কপালে টিপ পরায় নারীকে ‘হেনস্তা’, সংসদে প্রতিবাদ সুবর্ণা মুস্তাফার
কপালে টিপ পরায় এক নারীকে হেনস্তা করা এবং তাঁর গায়ে মোটরসাইকেলের চাকা তুলে দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়েছে সংসদে। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা এ প্রতিবাদ করেন।
আজ রোববার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা এ ঘটনায় যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, “দল-মত নির্বিশেষে, বিশেষ করে নারী সমাজের জন্য অত্যন্ত ঘৃণিত একটি ঘটনা। ইভটিজিং আমরা শুনে এসেছি। বখাটে ছেলেরা স্কুলের বাচ্চা মেয়েদের ইভটিজিং করে। সে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু, আমি যখন দেশের আইনরক্ষাকারী কাউকে ইভটিজিংয়ের ভূমিকায় দেখি, তখন সেটা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। বাংলাদেশের কোন সংবিধানে, কোন আইনে লেখা আছে যে, একজন নারী টিপ পরতে পারবেন না। এখানে হিন্দু-মুসলমান, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ এমনকি তিনি বিবাহিত না বিধবা, সেটা বিষয় নয়। একজন মেয়ে টিপ পরেছেন। তিনি একজন শিক্ষক। রিকশা থেকে নামার পরে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা ইভটিজিং করেছেন।’
সুবর্ণা মুস্তাফা আরও বলেন, ‘প্রতিবাদী হলে তাঁর সঙ্গে তুই-তোকারি করা হয়েছে। অসম্মান করা হয়েছে। আমি সরকারি দলকে রিপ্রেজেন্ট করি, না বিরোধীদলকে রিপ্রেজেন্ট করি-বিষয়টা এগুলোর ঊর্ধ্বে। প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন, ‘মানুষ আগে। মানুষের অধিকার আগে।’ জাতির পিতা বলেছেন, ‘মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের অধিকার আগে। তার মৌলিক অধিকার আগে।’”
সুবর্ণা মুস্তাফা আরও বলেন, ‘যে মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি দেখাশোনা করে, তারা যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর কখনো না ঘটে।’
রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার শেরে-বাংলা নগর থানায় গতকাল শনিবার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
লিখিত অভিযোগে লতা সমাদ্দার বলেছেন, শনিবার তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় করে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে কর্মস্থল তেজগাঁও কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন। সেজান পয়েন্টের সামনে পুলিশের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিলেন। তাঁর মোটরসাইকেলের নম্বর-১৩৩৯৭০।
লতা সমাদ্দার অভিযোগে উল্লেখ করেন, ‘পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কপালে টিপ পরা নিয়ে ওই ব্যক্তি আমাকে কটূক্তি করেন। একপর্যায়ে তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় তিনি আরও গালিগালাজ করেন। পরে পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি আমার গায়ের ওপর মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও শারীরিকভাবে আহত হই।’
ট্রাফিক পুলিশকে বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা না নিয়ে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন বলে উল্লেখ করেছেন প্রভাষক লতা সমাদ্দার। তার ভাষ্য, ‘ঘটনার আকস্মিকতায় আমি পাশেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে বিস্তারিত জানাই। সেখানে থাকা ট্রাফিক পুলিশের সদস্যেরা আমাকে থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন।’
জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। কলেজে যাওয়ার পথে সেজান পয়েন্টের পাশে তাঁকে উত্যক্ত করা হয় বলে জেনেছি। পরে তাঁকে হত্যাচেষ্টারও অভিযোগ তোলা হয়েছে। লোকটি পুলিশের পোশাক পরা ছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘শিক্ষিকার অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি থানা পুলিশের না-কি ট্রাফিক বিভাগের, তা তদন্ত হচ্ছে।’