করোনায় মৃত্যুর সব দায় সরকারের : রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সরকার করোনা মোকাবিলায় চারদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের এই ব্যর্থতায় সাংবাদিক মারা যাচ্ছে, চিকিৎসক মারা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে এবং প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুর সব দায় সরকারের। এ দায় তাদের নিতে হবে।’ গাজীপুর মহানগর বিএনপির টঙ্গী পূর্ব থানা শাখার মাধ্যমে আজ সোমবার দুপুরে টঙ্গী বাজার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন রিজভী।
এ সময় রিজভী বলেন, ‘যখন চীনে করোনার মহামারি শুরু হলো, তখন সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদি প্রথম থেকে তারা পদক্ষেপ নিত, তাহলে আজ লাশের সারি দীর্ঘ হতো না, এত মানুষ মারা যেত না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অতিরিক্ত সচিবের মতো সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন। তাঁর জন্য সরকার হাসপাতালে একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারেনি। একটি ভেন্টিলেটর জোগাড় করতে পারেনি। তাহলে আজ সাধারণ মানুষের কী অবস্থা?’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘যে সময় বাংলাদেশে করোনা সামাল দেওয়ার যথেষ্ট সময় ছিল, সে সময় আপনারা করেননি। চীনে যখন গণসংক্রমণ শুরু হলো, তখন আপনারা পদক্ষেপ নিলে, লকডাউন-শাটডাউন ইত্যাদি পদক্ষেপ নিলে, আজ বাংলাদেশে গণসংক্রমণ শুরু হতো না। আজ এই মৃত্যুর দায় সরকারের। কারণ, সেদিন তারা সচেতনতামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি; বরং এ সুযোগে আজ নিজেদের লোকদের পকেট ভারি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চাল চুরি হচ্ছে, আত্মসাৎ হচ্ছে, লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘আজ যদি সত্যিকারের নির্বাচিত সরকার হতো, জনগণের সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার হতো, তাহলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। আর জবাবদিহি করতে গেলে জনগণের জন্য কী করা দরকার, জনগণের পক্ষে কী কাজ করা দরকার, তারা এ কাজগুলো করত। কিন্তু তাদের তো কোনো জাবাবদিহি করার দরকার নেই।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যাঁরা তাদের সমালোচনা করছেন, তাঁরা এই সরকারের রোষানলের শিকার হচ্ছেন। এই ক্রান্তিলগ্নেও এই সরকারের ফ্যাসিজম, এই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বিন্দু পরিমাণ কমেনি। আজ সত্য কথা বলার জন্য সাংবাদিককে পিঠমোড়া করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক করোনায় মারা গেছেন। প্রায় ৮৫ জন সাংবাদিক এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই যে বিষয়গুলো, এগুলো লেখা যাবে না। সামাজিক মাধ্যমে এগুলো বলা যাবে না। আর বললে পরিণতি হবে কাজলের মতো, পরিণতি হবে আরো অনেকের মতো। খোকন ছেলেটি আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। সেই ছেলেটি আজ হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে। একজন দক্ষ প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ছিল সে। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে সে মারা গেল। তার পরিবার টেস্ট করাতে পারেনি। এটি পজিটিভ না নেগেটিভ, খোকন জানতে পারেনি। এই যদি পরিস্থিতি হয়, তাহলে সরকারের সমালোচনা কেন করবে না?’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিএনপি জাতীয়তাবাদের দল, আমরা জনগণের পাশে আছি। এই যে ত্রাণ দিচ্ছেন, তারা যুবদল, ছাত্রদল, বিএনপির নেতাকর্মী। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এই দরিদ্র, নিরন্ন, কর্মহীন মানুষকে ত্রাণ দিচ্ছেন। সাধ্যমতো সারা বাংলাদেশে কোথাও না কোথাও আমাদের লোকজন ত্রাণ দিচ্ছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে নির্দেশ দিয়েছেন, জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আর ২৪ ঘণ্টাই দেশনায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করছেন, তত্ত্বাবধান করছেন। সুতরাং এই জুলুম-নির্যাতনের মধ্যেও আমরা বসে নেই। জনগণের পক্ষে, সাধারণ মানুষের পক্ষে আমাদের সাধ্যে যা আছে, সেটা নিয়েই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াব।’
এদিকে, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সত্যকে লালন করুন। সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আগামীতে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয় অবশ্যম্ভাবী।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন, টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি মাহবুবুল আলম শুক্কুর, পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ ও দলীয় নেতাকর্মীরা। স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মোফাজ্জল শিশিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।