করোনার সংক্রমণ কমলেও সতর্কতা জরুরি, বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা
দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বর্তমানে গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনায় মৃত্যুহারও কমছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুই খুলেছে। এমন পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা৷
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে করোনা চলে গেছে—এমন ভাবনা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এ খবর জানিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনার সংক্রমণ আরও কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গতকাল পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ৮০৮টি ল্যাবে ৩১ হাজার ১৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩১ হাজার ১৬৪টি। এতে করোনা শনাক্তের হার পাঁচ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এর আগের দিন যা ছিল ৬ দশমিক ৬৪ ভাগ। এ পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মারা গেছেন ৫১ জন। এ পর্যন্ত দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালে ২৭ হাজার ১০৯ জন।
করোনার সংক্রমণের হার শতকরা পাঁচ ভাগের নিচে নামলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা জানান৷
দেশে এখন স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতসহ প্রায় সব কিছুই খোলা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও খুলছে টিকা পাওয়া সাপেক্ষে। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সব কিছু খোলা হলেও সে ব্যাপারে উদাসীনতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হলেও এখন বেশির ভাগ মানুষই আর ঘরের বাইরে মাস্ক পরছেন না। মাস্ক পরাতে বাধ্য করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন কোনো তৎপরতাও নেই। শিক্ষার্থীরা মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব মেনে ক্লাস করলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে অভিভাবকদের ভিড় সামলানো যাচ্ছে না। অভিভাবকদের অনেকে মাস্কও পরছেন না। বাজার, শপিংমল, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহণ—কোথাও স্বাস্থ্যবিধি তেমন একটা মানা হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালেও স্বাস্থ্যবিধি উধাও। করোনা রোগীদের ওয়ার্ডে দর্শনার্থী ও বহিরাগতদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি রোগীর সঙ্গে স্বজনেরা থাকছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে, করোনার ডেলটা ভ্যারিয়্যান্টের দাপটে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর করোনা চিকিৎসার যে সংকট ও অব্যবস্থপনা দেখা যায়, তারও উন্নতি হয়নি। এখনও দেশের ২৩ জেলার হাসপাতালে কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সুবিধা নেই। ১৬ জেলায় নেই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন প্ল্যান্ট।
নতুন ১২ হাজার চিকিৎসক-নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ হয়েছে। তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ বেশি হয়। বাংলাদেশে অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ঢেউয়ের আগে যদি আমরা এভাবে স্বাস্থ্যবিধির প্রতি উদাসীন হই, তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।’
ডা. লেনিন চৌধুরী মনে করেন, সবাই স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েছে। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মানানোর কোনো উদ্যোগ নেই, যা দুঃখজনক।
ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, ‘সরকার ৮০ ভাগ নাগরিককে করোনার টিকা দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু, এখনও সে রোডম্যাপ পরিষ্কার নয়। দ্রুত সবাইকে টিকা দিতে হবে।’
করোনার মতো মহামারি দুই থেকে ছয় বছর তার শক্তি বজায় রাখে, এরপর তার শক্তি কমে আসে বলে জানান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর। আর, এই করোনাভাইরাস বারবার তার রূপ পরিবর্তন করছে, ফলে এটা থেকে কবে বিশ্ব মুক্তি পাবে, তা নিশ্চিত করে বলার সময় আসেনি বলেও মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, বারবার রূপ পরির্তনের কারণেই একটার পর একটা ঢেউ আসছে।
ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘তবে, করোনা মহামারির মধ্যেও যেটা স্বস্তিদায়ক, তা হলো—এক বছরের মধ্যে এর টিকা আবিষ্কার হয়েছে। বাংলাদেশে আড়াই কোটি মানুষ প্রথম ডোজ পেয়েছে।’
ডা. এ এস এম আলমগীর মনে করেন, সংক্রমণ কমলেও এখনও শতকরা পাঁচ ভাগের নিচে নামেনি। পাঁচ ভাগের নিচে নামলে সহনীয় বলা যায়। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা তো আছেই। তাই স্বাস্থ্যবিধি সবাইকে মানতে হবে। ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভ্যাকসিন দিয়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার নিয়ম বলে জানান তিনি।