কলারোয়ায় বারবার হত্যার ট্র্যাজেডি, এলাকায় আতঙ্ক
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বারবার হত্যার ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী। পাঁচ খুন, চার খুন, তিন খুন ও জোড়া খুনের ঘটনায় এলাকার মানুষ স্তম্ভিত। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার একই পরিবারের তিনজনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ভাবিয়ে তুলেছে কলারোয়াবাসীকে।
জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার লাঙলঝাড়া গ্রামের একটি বাড়ি থেকে গৃহবধূ মাহফুজা খাতুনের (৩৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়িতেই ঘরের মধ্যে পড়ে ছিল মাহফুজার দুই শিশু সন্তান মাহফুজ (৯) ও মোহনার (৫) মরদেহ। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ মাঠে নেমেছে। প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, এক যুবক ওই গৃহবধূর শ্লীলতাহানির চেষ্টার জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ছাড়া অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে একই উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলশি গ্রামে একই পরিবারের চার জনকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতেরা হলো গৃহকর্তা শাহিনুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী সাবিনা খাতুন এবং দুই ছেলেমেয়ে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও তাসমিন সুলতানা (৬)। খুনিদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যায় ওই দম্পতির চার মাসের শিশুসন্তান মারিয়া সুলতানা। পুলিশ এ ঘটনায় নিহত শাহিনুলের ভাই রায়হানুলকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে রায়হানুল একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকারোক্তি দেয়। এ সংক্রান্ত মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। এ ঘটনার কিছুদিন পর ৭ ফেব্রুয়ারি কলারোয়া উপজেলার শ্রীপতিপুর গ্রামে গৃহবধূ ফাতেমা খাতুন ও তাঁর প্রেমিক করিম পাড়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ দুটি বাড়ির পাশে একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পুলিশ এ ঘটনায় নিহত ফাতেমা খাতুনের স্বামী আহসান ওরফে হাসান ও তাঁর ভাইকে গ্রেপ্তার করে।
এদিকে এ ঘটনার এক মাসের মাথায় গত ৮ মার্চ তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের জগদানন্দকাটি গ্রামে ছোট ভাই মনতাজকে কুপিয়ে হত্যার পর খুনি বড় ভাই শাহজাহান মল্লিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় কলারোয়ার জয়নগর ইউনিয়নের খোড়দো বাটরা গ্রামের একটি বাগান থেকে। এ ঘটনার রহস্য এখন পর্যন্ত উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই রাতে কলারোয়ার সোনালী ব্যাংকে ঢুকে দুই নৈশপ্রহরীকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করে। নিহতেরা হলেন আনসার সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আসাদুল ইসলাম। এই জোড়া খুন মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডির ওপর। এই মামলারও এখন পর্যন্ত শেষ নামেনি।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ২০০০ সালের ২ মার্চ কলারোয়া কলেজ এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী শামসুন্নাহার লিপি, যুগিখালী হাইস্কুলের শিক্ষিকা ফজিলাতুন্নেসা এবং কলেজছাত্র হাবিবুর রহমান ও মামুনুর রশীদসহ চারজন পদদলিত হয়ে নিহত হন। তখন অভিযোগ ওঠে, নিহতেরা সবাই পরিকল্পিত হত্যার শিকার। পরীক্ষা কেন্দ্রে ভিড় ও হুড়াহুড়ির সুযোগে কয়েক যুবক লিপি ও ফজিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টার সময় পদদলিত হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে এ মামলা চলার পর আসামিরা খালাস পেয়ে যায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে স্বাধীনতার আগে ১৯৬৫ সালে কলারোয়ার বোয়ালিয়া গ্রামে একই পরিবারের গৃহকর্তা মোসলেম উদ্দিন, তাঁর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েসহ পাঁচজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় পুলিশ নিহত মুসলেমের বাবা মোহাম্মদ আলী ও মাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁরা ছাড়া পেয়ে যান। এই পাঁচ খুনেরও বিচার পায়নি নিহতের স্বজনেরা।
কলারোয়ায় বারবার এ ধরনের সিরিজ মার্ডারের ঘটনায় এলাকাবাসী অনেকটাই আতঙ্কিত। সবাই নিজ নিজ পরিবার নিয়ে এখন শঙ্কায়।