারফুদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রত্যেকটি ভ্যারিয়েন্ট বিপজ্জনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ রোধে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি ও টিকা নিতে হবে।
এই প্রতিবেদনে বিএসএমএমইউর চলমান গবেষণার ছয় মাস ১৫ দিনের ফলাফল রয়েছে। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে চলমান হালনাগাদ করা ফলাফল জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, আমরা ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া ও ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীদের কাছ থেকে স্যাম্পল নিয়ে গবেষণাটি করেছি। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শতভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগী। আর করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ২০ শতাংশ রোগীকে ওমিক্রনে আক্রান্ত হিসেবে পেয়েছি। কেভিড-১৯-এর জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য করোনার জিনোমের চরিত্র উন্মোচন, মিউটেশনের ধরন ও বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জিনোমের সঙ্গে এর আন্তঃসম্পর্ক বের করা এবং বাংলাদেশি কোভিড-১৯ জিনোম ডাটাবেজ তৈরি করা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানুসহ গবেষক দলের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।